গড়াই নদে ভেসে গেল স্বপ্ন- কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের দুই ছাত্রের দাফন সম্পন্ন
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্র ফরিদুল হাসান ও রিফাত মজুমদারের লাশ শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রিফাতের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দেবীপুর এবং ফরিদুলের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রানীপুর কামদেবপুরে দাফন করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের রেনউইক বাঁধ এলাকায় গড়াই নদে গোসল করতে নেমে ফরিদুল হাসান (২০) ও রিফাত মজুমদারের (২০) মৃত্যু হয়। তাঁরা কলেজের প্রথম ব্যাচের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
কলেজের অধ্যক্ষ ইফতেখার মাহমুদ জানান, এ দুর্ঘটনায় কলেজে শোকের ছায়া নেমে আসায় কলেজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদের পর ২৫ আগস্ট কলেজ খুলবে।
স্বপ্ন পূরণ হলো না রিফাতের: ‘রিফাতের স্বপ্ন ছিল গ্রামের বাড়িতে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের। তাই ও আমাকে ফোন করে বলেছিল, “আব্বু, গ্রামে এখন জমির দাম কম। তুমি আমার জন্য জমি কিনে রাখো। পাঁচ বছর পর চিকিৎসক হয়ে ওই জায়গায় হাসপাতাল করব। ওই হাসপাতালে আমার ব্যাচের ২৪ জন চিকিৎসক পর্যায়ক্রমে এসে গ্রামের রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেবে। এতে গ্রামের মানুষ সেবা পাবে। তোমারও নাম হবে।” কিন্তু গড়াই নদে ভেসে গিয়ে ওর সব স্বপ্নই খান খান হয়ে গেল।’
গতকাল রিফাতের বাবা শাহজাহান মজুমদার ছেলের এমন স্বপ্নের কথা জানিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর সঙ্গে বুকফাটা আর্তনাদ করেন রিফাতের মা নাজমা বেগম ও একমাত্র বোন আসমা বেগম। গতকাল শনিবার দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিশা ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামে গিয়ে ওই দৃশ্য দেখা গেছে।
রিফাতের বাবা শাহজাহান মজুমদার ছেলের সঙ্গে শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টায় মুঠোফোনে সর্বশেষ কথা বলেন। রাতে অধ্যক্ষের মাধ্যমে খবর পান, তাঁর ছেলে আর নেই। এদিকে গতকাল সকালে কুষ্টিয়া থেকে রিফাতের লাশ কুমিল্লা শহরের ছোটরার বাসায় আনা হয়। সেখানে দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী ও খেলার সাথীরা লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের মসজিদে এবং বাদ জোহর রিফাতের গ্রামের বাড়ি চৌদ্দগ্রামের দেবীপুরে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা হয়। পরে সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হলো না: ‘পরিবারে ডাক্তার নাই, বড় আশা ছিল, আমার বাবা ডাক্তার হবে। গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু আল্লাহ্ তুমি আমাদের সব আশা কেড়ে নিলে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব?’ এভাবেই বিলাপ করে ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছিলেন ফরিদুল হাসানের মা ফরিদা বানু।
বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর স্কুলমাঠে সকাল সাড়ে আটটায় ফরিদুলের লাশ পৌঁছায়। সকাল সাড়ে নয়টায় সেখানে জানাজা শেষে লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি উপজেলার রানীপুর কামদেবপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা আড়াইটায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে সেখানে পারিবারিক গোরস্থানে ফরিদুলের দাফন সম্পন্ন হয়।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা; দিনাজপুর ও কুষ্টিয়া অফিস এবং চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি]
No comments