বিদ্যুত, জ্বালানি বিভাগের সমন্বয়ের অভাবে গচ্চা যাচ্ছে ১৫০ কোটি টাকা by রশিদ মামুন

বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের ১৫০ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ গ্যাস সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে এ সমন্বয় হীনতার চিত্র ফুটে উঠেছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) জাইকার অর্থায়নে হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুত কেন্দ্রটির সিম্পল সাইকেল নির্মাণ শেষে উৎপাদন শুরু করবে। কিন্তু বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) বাখরাবাদ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত যে আলাদা গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে তার কাজ শেষ হবে সেপ্টেম্বরে। সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পাইপ লাইনের নির্মাণ কাজ ছয় মাস এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাইপ লাইন নির্মাতা কোম্পানি ফার্নেস এ কাজের জন্য ১৯ মিলিয়ন ডলার বা ১৪৫ কোটি টাকা বেশি দাবি করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগের মধ্যে আগে থেকে সমন্বয় করা হলে এখন এসে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হতো না।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের সময় এই একটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্রই সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসছে। সরকারী কোম্পানি ইজিসিবি বিদ্যুত কেন্দ্রটির মালিক। জাইকার অর্থায়নে রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের হরিপুরে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকারের সময় এ একটি মাত্র বড় বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। কিন্তু গ্যাস দেয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছে সরকার। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে গ্যাস পাইপ লাইনের নির্মাণের সময়সীমা ছয় মাস এগিয়ে আনার নির্দেশ দেন। এ জন্য জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু তাহেরকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
জিটিসিএল সূত্র জানায়, তুর্কি পাইপ লাইন নির্মাতা কোম্পানিকে কাজের সময়সীমা ছয় মাস এগিয়ে আনার প্রস্তাব দিলে তারা ১৯ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত দাবি করেছে। সম্প্রতি জিটিসিএল এ এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও দিয়েছে কোম্পানিটি। জিটিসিএল সূত্র বলছে, কাজের সময়সীমা এগিয়ে আনতে গেলে অনেক কিছুই বিমানে পরিবহন করতে হবে যে জন্য তাদের অতিরিক্ত ব্যয় হবে।
জিটিসিএল সূত্র জানায়, বাখরাবাদ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩০ ইঞ্চি পাইপ লাইনটি ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে ১২৪ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। বাদবাকি অর্থ সরকার যোগান দেবে।
জানতে চাইলে জিটিসিএলএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমান কোম্পানিটির প্রস্তাবের কথা স্বীকার করে বলেন তারা আমাদের একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, যদিও এই পাইপ লাইন থেকেই হরিপুরে গ্যাস দেয়া হবে কিন্তু আমরা এ বিদ্যুত কেন্দ্রকে টার্গেট করে পাইপ লাইন নির্মাণ করছি না। তিনি বলেন, আমরা বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সিদ্ধিরগঞ্জ-৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য পাইপ লাইনের নির্মাণ করছি। কিন্তু ওই বিদ্যুত কেন্দ্রটি এখনও নির্মাণ শেষ হয়নি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কন্ট্রাক্টরকে বলেছি ছয় মাস সময় এগিয়ে আনতে তারাও বলছে এগিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু এগিয়ে আনা সম্ভব বলা আর সম্ভব করা এক কথা নয়। পাইপ লাইনের নির্মাণ কাজ আগামী বছর সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগের কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতার এই অভিযোগ পুরান। এ কারণে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরও জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হয়। অন্যদিকে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই পিডিবি পেট্রোবাংলার সঙ্গে আলোচনা না করেই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করে। এতে করে গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন একই মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের মধ্যে এ ধরনের সমন্বয়হীনতা কোন অজুহাতই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ গচ্চা দেয়া সমীচীন নয়।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, জাইকা চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার জন্য জ্বালানি সরবরাহের তাগেদা দিচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, কোনভাবে গ্যাস দেয়া সম্ভব না হলে হরিপুর-১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে নতুন কেন্দ্রটিতে গ্যাস দেয়া হবে।
জানতে চাইলে ইজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, তাদের বিদ্যুত কেন্দ্রটি ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে উৎপাদনে আসবে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বলছে তারা গ্যাস পেলে প্রথম থেকেই পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদন করতে পারবে। বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য দৈনিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। বিদ্যুত কেন্দ্রর গ্যাস সরবরাহের জন্য পৃথক পাইপ লাইন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিটিসিএলকে পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ ছয় মাস এগিয়ে আনতে বলা হয়েছে তারা কাজ করছে। মার্চের মধ্যে পাইপ লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে মন্ত্রণালয় তাদের জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.