অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে- ব্যর্থ হলো অস্ত্র-বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা

প্রচলিত অস্ত্রের বাণিজ্য বা এর কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণে বহু কাঙ্ক্ষিত চুক্তিতে উপনীত হতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। তবে এই ব্যর্থতার জন্য কূটনীতিকেরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতাকেই দায়ী করেছেন। বিশ্বসম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো রকম মতৈক্য প্রতিষ্ঠা ছাড়াই গত শুক্রবার মধ্যরাতে এক মাস স্থায়ী এ-সংক্রান্ত আলোচনা শেষ হয়।


যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, অস্ত্র-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে কোনো চুক্তিতে সই করার আগে তার আরও সময় প্রয়োজন। দেশটির এমন মন্তব্যের আগে রাশিয়া ও চীনও চুক্তির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হয়।
আলোচনাস্থল নিউইয়র্কের জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে বিবিসির সংবাদদাতা বারবারা প্লেট বলেন, চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এক মাস ধরে চলা ব্যাপক দর-কষাকষি ও আলোচনা হতাশাজনক পরিণতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। অবশ্য সম্মেলনের চেয়ারম্যান রবার্তো গর্সিয়া মরিতান এ বছরের শেষ নাগাদ এই চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘অবশেষে হলেও এই আর্মস ট্রেড ট্রিটি (এটিটি) হবে। এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, এটি প্রয়োজন।’
বিবিসির সংবাদদাতা আরও বলেন, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে প্রভাবশালী মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের অভ্যন্তরীণ চাপের কাছে মাথা নোয়ানোর জন্য সম্মেলনে কিছু প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন। আলোচনা শেষ হওয়ার আগের দিন বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের উভয় রাজনৈতিক দলের ৫১ জন সিনেট সদস্য তাঁদের অস্ত্র বহনের সাংবিধানিক অধিকার নষ্ট করে—এমন যেকোনো চুক্তি প্রত্যাখ্যানের হুমকি দেন।
কয়েকজন কূটনীতিক বলেন, মতৈক্যে পৌঁছানোর সময়সীমা শুক্রবার মধ্যরাতের ঠিক আগমুহূর্তে ওয়াশিংটন চুক্তির প্রস্তাবিত খসড়া সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থ হওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী। দেশটি পুরো প্রক্রিয়া লাইনচ্যুত করেছে। অচলাবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে এখন আমাদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, চুক্তিতে উপনীত হতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তিনি হতাশ। তিনি একে ‘একটি প্রতিবন্ধকতা’ বলেও আখ্যায়িত করেন। তবে মুন বলেন, প্রতিনিধিরা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে যে সম্মত হয়েছেন, তাতে তিনি উৎসাহিত। এ বিষয়ে তিনি তাঁর দৃঢ় সমর্থনের কথাও ব্যক্ত করেন।
অস্ত্র-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফামসহ আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর একটি জোট দীর্ঘ ছয় বছর ধরে প্রচারণা চালানোর পর প্রথমবারের মতো এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। আলোচনা সফল না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অ্যামনেস্টির মহাসচিব সলিল শেঠি। তিনি বলেন, ‘প্রতি মিনিটে অস্ত্রজনিত সহিংসতায় একজন করে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল।’ তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে প্রশ্ন করে বলেন, ‘ওবামা চুক্তির জন্য আরও সময় চেয়েছেন। তিনি আর কত সময় চান।’
কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির জন্য যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা আগামী শরৎ মৌসুমে সাধারণ পরিষদে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে প্রতিবছর ছয় থেকে সাত হাজার কোটি ডলারের প্রচলিত অস্ত্রের ব্যবসা হয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে এ সময়ে মারা যায় প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ। বিবিসি, এএফপি ও এপি।

No comments

Powered by Blogger.