মিয়ানমারে সহিংসতার তদন্ত চায় জাতিসংঘ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় ওই রাজ্য থেকে প্রায় ৮০ হাজার লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।


রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা বন্ধে সেখানে পাঠানো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উল্টো মুসলমানদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই। গত শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন নিরপেক্ষ সূত্র থেকে রাখাইন মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়ার খবর পাচ্ছি। এ সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’
নাভি পিল্লাই অভিযোগ করেন, এই জাতিগত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক পদক্ষেপ মুসলিম রোহিঙ্গাদের দমনের লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বৌদ্ধধর্মাবলম্বী একজন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে রাখাইন রাজ্যে মুসলমানদের সঙ্গে নতুন করে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭৮ ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি।
সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের দূতকে আগামী সপ্তাহে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে। নাভি পিল্লাই মিয়ানমার সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও পরিপূর্ণ স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি নীরব ভূমিকা পালন করায় তাঁর সহযোগী ও সমর্থকেরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে জনবিচ্ছিন্ন ও গৃহবন্দী জীবন কাটিয়ে মানবাধিকার আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন সু চি। অথচ মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বর্তমান ঘটনাবলি সম্পর্কে তাঁর অবস্থান হতাশাজনক; বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর সম্প্রতি যে নির্যাতন চলছে, সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন, ভীতি-প্রদর্শন ও বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডের নিয়মিত খবর পাওয়া যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর ওই দমননীতির ব্যাপারে দেশটির সাবেক জেনারেল ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের কোনো রকম সমালোচনা করতে রাজি হননি সু চি; বরং বিষয়টি একাধিকবার কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ায় তাঁর কঠোর সমালোচনা হয়েছে।
থেইন সেইন বলেন, আট লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে হবে এবং সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। বিবিসি, দ্য টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.