বন্ড অর্ধাঙ্গিনীর এক বছর

বন্ড, জেমস বন্ড। তাঁকে আটকে রাখে সাধ্য কার? পৃথিবীর তাবৎ দুঁদে ভিলেন হাফসুল খেয়ে গেছে। শুধু কি ভিলেন? বন্ডকে ভালোবাসার শেকলে আটকাতে পারেনি পৃথিবীর আগুনজ্বলা সুন্দরীরাও। কিন্তু বাস্তবে? পেরেছেন একজন। র্যাচেল ভাইস।


জেমস বন্ড তারকা ড্যানিয়েল ক্রেগের সঙ্গে সুখের সংসারের ভেলা ভাসানোর এক বছর পেরিয়ে এলেন ৪২ বছর বয়সী ব্রিটিশ এই অভিনেত্রী। এক বছর কেমন ছিল? বন্ড ছবির মতোই, নাকি রোমাঞ্চকর?
এ সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে ভাইসের ছবি থ্রি সিক্সটি। পিটার মরগানের চিত্রনাট্যে পরিচালনা করছেন ফার্নান্দো মেইরেলেস। ভাইস সহশিল্পী হিসেবে এই ছবিতে পেয়েছেন অ্যান্থনি হপকিন্স, জুড ল, বেন ফস্টারদের। ছবিটি অবশ্য প্রথম মুক্তি পেয়েছিল গত সেপ্টেম্বরের টরন্টো উৎসবে। যুক্তরাষ্ট্রের হলগুলোতে মুক্তি পেল এ সপ্তাহেই।
মেইরেলেসের সঙ্গে আগেও কাজ করেছেন। ২০০৬ সালের ছবি দ্য কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার-এ। ওই ছবি ভাইসকে পরম আরাধ্যের অস্কার এনে দিয়েছিল। জিতেছিলেন গোল্ডেন গ্লোব আর স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডও।
ফলে খুব উৎসাহ নিয়েই থ্রি সিক্সটিতে কাজ করেছেন ভাইস। একুশ শতকে ব্যক্তিস্বাধীনতা, সম্পর্কের সেতু ভেঙে পড়া, একাধিক নারী কিংবা পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া—এসব নিয়েই থ্রি সিক্সটি। এই ছবিতে ভাইস এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে কি না তাঁর স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করছেন। জড়িয়ে পড়ছেন পরপুরুষের সঙ্গে। কিন্তু বাস্তবের ভাইস কেমন? বন্ডের সঙ্গে কেমন চলছে তাঁর সংসার?
নতুন করে ছবির প্রচার-প্রচারণা উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন ভাইস। এর মধ্যে ডেইলি মিররকে দিয়েছেন এক সাক্ষাৎকার। সেখানেই বলেছেন ঘরকন্না কেমন লাগছে।
ভাইস প্রথমেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন, পর্দার জেমস বন্ড আর বাস্তবের ড্যানিয়েল ক্রেগের সঙ্গে বিস্তর ব্যবধান। বাস্তবের ক্রেগ বন্ডের মতো লেডিকিলার বা রমণীমোহন নন মোটেও। বরং তিনি নাকি ভাইসের আঁচলে ভালোমতোই বাঁধা পড়েছেন। ড্রিম হাউস ছবির কাজ করতে গিয়ে দুজনের মধ্যে শুরু হয়েছিল প্রেম। সত্যি সত্যিই স্বপ্নের এক বাড়ি বানিয়েছেন তাঁরা।
ক্রেগই তাঁর প্রথম স্বামী। তবে বিয়ে না করলেও পরিচালক ড্যারেন অ্যারনফস্কির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল। ২০০৫ সালে আংটি বদল করলেও শেষ পর্যন্ত বিয়ের পিঁড়িতে বসা হয়নি। তবে এই জুটির ছয় বছর বয়সী এক ছেলে আছে—হেনরি চান্স। মায়ের সঙ্গেই থাকে হেনরি। আর কোনো সন্তান নিতে চান না ভাইস। ক্রেগেরও এতে আপত্তি নেই। সব মিলে বলতেই হবে, সুখেই আছেন বন্ড-অর্ধাঙ্গিনী।
বিয়েটা তাঁর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—এমন মন্তব্য করে মিররকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে কথা বলেছেনও, ‘এটা আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। নিজের চোখের সামনে ছেলেকে বেড়ে উঠতে দেখা, ওর পড়তে শেখা, পৃথিবীটাকে আবিষ্কার করতে শেখার এই অভিজ্ঞতাটা অবিশ্বাস্য। মা হওয়াটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ। এবং বিবাহিত হওয়াটা আমি খুবই উপভোগ করছি। আমি ভীষণ, ভীষণ আনন্দিত।’
এনিমি অ্যাট দ্য গেটস, অ্যাবাউট আ বয়, কনস্ট্যানটাইন-এর মতো দুর্দান্ত সব ছবিতে অভিনয় করা ভাইস এবার তাঁর মারদাঙ্গা চেহারা নিয়ে হাজির হচ্ছেন আরেক ছবিতে। অ্যাকশন হিরো ক্রেগের সঙ্গে সংসার যেহেতু করছেন, মারপিট তিনিও যে কম জানেন না, সেটাই দেখিয়ে দেবেন দ্য বুয়ার্ন লেগাসিতে।
এমনিতে ভাইস স্বাধীনচেতা স্বভাবের। ‘কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এমন নয়, কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে আশপাশে যা পাচ্ছি, সবই ভেঙেচুরে ফেলছি। তবে যারা কর্তৃত্ব দেখায়, আমি সব সময়ই তাদের প্রশ্নের মুখে রাখি।’
নিজের এই স্বাধীনচেতা স্বভাবটি ছেলের মধ্যেও খুঁজে পান। ছয় বছর বয়সেই ছেলের অনেক জেদের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে মা হওয়ার অভিজ্ঞতাটা তাঁর জন্য দারুণ কিছু, ‘অন্য আর সব কাজের মতো সন্তান মানুষ করতে গিয়েও আপনার এমন এমন দিন আসে, যেদিন ইচ্ছে হয় মাথার চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলি।’
ভাইসের আরেকটা গুণ—আত্মসমালোচনা। নিন্দুকদের খামোখা কষ্ট দিতে চান না। নিজের হাজারটা দোষের কথা নিজেই স্বীকার করেন। ‘আমার অনেকগুলো কাঁটা আছে। আমি আসলে কণ্টকিত। আমার খুঁতের হিসাব নেই’—এ কথা যিনি বলতে পারেন, নিখুঁত থেকে নিখুঁততর হয়ে ওঠা তাঁর পক্ষেই সম্ভব।
 রাজীব হাসান, হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.