ঈদে ঘরে ফেরা ॥ বেহাল সড়ক- ০ বাস্তবায়ন হয়নি মন্ত্রীর নির্দেশ- ০ আজ রেল ভবনে জরুরী বৈঠক by রাজন ভট্টাচার্য
ঈদ আসন্ন হলেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক-মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম-সিলেট-খুলনা-রাজশাহীসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মিলে কয়েক শ’ কিলোমিটার রাস্তা এখনও যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়নি।
অথচ ১৫ রোজার মধ্যে মহাসড়কগুলো সংস্কারের নির্দেশ ছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয়নি মন্ত্রীর নির্দেশও। পাশাপাশি ঈদে মহাসড়কে যানজট পরিস্থিতি কি হবে এ নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। সব মিলিয়ে রাস্তার বেহাল অবস্থা ও যানজট নিয়ে মহাচিন্তিত ঘরমুখো মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ সকাল ১০টায় রেল ভবনে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এদিকে যোগাযোগমন্ত্রীর দাবি ঈদে পরিবহন চলাচলের উপযোগী দেশের সকল মহাসড়ক। পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে ছোটখাটো সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের দাবি জানিয়ে বলেছেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার সড়ক-মহাসড়কগুলো তুলনামূলক ভাল। যানবাহন চলাচলের উপযোগী বলেও মনে করেন তারা।
৭০ কিলোমিটার রাস্তা ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারইয়ারহাট ও বড়দারোগারহাটসহ সব মিলে ৭০ কিলোমিটার রাস্তা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। ঈদ আসন্ন হলেও রাস্তাটি পুরোপুরি সংস্কার হয়নি। সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠে রাস্তাটির বেহাল অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর কিছুটা সংস্কার হলেও চলাচলের উপযোগী হয়নি এখনও। মীরসরাইয়ের বড়দারোগারহাট, ছোটকমলদহ, সরকারহাট, হাদি ফকির হাট, নয়দুয়ার, কলঘর, বড়তাকিয়া, বাইপাস, মিরসরাই সদরসহ ৪০ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। জানা গছে, ২০১১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংস্কারে ব্যয় হয় ৪৫ কোটি টাকা।
প্রকৌশলীরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সর্বোচ্চ ২০ টন লোড ধারণের উপযোগী। কিন্তু সিঙ্গেল এক্সেলের ট্রাক/লরি দিয়ে নিয়মিত ৩৫ টনের বেশি মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। এজন্য দ্রুত সময়ের রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া দিনে ২৫/৩০ হাজার যানবাহনের চলাচল করছে এই মহাসড়ক দিয়ে, যা মাত্রাতিরিক্ত। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কের পাশে ড্রেন না থাকা ও অতিরিক্ত নগরায়নের কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা থেকে বৃষ্টির পানি সরতে পারে না। ফলে রাস্তা নষ্ট হয়। সওজের ঢাকা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাহাবুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সড়কের ধারণ ক্ষমতার বেশি মালামাল পরিবহনে দ্রুত সময়ে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশে ২০/২৫ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সড়ক নির্মাণের বিকল্প নেই। অন্যথায় সড়করক্ষা করা কঠিন হবে।
৬৮ কিলোমিটার সড়ক বেহাল
সুনামগঞ্জ-সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সরুব্রিজ, ভাঙ্গন আর জলাবদ্ধতার কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, আর ভারি যানবাহন চলাচলে সিলেট-সুনামগঞ্জ অংশের কিছু স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ৬৮ কি.মি. রাস্তার দু’পাশের বেশিরভাগ অংশে দোকানপাট বসায় মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জ-সিলেট অংশে। সড়কের লামাকাজী, জালালপুর, ধারণ, গোবিন্দগঞ্জ, জাওয়াবাজার, মনবেগ, পাগলাবাজার, শান্তিগঞ্জ, আহছানমাড়া, দিরাইরাস্তা নীলপুর বাজারে প্রায়ই বিভিন্ন কারণে যানজট লেগেই থাকে। এইটুকু রাস্তায় টোল পরিশোধ করতে হয় ২ বার। ২০/২২টি ব্রিজের মধ্যে ১৬টি ব্রিজই সরু, যার ফলে প্রতিনিয়তই এইসব ব্রিজে যানজটের কারণে ভোগান্তি লেগেই আছে। প্রায়ই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অনেক ব্রিজের মধ্যে রয়েছে ছোট-বড় কিছু গর্ত। এসব গর্তে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। এই ৬৮ কি.মি. রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। তাছাড়া এই রাস্থায় যেসব বাস চলাচল করে তার বেশিরভাগ (৯৫%) চলার অনুপযোগী। বর্ষা আসলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নামকাওয়াস্তে সংস্কার কাজ করলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই আবার ছোট-বড় খানাখন্দে ভরে যায় পুরো রাস্তা।
মন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত
সম্প্রতি চাঁদপুরে গিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সপ্তাহের মধ্যে চাঁদপুর-বরগুনা সড়কটি সংস্কারের নির্দেশ দেন। পরিদর্শনে গিয়ে রাস্তাটির অবস্থা বেহাল দেখতে পান মন্ত্রী। এ জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কার কাজ শেষ না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশ কিংবা হুঁশিয়ারিতে কোন কাজ হয়নি। টনক নড়েনি স্থানীয় সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের। রাস্তাটি যেমন ছিল ঠিক তেমনি রয়ে গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ৮০ কিলোমিটার এই সড়কের বেশিরভাগ অংশ এখন চলাচলে অনুপযোগী। রাস্তায় বড় বড় গর্ত বৃষ্টির পানিতে পুকুরে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ স্থানে ওঠে গেছে পিচ ঢালাই। ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন। গর্তের কারণে এবারের ঈদে এই সড়কটিকে ব্যাপক যানজট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবহন চালক থেকে শুরু করে যাত্রীরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের
সর্বশেষ অবস্থা
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে রয়েছে ২২টি জেলা। মহাসড়ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক ও ফিডার রোড পর্যন্ত কোথাও শতভাগ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ভোরঘাটা কালকিনি সড়ক ও ভোরঘাটা-পিরেরবাড়ি সড়কটি ১০ বছরের বেশি সময় সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে দুই সড়কের বেশিরভাগ অংশই এখন ব্যবহারের অনুপোযোগী।
এছাড়া মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়কের ১৭ কিলোমিটার অংশে ভাঙনের শেষ নেই। পরিবহনচালকসহ যাত্রীদের ভাষায় দুর্ভোগের অন্য নাম এই সড়কটি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন সড়কটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। মাদারীপুর-বরিশাল সড়কের ৪৬ কিলোমিটার অংশে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে দীর্ঘ দিন। দেশের উত্তর-দক্ষিণসহ পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো পরিবহন চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। বর্তমান সরকারের আমলে বিগত সাড়ে তিন বছরেও গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া মাদারীপুর-শিবচর সড়কের মাদারীপুর অংশে প্রায় ২৪ কিলোমিটার রাস্তা পরিবহন চলাচলের অযোগ্য। অথচ শুধু মাদারীপুর এলাকায় রয়েছে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী থেকে শুরু করে কয়েক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে আছেনÑ সদ্য পদত্যাগীমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, হুইপ নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী।
ভালুকার ভয় কাটেনি
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে চলাচলের হৃদপি- হিসেবে পরিচিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এর মধ্যে ভালুকা অংশটি অনেকের কাছেই পরিচিত। কারণ গত দুই বছর আগে ঈদের সময় এই মহাসড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ভালুকা অংশটি ছিল সবচেয়ে বেহাল। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন কয়েকবার মহাসড়কের এই অংশটি পরিদর্শনে যান। বাস্তবতা হলো এবারের ঈদেও ভালুকা পয়েন্টে বেহাল দশা বিরাজ করছে। ভালুকা পৌরসভার বড়টিলা থেকে থানামোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কযান চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তার কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। দেখে মনে হবে মহাসড়ক নয়, যেন ধানক্ষেত। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি কিছু অংশে বেহাল অবস্থার কারণে এবারও দুর্ভোগ থেকে ঘরে ফেরা মানুষের মুক্তি মিলবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। তাছাড়া টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটিতে প্রতিবছরের ঈদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগলেও যানজটের কারণে এই অংশে আটকে থাকতে হয় তিন ঘণ্টার বেশি।
পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মহাসড়কের এই অংশের দু’পাশের রাস্তায় অবৈধ হাটবাজার বন্ধ করতে হবে। হকার মুক্ত রাখতে হবে ফুটপাথ। তাছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তা ও টাঙ্গাইল সড়কের দু’পাশে শত-শত গাড়ি পার্কিং ও বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে। গাজীপুর চৌরাস্তা অংশ থেকে হিউম্যান হলার চলতে দেয়া যাবে না। সিটি সার্ভিসগুলোকে মহাসড়কে চলাচল ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি টাউন সার্ভিসের জন্য চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
৬০ কিলোমিটার সড়ক বেহাল
ভোলা-রবিশাল সড়কের অন্তত ৬০ কিলোমিটার অংশে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সংস্কারের অভাবে রবিশালের বাকেরগঞ্জ, চান্দখালি-বরগুনাসহ কয়েকটি পয়েন্টে এই অবস্থা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করা হবে।
আজ রেল ভবনে বৈঠক
ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রেল ভবনে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে মূলত সড়ক-মহাসড়কের সার্বিক অবস্থা, মহাসড়কে যানজন নিরসনে করণীয়, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা আছে। বৈঠকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিআরটিএ, বিআরটিসি, পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ জনকণ্ঠকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সড়ক মহাসড়কের অবস্থা অনেক ভাল। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো খুব বেশি খারাপ নেই। প্রায় সব সড়ক এখন যানবাহন চলাচলে উপযোগী। যেসব পয়েন্টে ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে সেখানে সংস্কারের কাজ চলছে। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কের বেহাল অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রাস্তাটির সংস্কারের কাজে গতি আনতে হবে। ঈদের আগে সংস্কার না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-বৃহত্তর সিলেটসহ কয়েকটি জেলার যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
এদিকে যোগাযোগমন্ত্রীর দাবি ঈদে পরিবহন চলাচলের উপযোগী দেশের সকল মহাসড়ক। পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে ছোটখাটো সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের দাবি জানিয়ে বলেছেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার সড়ক-মহাসড়কগুলো তুলনামূলক ভাল। যানবাহন চলাচলের উপযোগী বলেও মনে করেন তারা।
৭০ কিলোমিটার রাস্তা ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারইয়ারহাট ও বড়দারোগারহাটসহ সব মিলে ৭০ কিলোমিটার রাস্তা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। ঈদ আসন্ন হলেও রাস্তাটি পুরোপুরি সংস্কার হয়নি। সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠে রাস্তাটির বেহাল অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর কিছুটা সংস্কার হলেও চলাচলের উপযোগী হয়নি এখনও। মীরসরাইয়ের বড়দারোগারহাট, ছোটকমলদহ, সরকারহাট, হাদি ফকির হাট, নয়দুয়ার, কলঘর, বড়তাকিয়া, বাইপাস, মিরসরাই সদরসহ ৪০ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। জানা গছে, ২০১১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংস্কারে ব্যয় হয় ৪৫ কোটি টাকা।
প্রকৌশলীরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সর্বোচ্চ ২০ টন লোড ধারণের উপযোগী। কিন্তু সিঙ্গেল এক্সেলের ট্রাক/লরি দিয়ে নিয়মিত ৩৫ টনের বেশি মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। এজন্য দ্রুত সময়ের রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া দিনে ২৫/৩০ হাজার যানবাহনের চলাচল করছে এই মহাসড়ক দিয়ে, যা মাত্রাতিরিক্ত। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কের পাশে ড্রেন না থাকা ও অতিরিক্ত নগরায়নের কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা থেকে বৃষ্টির পানি সরতে পারে না। ফলে রাস্তা নষ্ট হয়। সওজের ঢাকা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাহাবুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সড়কের ধারণ ক্ষমতার বেশি মালামাল পরিবহনে দ্রুত সময়ে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশে ২০/২৫ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সড়ক নির্মাণের বিকল্প নেই। অন্যথায় সড়করক্ষা করা কঠিন হবে।
৬৮ কিলোমিটার সড়ক বেহাল
সুনামগঞ্জ-সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সরুব্রিজ, ভাঙ্গন আর জলাবদ্ধতার কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, আর ভারি যানবাহন চলাচলে সিলেট-সুনামগঞ্জ অংশের কিছু স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ৬৮ কি.মি. রাস্তার দু’পাশের বেশিরভাগ অংশে দোকানপাট বসায় মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জ-সিলেট অংশে। সড়কের লামাকাজী, জালালপুর, ধারণ, গোবিন্দগঞ্জ, জাওয়াবাজার, মনবেগ, পাগলাবাজার, শান্তিগঞ্জ, আহছানমাড়া, দিরাইরাস্তা নীলপুর বাজারে প্রায়ই বিভিন্ন কারণে যানজট লেগেই থাকে। এইটুকু রাস্তায় টোল পরিশোধ করতে হয় ২ বার। ২০/২২টি ব্রিজের মধ্যে ১৬টি ব্রিজই সরু, যার ফলে প্রতিনিয়তই এইসব ব্রিজে যানজটের কারণে ভোগান্তি লেগেই আছে। প্রায়ই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অনেক ব্রিজের মধ্যে রয়েছে ছোট-বড় কিছু গর্ত। এসব গর্তে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। এই ৬৮ কি.মি. রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। তাছাড়া এই রাস্থায় যেসব বাস চলাচল করে তার বেশিরভাগ (৯৫%) চলার অনুপযোগী। বর্ষা আসলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নামকাওয়াস্তে সংস্কার কাজ করলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই আবার ছোট-বড় খানাখন্দে ভরে যায় পুরো রাস্তা।
মন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত
সম্প্রতি চাঁদপুরে গিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সপ্তাহের মধ্যে চাঁদপুর-বরগুনা সড়কটি সংস্কারের নির্দেশ দেন। পরিদর্শনে গিয়ে রাস্তাটির অবস্থা বেহাল দেখতে পান মন্ত্রী। এ জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কার কাজ শেষ না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশ কিংবা হুঁশিয়ারিতে কোন কাজ হয়নি। টনক নড়েনি স্থানীয় সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের। রাস্তাটি যেমন ছিল ঠিক তেমনি রয়ে গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ৮০ কিলোমিটার এই সড়কের বেশিরভাগ অংশ এখন চলাচলে অনুপযোগী। রাস্তায় বড় বড় গর্ত বৃষ্টির পানিতে পুকুরে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ স্থানে ওঠে গেছে পিচ ঢালাই। ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন। গর্তের কারণে এবারের ঈদে এই সড়কটিকে ব্যাপক যানজট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবহন চালক থেকে শুরু করে যাত্রীরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের
সর্বশেষ অবস্থা
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে রয়েছে ২২টি জেলা। মহাসড়ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক ও ফিডার রোড পর্যন্ত কোথাও শতভাগ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ভোরঘাটা কালকিনি সড়ক ও ভোরঘাটা-পিরেরবাড়ি সড়কটি ১০ বছরের বেশি সময় সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে দুই সড়কের বেশিরভাগ অংশই এখন ব্যবহারের অনুপোযোগী।
এছাড়া মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়কের ১৭ কিলোমিটার অংশে ভাঙনের শেষ নেই। পরিবহনচালকসহ যাত্রীদের ভাষায় দুর্ভোগের অন্য নাম এই সড়কটি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন সড়কটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। মাদারীপুর-বরিশাল সড়কের ৪৬ কিলোমিটার অংশে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে দীর্ঘ দিন। দেশের উত্তর-দক্ষিণসহ পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো পরিবহন চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। বর্তমান সরকারের আমলে বিগত সাড়ে তিন বছরেও গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া মাদারীপুর-শিবচর সড়কের মাদারীপুর অংশে প্রায় ২৪ কিলোমিটার রাস্তা পরিবহন চলাচলের অযোগ্য। অথচ শুধু মাদারীপুর এলাকায় রয়েছে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী থেকে শুরু করে কয়েক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে আছেনÑ সদ্য পদত্যাগীমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, হুইপ নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী।
ভালুকার ভয় কাটেনি
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে চলাচলের হৃদপি- হিসেবে পরিচিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এর মধ্যে ভালুকা অংশটি অনেকের কাছেই পরিচিত। কারণ গত দুই বছর আগে ঈদের সময় এই মহাসড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ভালুকা অংশটি ছিল সবচেয়ে বেহাল। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন কয়েকবার মহাসড়কের এই অংশটি পরিদর্শনে যান। বাস্তবতা হলো এবারের ঈদেও ভালুকা পয়েন্টে বেহাল দশা বিরাজ করছে। ভালুকা পৌরসভার বড়টিলা থেকে থানামোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কযান চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তার কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। দেখে মনে হবে মহাসড়ক নয়, যেন ধানক্ষেত। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি কিছু অংশে বেহাল অবস্থার কারণে এবারও দুর্ভোগ থেকে ঘরে ফেরা মানুষের মুক্তি মিলবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। তাছাড়া টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটিতে প্রতিবছরের ঈদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগলেও যানজটের কারণে এই অংশে আটকে থাকতে হয় তিন ঘণ্টার বেশি।
পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মহাসড়কের এই অংশের দু’পাশের রাস্তায় অবৈধ হাটবাজার বন্ধ করতে হবে। হকার মুক্ত রাখতে হবে ফুটপাথ। তাছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তা ও টাঙ্গাইল সড়কের দু’পাশে শত-শত গাড়ি পার্কিং ও বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে। গাজীপুর চৌরাস্তা অংশ থেকে হিউম্যান হলার চলতে দেয়া যাবে না। সিটি সার্ভিসগুলোকে মহাসড়কে চলাচল ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি টাউন সার্ভিসের জন্য চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
৬০ কিলোমিটার সড়ক বেহাল
ভোলা-রবিশাল সড়কের অন্তত ৬০ কিলোমিটার অংশে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সংস্কারের অভাবে রবিশালের বাকেরগঞ্জ, চান্দখালি-বরগুনাসহ কয়েকটি পয়েন্টে এই অবস্থা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করা হবে।
আজ রেল ভবনে বৈঠক
ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রেল ভবনে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে মূলত সড়ক-মহাসড়কের সার্বিক অবস্থা, মহাসড়কে যানজন নিরসনে করণীয়, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা আছে। বৈঠকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিআরটিএ, বিআরটিসি, পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ জনকণ্ঠকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সড়ক মহাসড়কের অবস্থা অনেক ভাল। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো খুব বেশি খারাপ নেই। প্রায় সব সড়ক এখন যানবাহন চলাচলে উপযোগী। যেসব পয়েন্টে ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে সেখানে সংস্কারের কাজ চলছে। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কের বেহাল অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রাস্তাটির সংস্কারের কাজে গতি আনতে হবে। ঈদের আগে সংস্কার না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-বৃহত্তর সিলেটসহ কয়েকটি জেলার যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
No comments