তিন উপজেলার ১৫ গ্রাম- প্রকৃতির দয়ায় বেঁচে থাকা
দেশের দুর্গম পার্বত্যাঞ্চল ও সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ দরিদ্র, অসহায়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দূরে থাক, মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্যই প্রকৃতির দয়ার ওপর ভরসা করতে হয় তাদের। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় বসবাসকারী এ রকম আদিবাসীদের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন আমাদের প্রতিনিধিরা
সুবিধাবঞ্চিত বাঘাইছড়ির আদিবাসীরা: রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নে বনাঞ্চলে সাতটি আদিবাসী গ্রামের চার শতাধিক পরিবারের বাস। উপজেলা সদর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে গহিন জঙ্গলে বেড়ে ওঠা এসব মানুষ প্রকৃতি ও বন্য প্রাণীর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। বন্য পশুর আক্রমণ, ম্যালেরিয়া, আমাশয় ও ডায়রিয়া তাদের নিত্যসঙ্গী। আধুনিক চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই এখানে। ১৪ বছর আগে পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর জায়গা-জমি হারানো আদিবাসী লোকজন গ্রামগুলোয় বসতি শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে বনবিভাগের সংরক্ষিত গহিন বনাঞ্চল। গ্রামগুলোর মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে গঙ্গারাম নদী। দুই তীরে রয়েছে শত বছরের বিশাল আকারের গাছের সারি। একেকটি টিলায় একটি করে পরিবারের বাস। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। থালছড়া গ্রামের ১০ থেকে ১৫ জন শিশু খালি গায়ে জঙ্গলের ফাঁকে খেলছে। তাদের একজন আট বছরের বার্তে চাকমা বলে, ‘আমাদের স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমাদের গ্রাম থেকে স্কুলের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।’
তবু বেঁচে আছে দীঘিনালার সাত গ্রামের আদিবাসীরা: খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম ভিতর তারাবুনীয়া। মেঠোপথ ধরে হেঁটে যেতে হয় সেখানে। প্রায় অর্ধমৃত একটি ছড়া গ্রামবাসীর পানীয় জলের চাহিদা মেটায়। গ্রামে কোনো বিদ্যালয় নেই। ছেলেমেয়েরা চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ালেখা করে। ভিতর তারাবুনীয়ার মতো উপজেলার শতাধিক গ্রামের আদিবাসীরা যেন প্রকৃতির দয়ায় বেঁচে আছে।
ভিতর তারাবুনীয়ার আদিবাসী নারী সাধনা চাকমা, দয়ামুগী চাকমা, মায়াদেবী চাকমা জানান, গ্রামে কোনো নলকূপ নেই। ২০১০ সালে ছড়ার পানি পান করে ডায়রিয়ায় গ্রামের সুভাষ চাকমা, সুজয় চাকমা ও শুক্র বিজয় চাকমা নামের তিনজন মারা গেছেন। গ্রামে প্রতিবছরই ডায়রিয়া দেখা দেয়। মেরুং ইউপির দেওয়ানপাড়া ও গেন্দাপাড়ার আদিবাসীদের অবস্থা আরও করুণ। গ্রাম দুটির মানুষ এখনো চিকিৎসার জন্য কবিরাজ ও ওঝার ওপর ভরসা করে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শতরুপা চাকমা বলেন, ‘কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছি, মানুষগুলো যেন প্রকৃতির ভরসায় বেঁচে আছে।’
নালিতাবাড়ীর ৪৫ কোচ পরিবারের খবর কেউ রাখে না: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী অবহেলিত গ্রাম খলচন্দা। এ গ্রামে পাহাড়ের কোলে কঠিন সংগ্রাম করে বেঁচে আছে আদিবাসী ৪৫টি কোচ পরিবার। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গ্রামটি অবস্থিত। হিন্দুধর্মাবলম্বী ৪৫টি কোচ পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ এখানে বাস করে। এ গ্রামে এনজিও পরিচালিত তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত একটি বিদ্যালয় ছাড়া নেই কোনো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। অসুখ-বিসুখে পাড়ার মানুষ সাড়ে তিন কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি-পথ পাড়ি দিয়ে মিশনারি হাসপাতালে যায়।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সবুর বলেন, ‘এই সম্প্রদায়টি দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে। সমস্যা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন পলাশ বড়ুয়া, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি); সাধন বিকাশ চাকমা, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) ও আবদুল মান্নান, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)]
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে বনবিভাগের সংরক্ষিত গহিন বনাঞ্চল। গ্রামগুলোর মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে গঙ্গারাম নদী। দুই তীরে রয়েছে শত বছরের বিশাল আকারের গাছের সারি। একেকটি টিলায় একটি করে পরিবারের বাস। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। থালছড়া গ্রামের ১০ থেকে ১৫ জন শিশু খালি গায়ে জঙ্গলের ফাঁকে খেলছে। তাদের একজন আট বছরের বার্তে চাকমা বলে, ‘আমাদের স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমাদের গ্রাম থেকে স্কুলের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।’
তবু বেঁচে আছে দীঘিনালার সাত গ্রামের আদিবাসীরা: খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম ভিতর তারাবুনীয়া। মেঠোপথ ধরে হেঁটে যেতে হয় সেখানে। প্রায় অর্ধমৃত একটি ছড়া গ্রামবাসীর পানীয় জলের চাহিদা মেটায়। গ্রামে কোনো বিদ্যালয় নেই। ছেলেমেয়েরা চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ালেখা করে। ভিতর তারাবুনীয়ার মতো উপজেলার শতাধিক গ্রামের আদিবাসীরা যেন প্রকৃতির দয়ায় বেঁচে আছে।
ভিতর তারাবুনীয়ার আদিবাসী নারী সাধনা চাকমা, দয়ামুগী চাকমা, মায়াদেবী চাকমা জানান, গ্রামে কোনো নলকূপ নেই। ২০১০ সালে ছড়ার পানি পান করে ডায়রিয়ায় গ্রামের সুভাষ চাকমা, সুজয় চাকমা ও শুক্র বিজয় চাকমা নামের তিনজন মারা গেছেন। গ্রামে প্রতিবছরই ডায়রিয়া দেখা দেয়। মেরুং ইউপির দেওয়ানপাড়া ও গেন্দাপাড়ার আদিবাসীদের অবস্থা আরও করুণ। গ্রাম দুটির মানুষ এখনো চিকিৎসার জন্য কবিরাজ ও ওঝার ওপর ভরসা করে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শতরুপা চাকমা বলেন, ‘কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছি, মানুষগুলো যেন প্রকৃতির ভরসায় বেঁচে আছে।’
নালিতাবাড়ীর ৪৫ কোচ পরিবারের খবর কেউ রাখে না: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী অবহেলিত গ্রাম খলচন্দা। এ গ্রামে পাহাড়ের কোলে কঠিন সংগ্রাম করে বেঁচে আছে আদিবাসী ৪৫টি কোচ পরিবার। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গ্রামটি অবস্থিত। হিন্দুধর্মাবলম্বী ৪৫টি কোচ পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ এখানে বাস করে। এ গ্রামে এনজিও পরিচালিত তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত একটি বিদ্যালয় ছাড়া নেই কোনো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। অসুখ-বিসুখে পাড়ার মানুষ সাড়ে তিন কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি-পথ পাড়ি দিয়ে মিশনারি হাসপাতালে যায়।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সবুর বলেন, ‘এই সম্প্রদায়টি দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে। সমস্যা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন পলাশ বড়ুয়া, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি); সাধন বিকাশ চাকমা, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) ও আবদুল মান্নান, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)]
No comments