জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস আজ

আজ ৯ আগস্ট জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তৃতীয়বারের মতো দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। পেট্রোবাংলা বিস্তারিত কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।


রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি অপরিহার্য। বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। গ্যাসের ওপর নির্ভর করে দেশে বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, সার কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আমি আশা রাখি দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের নতুন নতুন উৎসের সন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির যে কার্যক্রম চলছে তা আরও বেগবান হবে।
তিনি জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে জ্বালানির অপচয় রোধ করে এর যথাযথ এবং সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সমগ্র দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, দেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ৯ আগস্ট একটি ঐতিহাসিক দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বিদেশী কোম্পানির পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র ক্রয় করে এগুলোকে রাষ্ট্রীয় খাতে আনেন। জাতির পিতার দূরদর্শী পদক্ষেপ স্মরণীয় করে রাখতে ৯ আগস্টকে ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আমরা নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করেছি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। জনগণ ইতোমধ্যেই আমাদের এ সকল উদ্যোগের সুফল পেতে শুরু করেছেন। তিনি অমূল্য এ জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সকলকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
সপরিবারে নিহত হওয়ার মাত্র ৬ দিন আগে ১৯৭৫ সালের ৯ অগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জ্বালানি সঙ্কট সমাধানের জন্য পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে তিতাস এবং হবিগঞ্জের দুটি গ্যাস ক্ষেত্রের সব শেয়ার কিনে নেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিঃ (বিজিএফসিএল) প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে গ্যাসের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশই (বিজিএফসিএল) ঐ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে মেটানো হয়।
বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি দিবস পালন উপলক্ষে বিস্তারিক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। পেট্রোবাংলার সম্মেলন কক্ষে আজ দুপুরে বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেল অয়েলের কাছ থেকে তিতাস এবং হবিগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্র কেনার সময় এতে মোট ছয়টি কূপ ছিল। এর মধ্যে তিতাসে ৪টি এবং হবিগঞ্জে ছিল ২টি কূপ। ৭৫’এ ছয়টি কূপ থেকে দৈনিক ৬১ দশমিক ৮৯১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হতো।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিঃ (বিজিএফসিএল)-এর গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা ছয়টি। গ্যাস ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে তিতাস, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ, নরসিংদী, মেঘনা এবং কামতা। গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর ৩০টি কূপ থেকে দৈনিক ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়।
প্রসঙ্গত ২০১০ সালের ২ এপ্রিল বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জাতির জনকের দূরদর্শিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দিনটিকে জ্বালানি দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.