বোল্টের ইতিহাস হওয়ার দিন by উৎপল শুভ্র
প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁকে তাড়া করে আর তিনি তাড়া করেন ইতিহাসকে! উসাইন বোল্টের আজ ইতিহাস হওয়ার দিন।
মাস খানেক আগে ব্রিটিশ এক সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি কিংবদন্তি হতে চাই। কিংবদন্তিরা বারবার জেতে।
মাস খানেক আগে ব্রিটিশ এক সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি কিংবদন্তি হতে চাই। কিংবদন্তিরা বারবার জেতে।
আমি চাই, এমন কিছু করে যেতে, যাতে উসাইন বোল্ট নামটা উচ্চারিত হলেই সবার চোখ অবিশ্বাসে বড় বড় হয়ে যায়।’
বড় বড় এখনই হয়! কিংবদন্তিও তাঁকে বলে ফেলেছেন অনেকে। ১০০ মিটারের সোনা ধরে রাখার পর বোল্টের সংবাদ সম্মেলনে কথাটা ঘুরেফিরে এসেছে। বোল্ট নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন কিংবদন্তি হওয়ার শর্ত—২০০ মিটারটাও জিততে হবে। জিতলেই ইতিহাস। অলিম্পিক ইতিহাসে কেউ দুবার ‘স্প্রিন্ট ডাবল’ জেতেনি। ২০০ মিটারে দুটি সোনাও কেউ না।
শেষ দিকে হেলেদুলে দৌড়ে গত পরশু যেভাবে হিট জিতলেন, তাতে আজ ২০০ মিটারে বোল্টের লড়াইটা শুধু ট্র্যাকের পাশে ঘড়ির সঙ্গেই কি না, এই প্রশ্ন উঠছে। অনেকবারই বলেছেন, এটা তাঁর প্রিয় ইভেন্ট। ১০০ মিটারে জেতার পর আবার তা মনে করিয়ে দিয়েছেন, হিটের পর আবারও। প্রিয় ইভেন্টে কীর্তিও কম নেই।
১০০ মিটার নিয়ে মাতামাতিতে আড়াল হয়ে গেছে, নইলে চার বছর আগে বেইজিং অলিম্পিকে বোল্টের ২০০ মিটার-কীর্তিটাই বেশি বড় ছিল। ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিকে মাইকেল জনসনের ১৯.৩২ সেকেন্ডের বিশ্ব রেকর্ডটা তখন অ্যাথলেটিকস বিশ্বের বিস্ময়। বোল্ট ১২ বছরের পুরোনো সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন (১৯.৩০)। সেখানেই থামলেন না। পরের বছর বার্লিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অবিশ্বাস্যভাবে বিশ্ব রেকর্ড নামিয়ে আনলেন ১৯.১৯ সেকেন্ডে।
সেই বিশ্ব রেকর্ড টিকে আছে এখনো। সেটিও কি হাওয়ায় কাঁপছে আজ! লন্ডন অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ট্র্যাক খুব দ্রুত গতির। এখানে যেকোনো কিছু সম্ভব। এই ‘যেকোনো কিছু সম্ভব’ কথাটা যিনি বলছেন, ২০০ মিটারের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম টাইমিংটা তাঁরই। বোল্টের ট্রেনিংসঙ্গী, বন্ধু ও সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়োহান ব্লেক। গত বছর ব্রাসেলসে ১৯.২৬ সেকেন্ডে দৌড়েছেন ব্লেক। নিজের হিট জেতার পর বলেছেন, ‘ট্র্যাক খুব ফাস্ট, উসাইনও ফাস্ট, আমিও ভালো বোধ করছি। যেকোনো কিছু সম্ভব।’
অনুশীলনে ‘পশুর মতো’ পরিশ্রম করেন বলে বোল্ট তাঁর নাম দিয়েছেন ‘দ্য বিস্ট’। এ নিয়ে মনে হচ্ছে ইয়োহান ব্লেকের গর্বের শেষ নেই। কথায় কথায় এটি মনে করিয়ে দেন। ১০০ মিটার শুরুর আগে বিচিত্র ভঙ্গি করার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘আমার নাম বিস্ট। আমাকে তাই ওর সঙ্গে মানানসই কিছুই তো করতে হবে।’ ২০০ মিটারের হিটের পর মিক্সড জোনেও তাঁর আরেক নাম যে ‘দ্য বিস্ট’, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন আবারও।
জ্যামাইকান ট্রায়ালে বোল্টকে দুবার হারানোর পর ব্লেককে চিনেছে বিশ্ব। বোল্ট কিন্তু সেই ২০০৯ সালেই তাঁর মাথায় শোভা পাওয়া গতির রাজার মুকুটটার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বলেছিলেন ব্লেকের নাম। ২০০ মিটারের হিটের পর তো ব্লেক সম্পর্কে বললেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, ও-ই সেরা।’
মানে কী? মানে তো দাঁড়ায় একটাই—উসাইন বোল্ট নিজেকে আলাদা রেখে বাকিদের বিচার করছেন। ব্লেককে যখন তিনি সেরা বলেন, তার অর্থ বাকিদের মধ্যে সেরা। এই আত্মবিশ্বাস সব সময় ছিল না। ২০০২ সালে জ্যামাইকাতে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ১৫ বছরের বোল্ট এমনই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন যে, এক পায়ের জুতা আরেক পায়ে পরে ফেলেছিলেন! সেই দৌড় জেতেন এবং এই নার্ভাসনেসকে চিরবিদায় দিতে দৌড়ে তিনটি নিয়ম গেঁথে নেন মনে—
নিয়ম ১: এ নিয়ে একদম ভাবারই দরকার নেই।
নিয়ম ২: ভাণ করো যে, এমন কিছু হচ্ছে না।
নিয়ম ৩: এক নম্বর নিয়মে যাও ও রিপিট করো।
এর পর থেকেই দৌড় শুরুর আগে কৌতুক করেন, দর্শকদের সঙ্গে মজা। আজও আবার এই দৃশ্য দেখবে বিশ্ব। তারপর গুলির শব্দ হবে। ২০ সেকেন্ডের মধ্যে হয়তো ইতিহাসে ঢুকে যাবেন উসাইন সেন্ট লিও বোল্ট! কিংবদন্তি বোল্ট!
পাদটীকা: এই লেখা যখন শেষ, ২০০ মিটারের সেমিফাইনাল শুরু হতে তখনো সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি বাকি। যা লেখা হলো, তা সেমিফাইনালে দেগু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো কোনো দুর্ঘটনা (ফলস স্টার্ট করে ডিসকোয়ালিফাইড হয়েছিলেন বোল্ট) ঘটবে না ধরে নিয়ে।
বড় বড় এখনই হয়! কিংবদন্তিও তাঁকে বলে ফেলেছেন অনেকে। ১০০ মিটারের সোনা ধরে রাখার পর বোল্টের সংবাদ সম্মেলনে কথাটা ঘুরেফিরে এসেছে। বোল্ট নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন কিংবদন্তি হওয়ার শর্ত—২০০ মিটারটাও জিততে হবে। জিতলেই ইতিহাস। অলিম্পিক ইতিহাসে কেউ দুবার ‘স্প্রিন্ট ডাবল’ জেতেনি। ২০০ মিটারে দুটি সোনাও কেউ না।
শেষ দিকে হেলেদুলে দৌড়ে গত পরশু যেভাবে হিট জিতলেন, তাতে আজ ২০০ মিটারে বোল্টের লড়াইটা শুধু ট্র্যাকের পাশে ঘড়ির সঙ্গেই কি না, এই প্রশ্ন উঠছে। অনেকবারই বলেছেন, এটা তাঁর প্রিয় ইভেন্ট। ১০০ মিটারে জেতার পর আবার তা মনে করিয়ে দিয়েছেন, হিটের পর আবারও। প্রিয় ইভেন্টে কীর্তিও কম নেই।
১০০ মিটার নিয়ে মাতামাতিতে আড়াল হয়ে গেছে, নইলে চার বছর আগে বেইজিং অলিম্পিকে বোল্টের ২০০ মিটার-কীর্তিটাই বেশি বড় ছিল। ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিকে মাইকেল জনসনের ১৯.৩২ সেকেন্ডের বিশ্ব রেকর্ডটা তখন অ্যাথলেটিকস বিশ্বের বিস্ময়। বোল্ট ১২ বছরের পুরোনো সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন (১৯.৩০)। সেখানেই থামলেন না। পরের বছর বার্লিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অবিশ্বাস্যভাবে বিশ্ব রেকর্ড নামিয়ে আনলেন ১৯.১৯ সেকেন্ডে।
সেই বিশ্ব রেকর্ড টিকে আছে এখনো। সেটিও কি হাওয়ায় কাঁপছে আজ! লন্ডন অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ট্র্যাক খুব দ্রুত গতির। এখানে যেকোনো কিছু সম্ভব। এই ‘যেকোনো কিছু সম্ভব’ কথাটা যিনি বলছেন, ২০০ মিটারের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম টাইমিংটা তাঁরই। বোল্টের ট্রেনিংসঙ্গী, বন্ধু ও সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়োহান ব্লেক। গত বছর ব্রাসেলসে ১৯.২৬ সেকেন্ডে দৌড়েছেন ব্লেক। নিজের হিট জেতার পর বলেছেন, ‘ট্র্যাক খুব ফাস্ট, উসাইনও ফাস্ট, আমিও ভালো বোধ করছি। যেকোনো কিছু সম্ভব।’
অনুশীলনে ‘পশুর মতো’ পরিশ্রম করেন বলে বোল্ট তাঁর নাম দিয়েছেন ‘দ্য বিস্ট’। এ নিয়ে মনে হচ্ছে ইয়োহান ব্লেকের গর্বের শেষ নেই। কথায় কথায় এটি মনে করিয়ে দেন। ১০০ মিটার শুরুর আগে বিচিত্র ভঙ্গি করার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘আমার নাম বিস্ট। আমাকে তাই ওর সঙ্গে মানানসই কিছুই তো করতে হবে।’ ২০০ মিটারের হিটের পর মিক্সড জোনেও তাঁর আরেক নাম যে ‘দ্য বিস্ট’, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন আবারও।
জ্যামাইকান ট্রায়ালে বোল্টকে দুবার হারানোর পর ব্লেককে চিনেছে বিশ্ব। বোল্ট কিন্তু সেই ২০০৯ সালেই তাঁর মাথায় শোভা পাওয়া গতির রাজার মুকুটটার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বলেছিলেন ব্লেকের নাম। ২০০ মিটারের হিটের পর তো ব্লেক সম্পর্কে বললেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, ও-ই সেরা।’
মানে কী? মানে তো দাঁড়ায় একটাই—উসাইন বোল্ট নিজেকে আলাদা রেখে বাকিদের বিচার করছেন। ব্লেককে যখন তিনি সেরা বলেন, তার অর্থ বাকিদের মধ্যে সেরা। এই আত্মবিশ্বাস সব সময় ছিল না। ২০০২ সালে জ্যামাইকাতে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ১৫ বছরের বোল্ট এমনই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন যে, এক পায়ের জুতা আরেক পায়ে পরে ফেলেছিলেন! সেই দৌড় জেতেন এবং এই নার্ভাসনেসকে চিরবিদায় দিতে দৌড়ে তিনটি নিয়ম গেঁথে নেন মনে—
নিয়ম ১: এ নিয়ে একদম ভাবারই দরকার নেই।
নিয়ম ২: ভাণ করো যে, এমন কিছু হচ্ছে না।
নিয়ম ৩: এক নম্বর নিয়মে যাও ও রিপিট করো।
এর পর থেকেই দৌড় শুরুর আগে কৌতুক করেন, দর্শকদের সঙ্গে মজা। আজও আবার এই দৃশ্য দেখবে বিশ্ব। তারপর গুলির শব্দ হবে। ২০ সেকেন্ডের মধ্যে হয়তো ইতিহাসে ঢুকে যাবেন উসাইন সেন্ট লিও বোল্ট! কিংবদন্তি বোল্ট!
পাদটীকা: এই লেখা যখন শেষ, ২০০ মিটারের সেমিফাইনাল শুরু হতে তখনো সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি বাকি। যা লেখা হলো, তা সেমিফাইনালে দেগু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো কোনো দুর্ঘটনা (ফলস স্টার্ট করে ডিসকোয়ালিফাইড হয়েছিলেন বোল্ট) ঘটবে না ধরে নিয়ে।
No comments