গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারী হস্তক্ষেপে ৫৮ নারী নেত্রীর প্রতিবাদ

গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের ৫৮ নারীনেত্রী। বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে তারা এর প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের উদ্যোগের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। লিখিত বিবৃতিতে দেশের সকল সচেতন নাগরিককে দরিদ্র নারীদের মালিকানাধীন এই


বেসরকারী ব্যাংকটিকে নারীদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সরকারের মনোনীত চেয়ারম্যানের আওতাধীন নেয়ার এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্য আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন। গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭% মালিকানা দরিদ্র মহিলাদের। এতে সরকারের মালিকানা মাত্র ৩%। ‘গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে এই ব্যাংকের সরকার-নিযুক্ত চেয়ারম্যানকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা দেয়ার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকটিকে সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন করার শামিল, অর্থাৎ তৃণমূল নারীর ব্যবস্থাপনাকে অস্বীকার করে তাদের ক্ষমতাহীন করার পদক্ষেপ। এই আয়োজন এখনই বন্ধ করতে হবে।
গ্রামীণ ব্যাংক পৃথিবীতে একটি অনন্যসাধারণ ব্যাংক যা দরিদ্র মহিলাদের মালিকানাধীন। এর ৮৪ লাখ সদস্যর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে থেকে বছরের পর বছর এই জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানটির সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিয়ে আসছেন। পৃথিবীর আর কোথায় এমন মডেলের কোন ব্যাংকের নজির নেই।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ১২ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই এই ব্যাংকের ৮৪ লাখ সদস্যের প্রতিনিধি। পরিচালনা পরিষদের বাকি ২ জন সদস্য ও চেয়ারম্যান সরকার মনোনীত। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে চেয়ারম্যান পরিচালনা পর্ষদের পরামর্শে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্য ৩ জনের প্যানেল ঠিক করবেন, যা পূর্বে পর্ষদের সিদ্ধান্তে হতো। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে চেয়ারম্যানকে পরিচালনা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ঋণগ্রহীতা সদস্যদের, যাঁদের সকলেই নারী, মতামত অগ্রাহ্য করে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকদের তাদেরই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় তাদের অধিকার অস্বীকার করছে। গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ দরিদ্র মহিলাদের মালিকানায় সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ ব্যাংক একটি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্যাংক যার দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়নের অনন্য উদাহরণ বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
উল্লেখ্য, সকল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ডের। সরকার একমাত্র গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের ওপর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা অর্পণ করে যে ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা পক্ষপাতদুষ্ট ও অযৌক্তিক।
গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকদের অধিকার খর্ব করার সরকারের এই অযৌক্তিক পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দেশের সকল সচেতন নাগরিককে দরিদ্র মহিলাদের মালিকানাধীন এই বেসরকারী ব্যাংকটিকে সরকারের আওতাধীনে নেয়ার এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে নারী নেত্রীদের মধ্যে স্বাক্ষর করেন তাহেরুন্নেছা আব্দুলাহ, দিলরুবা আহমেদ, কাজী সুফিয়া আক্তার, ড. তাসনিম আজীম, ফেরদৌস আরা বেগম, সেলিনা বেগম, রাশেদা কে চৌধুরী, জিনাত ফাতিমা, রিজওয়ানা হাসান, গাজী শামীমা হোসেন, সারা হোসেন, খুশী কবির, খাদিজা আফজাল, ফরিদা আক্তার, শাহীন আনাম, মালেকা বেগম, ড. রাবেয়া ভুঁইয়া, অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী, রুবিনা ফারুক, নাসিমা হায়দার, হাফিজা মমতাজ হাসি, ড. হামিদা হোসেন, সিগমা হুদা, তাসমিমা হোসেন, সাবরিনা ইসলাম, ফারাহ কবির, সালমা খান, শামীমা খান, রওশন আরা, মাহমুদ নাজমা মাসুদ, শারমিন মোর্শেদ নাসরিন রব, রোকেয়া আফজাল রহমান, আনুজা সেইদী, রাকেয়া সুলতানা, অধ্যাপক নাশিদ কামাল, ফিস্টিনা পেরেরা, ড. জারিনা নাহার কবীর, সুলতানা কামাল, তাহেরা ইয়াসমীন, রোকেয়া কবির, সৈয়দা রোকসানা খান, মাহেরা খাতুন, সিমিন মাহমুদ, ড. আমেনা মহসীন, রাজিয়া কাদের, জওশন আরা রহমান, সৈয়দা এ রোকসানা, আকলিমা সুলতানা, আফরোজ হুদা, ড. শাহনাজ হুদা, ড. জুলিয়া আহ্মেদ, মৌসুমী খান, জারীনা নাহার কবির, ড. ফাউস্টিনা পেরেরা, ড. সুমাইয়া খায়ের, নাজমা সিদ্দিকী ও ড. সুলতানা আলম।

No comments

Powered by Blogger.