বদলে যাও বদলে দাও মিছিল- রুখে দাঁড়ান খাবারে রাসায়নিক সন্ত্রাস by মাসুদ খান
‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ ব্লগে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও নির্বাচিত সাতটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ রাসায়নিক ও ভেজালমুক্ত খাদ্য-নিশ্চয়তা গড়ে তোলার ওপর একটি বিশ্লেষণাত্মক অভিমতসহ আরও দুজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো।
যে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত খাদ্যপণ্য বিশ্বের ১৭৩টি দেশে রপ্তানি হয় বলে বিজ্ঞাপনে বলা হয়, তাদের পণ্যগুলোই আপাদমস্তক ভেজালে ভরপুর। শুধু দেশে নয়, আমরা ভেজাল খাদ্য বিদেশেও রপ্তানি করতে পারছি! সংবাদপত্রে পড়লাম, গবেষণাগারে প্রমাণিত জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের হট টমেটো সসে মরণঘাতী অনেক উপাদান পাওয়া গেছে। আদালত কর্তৃক পণ্যটির উৎপাদন এবং বাজারজাত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। দেখার কেউ নেই, ধরার কেউ নেই, তাই এখনো বহাল তবিয়তে পণ্যটি চালু আছে। আদালত ইতিপূর্বে কনডেন্স মিল্ক, মেলামিন মেশানো গুঁড়ো দুধ বিক্রি নিয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। সমস্যা হলো, আমরা তার বাস্তব রূপ দেখতে পাই না।
বাজারে চলমান একমাত্র হোমমেড রসগোল্লা নামের পণ্যটি আগাগোড়াই ভেজাল প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাবার আদালতে মামলাও রুজু করা হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) অঞ্চল-১-এর প্রধান পাবলিক অ্যানালিস্ট রাসায়নিক পরীক্ষার পর ডিসিসির স্বাস্থ্য বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে দেখা যায়, এই রসগোল্লায় আর্দ্রতা আছে মাত্র ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ল্যাকটিক অ্যাসিডের অম্লতা শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ। দুগ্ধ-চর্বির পরিমাণ ১০ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও এতে পাওয়া গেছে ২৪ দশমিক শূন্য শতাংশ। কঠিন বস্তুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৯৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তা ছাড়া পরীক্ষাগারে প্রমাণিত হয়েছে, এটি রসগোল্লা নয়, বরং শুকনো পাউডারজাতীয় অদ্ভুত খাদ্য।
গত ১৫ জুলাই ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জে. আবদুল্লাহ আল-হারুনের তথ্যমতে, ঠিক দুই দিন আগে রাজধানীর বিভিন্ন চোখ-ধাঁধানো সুপারশপ থেকে সংগৃহীত ১৫টি কোম্পানির পণ্য, যার মধ্যে আটটি ভেজাল, বাকিগুলো সহনীয় পর্যায়ে আছে। ভেজালের তালিকায় আছে নামীদামি ব্র্যান্ডের সব কটি সয়াবিন ও খাঁটি সরষের তেলসহ বেশ কিছু ভোগ্যপণ্য। এর আগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাজারের প্রায় ৯৬ শতাংশ গুঁড়ো মসলায় ভেজাল। সব কটি বেসরকারি কোম্পানির তরল দুধ মানগত পরীক্ষায় ফেল মেরেছে। এর আগে লোহাকাটা তেল দিয়ে কোম্পানিগুলো কৃত্রিম গরুর দুধ বানিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছিল। দেশের শিশুরা সেটাকে দুধ বলে পান করেছে। কিছুদিন আগে দেশের নামকরা একটি মসলা কোম্পানি আদালত থেকে জরিমানা দিয়ে এসেছে, এদের খাঁটি সরষের তেলেও ভেজাল প্রমাণিত।
খাবারে ভেজাল আজ কোনো গোপনীয় ব্যাপার নয়। সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যেও বৈধতা পেয়েছে। মহাসমারোহে প্রায় সব ধরনের খদ্যপণ্যে মরণব্যাধির নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকে জানিই না ফরমালিন, কার্বাইড কী? কী এর অপকারিতা? কী ধরনের রোগ হতে পারে রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রভাবে? সবচেয়ে আলোচিত ‘ফরমালিন’। এটা একধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা ফল, মাছ ও মাংসে মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। মূলত জীবাণুনাশক ও প্রাণীর মরদেহ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয় এটি। ব্যাকটেরিয়ানাশক হওয়ায় কসমেটিক তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা হয়। বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছেই বরফের সঙ্গে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বর্ণনায়, ফরমালিন ব্যবহারে মানুষের দেহে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা—যেমন, পাকস্থলীর ক্যানসার, দৈহিক বিকলাঙ্গতা এমনকি প্রাণহানিও ঘটাতে পারে। মাত্রা বেশি থাকলে শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। বৃক্ক, যকৃৎ, ফুলকা, পাকস্থলী ও লিভার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু কীভাবে চিনব মাছে ফরমালিন আছে? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মাছের দেহ শক্ত হয়ে যায়, যেন আমরা কেনার সময় ভাবি, মাছ তাজা আছে। আঁশ উজ্জ্বল না হয়ে ধূসর রঙের হয়ে যায়, ফুলকাও ধূসর রঙের হয়। চোখের স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে ঘোলাটে হয়ে যায়। এসব দেখে মাছ কিনলে ফরমালিনমুক্ত মাছ পাওয়া যেতে পারে। ফরমালিন ব্যবহার করা মাছে সাধারণত মাছি বসে না। মুড়িতে ইউরিয়ার সঙ্গে হাইড্রোজ মেশানো হচ্ছে। এ ধরনের মুড়ির শরীরে অসংখ্য ছিদ্র থাকে, দেখতে খুব সাদা রঙের হয়। স্বাদ পানসে হয়ে যায়।
সংবাদপত্রে দেখা যায়, বাগান থেকে আম পাড়ার পর কমপক্ষে পাঁচবার বিভিন্ন রাসায়নিক স্প্রে করা হয়। রাতে গুদাম বন্ধ করার আগে ফরমালিন স্প্রে করা হচ্ছে। ফলে ভোরে আমে ফরমালিনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। তা ছাড়া অতিরিক্ত তাপে ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশানো আম রাখলে তা ক্যালসিয়াম সায়ানাইডে পরিণত হতে পারে। কার্বাইডযুক্ত ফল চেনা অতটা কঠিন কিছু নয়, প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের রঙের মতো নয়, আগাগোড়া হলুদ হয়ে যায়। এক ধরনের ঝাঁজালো গন্ধ থাকবে। তা ছাড়া ফলের এক অংশে টক অন্য অংশে মিষ্টি হয়।
গ্রীষ্মকালীন প্রায় সব ফলেই এখন ফরমালিন ও কার্বাইড অথবা অন্য কোনো রাসায়নিক স্প্রে। এই সন্ত্রাস থেকে রেহাই পেতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উন্নত পাকেজিং প্ল্যান্ট হাতে নেওয়া যায়, যাতে কিছু দিন ফল সংরক্ষণ করা যায়। আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে গ্রীষ্মের ফলগুলো জীবাণুমুক্ত করে প্যাকেট করা যেতে পারে। সর্বোপরি দরকার ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার বিজ্ঞানসম্মত উপায় আবিষ্কার করা।
খাবারে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে, তা বিদেশ থেকে আমদানি করা। প্রয়োজনীয় কাজে আমদানি করতে আমাদের দ্বিমত নেই। চাইছি যত্রতত্র ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ। এসব রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি, সংরক্ষণ, মজুদকরণ, বিতরণ, ব্যবহার ও উন্মুক্ত বিক্রির ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণের জন্য নাগরিকদের আন্দোলনে নামতেই হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে তাদের ইশতেহারে ঘোষণা দেয়, তার জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে।
মাসুদ খান: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
masud.khan121@gmail.com
ই-মেইল: bjbd@prothom-alo.info
facebook.com/bjbdmichhil
ব্লগ থেকে...নির্বাচিত মন্তব্য
ঢাকার অধিকাংশ বাড়িওয়ালার আচরণ খুবই পীড়াদায়ক। যে দেশে ভোক্তা অধিকার আইনের প্রয়োগ নেই, সেখানে তো বাড়িওয়ালারা এমন হবেনই। আমি এমন অনেক বাড়িওয়ালাকে চিনি, যাঁদের একসময় কিছুই ছিল না তাঁরা এখন দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন। একটি বাড়ি থেকে ১০টি বাড়ি বানিয়েছেন। যদি কালোটাকার সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ করা হয়, তাহলে আমার দাবি, বাড়িওয়ালাদের টাকা কালো না সাদা, তার মানদণ্ড বেঁধে দিতে হবে। ঢাকার দেড় কোটি মানুষের ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাড়িতে থাকে। বাড়ির মালিকদের ট্যাক্স রিটার্ন চরম অস্বচ্ছ। প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার আয়কর থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। এনবিআর কর্তৃপক্ষ বাড়িওয়ালাদের ব্যবসাকে কেন স্বচ্ছতায় আনছে না, সেটা খুবই রহস্যজনক।
মো. আক্তার হোসেন
dakghor@yahoo.com
নির্বাচিত প্রস্তাব
খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএসটিআই নামের প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি। এই প্রতিষ্ঠানটি কখনো জবাবদিহি করছে বলে মনে হয় না। ঘন ঘন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। এ ছাড়া বাজারে নজরদারি বাড়ানোর জন্য পৃথক একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষ অগ্রাধিকারে গ্রামের কৃষকদের রাসায়নিক সারের নির্ভরতা কমিয়ে অর্গানিক সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে হরমোন ফাঁদসহ অন্যান্য বায়োলজিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করে পতঙ্গ দমনে উৎসাহিত ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরই প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে।
ফারিহা তাবাসসুম
নিজের মত দিন... ব্লগে
www.bodlejaobodledao.com
চলতি বিষয়—
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ চাই
সাইবার অপরাধমুক্ত দেশ চাই
রাসায়নিক ও ভেজালমুক্ত খাবার চাই
নৌ-দুর্ঘটনা বন্ধ করতেই হবে
জনমত জরিপের ফলাফল
বদলে যাও বদলে দাও মিছিলের ওয়েবসাইটে নতুন তিনটি জনমত শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আপনিও অংশ নিন জরিপে।
ভেজালমুক্ত খাদ্যের নিশ্চয়তায় প্রতিটি জেলায় খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
হ্যাঁ ৮৮% না ৪%
মন্তব্য নেই ৮%
৮ আগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, বাড়িভাড়া নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন অপরিহার্য?
হ্যাঁ ৯১% না ৫%
মন্তব্য নেই ৪%
৮ আগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে এখনই সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি?
হ্যাঁ ৮৩% না ১০%
মন্তব্য নেই ৭%
৮ আগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত
www.bodlejaobodledao.com
বাজারে চলমান একমাত্র হোমমেড রসগোল্লা নামের পণ্যটি আগাগোড়াই ভেজাল প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাবার আদালতে মামলাও রুজু করা হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) অঞ্চল-১-এর প্রধান পাবলিক অ্যানালিস্ট রাসায়নিক পরীক্ষার পর ডিসিসির স্বাস্থ্য বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে দেখা যায়, এই রসগোল্লায় আর্দ্রতা আছে মাত্র ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ল্যাকটিক অ্যাসিডের অম্লতা শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ। দুগ্ধ-চর্বির পরিমাণ ১০ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও এতে পাওয়া গেছে ২৪ দশমিক শূন্য শতাংশ। কঠিন বস্তুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৯৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তা ছাড়া পরীক্ষাগারে প্রমাণিত হয়েছে, এটি রসগোল্লা নয়, বরং শুকনো পাউডারজাতীয় অদ্ভুত খাদ্য।
গত ১৫ জুলাই ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জে. আবদুল্লাহ আল-হারুনের তথ্যমতে, ঠিক দুই দিন আগে রাজধানীর বিভিন্ন চোখ-ধাঁধানো সুপারশপ থেকে সংগৃহীত ১৫টি কোম্পানির পণ্য, যার মধ্যে আটটি ভেজাল, বাকিগুলো সহনীয় পর্যায়ে আছে। ভেজালের তালিকায় আছে নামীদামি ব্র্যান্ডের সব কটি সয়াবিন ও খাঁটি সরষের তেলসহ বেশ কিছু ভোগ্যপণ্য। এর আগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাজারের প্রায় ৯৬ শতাংশ গুঁড়ো মসলায় ভেজাল। সব কটি বেসরকারি কোম্পানির তরল দুধ মানগত পরীক্ষায় ফেল মেরেছে। এর আগে লোহাকাটা তেল দিয়ে কোম্পানিগুলো কৃত্রিম গরুর দুধ বানিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছিল। দেশের শিশুরা সেটাকে দুধ বলে পান করেছে। কিছুদিন আগে দেশের নামকরা একটি মসলা কোম্পানি আদালত থেকে জরিমানা দিয়ে এসেছে, এদের খাঁটি সরষের তেলেও ভেজাল প্রমাণিত।
খাবারে ভেজাল আজ কোনো গোপনীয় ব্যাপার নয়। সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যেও বৈধতা পেয়েছে। মহাসমারোহে প্রায় সব ধরনের খদ্যপণ্যে মরণব্যাধির নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকে জানিই না ফরমালিন, কার্বাইড কী? কী এর অপকারিতা? কী ধরনের রোগ হতে পারে রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রভাবে? সবচেয়ে আলোচিত ‘ফরমালিন’। এটা একধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা ফল, মাছ ও মাংসে মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। মূলত জীবাণুনাশক ও প্রাণীর মরদেহ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয় এটি। ব্যাকটেরিয়ানাশক হওয়ায় কসমেটিক তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা হয়। বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছেই বরফের সঙ্গে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বর্ণনায়, ফরমালিন ব্যবহারে মানুষের দেহে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা—যেমন, পাকস্থলীর ক্যানসার, দৈহিক বিকলাঙ্গতা এমনকি প্রাণহানিও ঘটাতে পারে। মাত্রা বেশি থাকলে শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। বৃক্ক, যকৃৎ, ফুলকা, পাকস্থলী ও লিভার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু কীভাবে চিনব মাছে ফরমালিন আছে? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মাছের দেহ শক্ত হয়ে যায়, যেন আমরা কেনার সময় ভাবি, মাছ তাজা আছে। আঁশ উজ্জ্বল না হয়ে ধূসর রঙের হয়ে যায়, ফুলকাও ধূসর রঙের হয়। চোখের স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে ঘোলাটে হয়ে যায়। এসব দেখে মাছ কিনলে ফরমালিনমুক্ত মাছ পাওয়া যেতে পারে। ফরমালিন ব্যবহার করা মাছে সাধারণত মাছি বসে না। মুড়িতে ইউরিয়ার সঙ্গে হাইড্রোজ মেশানো হচ্ছে। এ ধরনের মুড়ির শরীরে অসংখ্য ছিদ্র থাকে, দেখতে খুব সাদা রঙের হয়। স্বাদ পানসে হয়ে যায়।
সংবাদপত্রে দেখা যায়, বাগান থেকে আম পাড়ার পর কমপক্ষে পাঁচবার বিভিন্ন রাসায়নিক স্প্রে করা হয়। রাতে গুদাম বন্ধ করার আগে ফরমালিন স্প্রে করা হচ্ছে। ফলে ভোরে আমে ফরমালিনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। তা ছাড়া অতিরিক্ত তাপে ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশানো আম রাখলে তা ক্যালসিয়াম সায়ানাইডে পরিণত হতে পারে। কার্বাইডযুক্ত ফল চেনা অতটা কঠিন কিছু নয়, প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের রঙের মতো নয়, আগাগোড়া হলুদ হয়ে যায়। এক ধরনের ঝাঁজালো গন্ধ থাকবে। তা ছাড়া ফলের এক অংশে টক অন্য অংশে মিষ্টি হয়।
গ্রীষ্মকালীন প্রায় সব ফলেই এখন ফরমালিন ও কার্বাইড অথবা অন্য কোনো রাসায়নিক স্প্রে। এই সন্ত্রাস থেকে রেহাই পেতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উন্নত পাকেজিং প্ল্যান্ট হাতে নেওয়া যায়, যাতে কিছু দিন ফল সংরক্ষণ করা যায়। আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে গ্রীষ্মের ফলগুলো জীবাণুমুক্ত করে প্যাকেট করা যেতে পারে। সর্বোপরি দরকার ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার বিজ্ঞানসম্মত উপায় আবিষ্কার করা।
খাবারে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে, তা বিদেশ থেকে আমদানি করা। প্রয়োজনীয় কাজে আমদানি করতে আমাদের দ্বিমত নেই। চাইছি যত্রতত্র ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ। এসব রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি, সংরক্ষণ, মজুদকরণ, বিতরণ, ব্যবহার ও উন্মুক্ত বিক্রির ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণের জন্য নাগরিকদের আন্দোলনে নামতেই হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে তাদের ইশতেহারে ঘোষণা দেয়, তার জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে।
মাসুদ খান: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
masud.khan121@gmail.com
ই-মেইল: bjbd@prothom-alo.info
facebook.com/bjbdmichhil
ব্লগ থেকে...নির্বাচিত মন্তব্য
ঢাকার অধিকাংশ বাড়িওয়ালার আচরণ খুবই পীড়াদায়ক। যে দেশে ভোক্তা অধিকার আইনের প্রয়োগ নেই, সেখানে তো বাড়িওয়ালারা এমন হবেনই। আমি এমন অনেক বাড়িওয়ালাকে চিনি, যাঁদের একসময় কিছুই ছিল না তাঁরা এখন দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন। একটি বাড়ি থেকে ১০টি বাড়ি বানিয়েছেন। যদি কালোটাকার সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ করা হয়, তাহলে আমার দাবি, বাড়িওয়ালাদের টাকা কালো না সাদা, তার মানদণ্ড বেঁধে দিতে হবে। ঢাকার দেড় কোটি মানুষের ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাড়িতে থাকে। বাড়ির মালিকদের ট্যাক্স রিটার্ন চরম অস্বচ্ছ। প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার আয়কর থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। এনবিআর কর্তৃপক্ষ বাড়িওয়ালাদের ব্যবসাকে কেন স্বচ্ছতায় আনছে না, সেটা খুবই রহস্যজনক।
মো. আক্তার হোসেন
dakghor@yahoo.com
নির্বাচিত প্রস্তাব
খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএসটিআই নামের প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি। এই প্রতিষ্ঠানটি কখনো জবাবদিহি করছে বলে মনে হয় না। ঘন ঘন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। এ ছাড়া বাজারে নজরদারি বাড়ানোর জন্য পৃথক একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষ অগ্রাধিকারে গ্রামের কৃষকদের রাসায়নিক সারের নির্ভরতা কমিয়ে অর্গানিক সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে হরমোন ফাঁদসহ অন্যান্য বায়োলজিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করে পতঙ্গ দমনে উৎসাহিত ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরই প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে।
ফারিহা তাবাসসুম
নিজের মত দিন... ব্লগে
www.bodlejaobodledao.com
চলতি বিষয়—
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ চাই
সাইবার অপরাধমুক্ত দেশ চাই
রাসায়নিক ও ভেজালমুক্ত খাবার চাই
নৌ-দুর্ঘটনা বন্ধ করতেই হবে
জনমত জরিপের ফলাফল
বদলে যাও বদলে দাও মিছিলের ওয়েবসাইটে নতুন তিনটি জনমত শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আপনিও অংশ নিন জরিপে।
ভেজালমুক্ত খাদ্যের নিশ্চয়তায় প্রতিটি জেলায় খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
হ্যাঁ ৮৮% না ৪%
মন্তব্য নেই ৮%
৮ আগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, বাড়িভাড়া নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন অপরিহার্য?
হ্যাঁ ৯১% না ৫%
মন্তব্য নেই ৪%
৮ আগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে এখনই সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি?
হ্যাঁ ৮৩% না ১০%
মন্তব্য নেই ৭%
৮ আগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত
www.bodlejaobodledao.com
No comments