ঈদে যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন- সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজি

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় এবং দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। বুধবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে চাঁদাবাজির কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যা কোনো সভ্য দেশে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।


প্রথমত, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে, যাঁদের দায়িত্ব চাঁদাবাজি প্রতিহত করা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা এলাকা, ঢাকা-বগুড়া, বনপাড়া-হাটিকুমরুল ও নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন অংশ, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের বিভিন্ন স্থানে হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের সদস্যরা বাস ও ট্রাক থামিয়ে নিরাপত্তা তল্লাশি, ফিটনেস-সংক্রান্ত কাগজপত্র পরীক্ষা ইত্যাদির অভিযোগে চাঁদা আদায় করছেন। এসব অভিযোগ করেছেন পরিবহনের মালিক ও যানবাহনের চালকেরা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ রকম দায়সারা কথা গ্রহণযোগ্য নয়, হাইওয়ে ও থানা পুলিশের কিছু সদস্য যানবাহনের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন—এই অভিযোগ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলো; এর ভিত্তিতেই পুলিশ বিভাগের এখন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এটি একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়, কারণ পুলিশ নিজেই যদি চাঁদাবাজি করে, তাহলে অন্যদের চাঁদাবাজি বন্ধ করার নৈতিক অধিকার ও মনোবল হারায়। গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে হাইওয়ে পুলিশের ১০-১২ জন সদস্যকে বদলি করা হয়েছে—এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু পুলিশের সদস্যরা চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত হলে বদলি করার মতো লঘু শাস্তি যথেষ্ট নয়। এমন ক্ষেত্রে আরও কঠোর শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
শুধু হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশ নয়, চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন মোটর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর সদস্যরা, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কর্মী বাহিনীও। এসব চাঁদাবাজির রূপ সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ। বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তো দাবি করেছেন, তাঁদের চাঁদা তোলা বৈধ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নাকি অনুমতি দিয়েছে। তাঁর কথা যদি সত্য হয়, তাহলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা একটা ব্যাখ্যা দাবি করতে পারি: কী যুক্তিতে, কোন বিধানে এমন অনুমতি দেওয়া হয়েছে? যশোরের পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘আমিও দেখি পথে পথে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা যখন বলেন, এটা তাঁদের সংগঠনের সিদ্ধান্ত, তখন আমাদের কিছু করার থাকে না।’ এ রকম স্বীকারোক্তি গুরুতর বাস্তবতাই তুলে ধরে। পরিবহন শ্রমিক বা মালিকদের সংগঠিত এসব চাঁদাবাজির ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এর ফলে দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, বাড়ে মানুষের চলাফেরার খরচ। দরিদ্র, নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ঈদের আনন্দ অনেকটাই বিষাদে পরিণত হয় পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে। অবিলম্বে এসব বন্ধ করার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.