বর্ষায় খরা, আমন-পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক
টানা খরার কবলে পড়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর এবং রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় আগাম রোপণ করা আমনখেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কৃষকেরা পানির অভাবে সোনালি আঁশ পাটও পচাতে পারছেন না। পীরগাছার অনন্তরাম গ্রামের কৃষক বাচ্চা মিয়া বলেন, ‘মহাবিপদে আছি।
একদিকে চার একর জমির পাট পচাতে পারছি না, অন্যদিকে পানির অভাবে আমনের চারা রোপণ করতে পারছি না।’ কান্দি ইউনিয়নের মনিরামপুর গ্রামের কৃষক জবেদ আলী বলেন, ‘শ্রাবণ মাস প্রায় শেষ। তার পরও বৃষ্টির দেখা মিলছে না। বাধ্য হয়ে ৬০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করেছি।’ একই গ্রামের কৃষক কলিম উদ্দিন বলেন, সেচ দিয়ে আমন রোপণ করলেও পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
উলিপুরের ধামশ্রেণী ইউনিয়নের কাশিয়াগাড়ী গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতি ঘণ্টা ১০০ টাকা দরে পানি কিনে জমিতে সেচ দিতে গিয়ে তিনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উলিপুরে প্রায় ২৪ হাজার এবং পীরগাছায় প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় বিস্তৃত এলাকার জমিতে এখনো আমন চাষ করা হয়নি। পানির অভাবে পাটও জাগ দিতে পারছেন না কৃষকেরা। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ এবং পুকুর-ডোবায় পানি দিয়ে পাট পচাতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে কৃষকের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পাট পানির অভাবে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে এবং পানির অভাবে শুকিয়ে রোপা আমনের চারা লাল হয়ে গেছে।
গতকাল বুধবার উলিপুরের ধরণীবাড়ী ধামশ্রেণী, গুনাইগাছ, দুর্গাপুর ইউনিয়ন ও পৌরসভার রামদাসধনিরাম, মাঝিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খরায় ফেটে যাওয়া আমনখেত রক্ষায় কৃষকেরা শ্যালোমেশিন ও সনাতন পদ্ধতিতে (ছেওতি দিয়ে) সেচ দিচ্ছেন। এ সময় ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আছর আলী (৫০), রিপন (৩৫) ও জামাল (৪৫) জানান, শ্রাবণ মাসে আকাশে মেঘ জমলেও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি হয় হয় করেও হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ডিজেলচালিত শ্যালো বসিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছি।
এদিকে পীরগাছার অন্নদানগর, ইটাকুমারী, কান্দি, কৈকুড়ী, পারুল, পীরগাছা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা কোথাও পানি নেই। সেচ দিয়ে রোপণ করা আমনখেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, এখনো আমনের চারা রোপণের সময় আছে। যাঁরা এখনো পানির অভাবে জমিতে চারা লাগাতে পারেননি, তাঁদের সেচ দিয়ে চারা লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফতাব হোসেন জানান, সরকারিভাবে কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর এবং সেচ পাম্প দিয়ে আমনের চারা রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
No comments