স্মরণ-তিনিই পথ দেখাচ্ছেন by আবদুল্লাহ আল নোমান

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দেশ গড়ার ভূমিকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেছিলেন জিয়া। তার উদ্দেশ্য ছিল গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো। অল্প সময়ে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন, একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের আবির্ভাব অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি।


তাই দেশি-বিদেশি চক্রান্তে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তার মৃত্যু আমাদের শোকাহত করেছে; কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। তাই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জিয়ার আদর্শ নিয়ে আজও বেঁচে আছে

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল ১৯৮১ সালের ২৯ মে। তিনি চট্টগ্রামে এসেছিলেন এবং অন্যান্য কাজের মধ্যে দলীয় কিছু সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরদিন সকালে তার নিহত হওয়ার সংবাদ শুনতে হয়। কিন্তু মানুষের মন থেকে তাকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবেও না।
ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা। তখন এ ধরনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র বিপ্লবের বিকল্প আছে বলে মনে করিনি। তাই জীবন বাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলাম। এ আন্দোলন করতে গিয়েই দেখেছি ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছে; কিন্তু তারা পথনির্দেশনা দিতে পারেনি। এরই পাশাপাশি নজর কেড়েছে জিয়াউর রহমানের সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা। জাতির ক্রান্তিলগ্নে তিনি বারবার আবির্ভূত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তার ঘোষণা জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং জনগণ তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালে বাম প্রগতিশীলরা চেয়েছিল স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম। অন্যদিকে ওই সময় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তারা চেয়েছিল আপসের মধ্যে মীমাংসা। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসেছিল। আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না থাকায় তাদের পক্ষ থেকে কেউ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিতে পারেননি। জনগণ নেতৃত্বের কথা চিন্তা না করে যার যা আছে তা নিয়েই সংগ্রামে নেমে পড়ে। ঠিক ওই সময় আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দরকার ছিল এবং মেজর জিয়াউর রহমান সেটা করেছিলেন। একজন মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়েও তিনি সাহসী অবস্থান নিয়েছিলেন। তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। তারপর রণাঙ্গনে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। জেড ফোর্সের দায়িত্ব বর্তায় তার ওপর। কিন্তু তার ব্যক্তিগত কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। তাই যুদ্ধের পর আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে যান এবং এ বাহিনী গড়ে তোলায় অবদান রাখেন।
তারপর তাকে দেখা গেল ১৯৭৫ সালের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মুখসারিতে। ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে বন্দিদশা মুক্ত হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্র-পরিচালনার দায়িত্ব নেন। তিনি এ সময়ে যে অসম সাহস ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেন, তার তুলনা বিরল। তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। বলা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর সব পর্যায়ের সদস্য এবং সাধারণ জনগণই তাকে নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল। ৭ নভেম্বর আরেকটি বিষয়ও প্রমাণ করে দেয়_ একাত্তরে তার ভূমিকা মোটেই আকস্মিক ছিল না। ক্রান্তিলগ্নে দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে তিনি রক্ষা করেন। জনগণ বুঝতে পারে যে জিয়াউর রহমান এমন একজন নেতা, যিনি পরিস্থিতির প্রয়োজনে যে কোনো গুরুদায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম। ১৯৭৫ সালে আবার আবির্ভূত না হলে জাতি একজন রাষ্ট্রনায়ককে দেখত না। ওই সময় রাজনীতির পটপরিবর্তনে দিশেহারা জাতিকে আবারও পথ দেখিয়েছেন তিনি। এরপর রাজনৈতিক দল গঠন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা দেন। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল হয়ে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ধ্বংস করে এবং জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর অফিসার হয়েও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। তিনি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নানা কর্মসূচি হাতে নেন। নতুন নতুন শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদতত্ত্ব দিয়ে জনগণকে রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ করেন। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে সক্ষম হন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দেশ গড়ার ভূমিকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেছিলেন জিয়া। তার উদ্দেশ্য ছিল গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো।
অল্প সময়ে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন, একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের আবির্ভাব অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। তাই দেশি-বিদেশি চক্রান্তে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তার মৃত্যু আমাদের শোকাহত করেছে; কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। তাই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জিয়ার আদর্শ নিয়ে আজও বেঁচে আছে।
কষ্ট পাই, যখন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক মানে না। তারা জিয়ার অবদানকে খাটো করতে চায়। আদালতকে ব্যবহার করে অনেক কিছুই তারা করেছে। কিন্তু ইতিহাস মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়া যায় না। তারা জিয়াকে খাটো করতে গিয়ে নিজেরাই খাটো হচ্ছে_ তা কি বোঝে না? জিয়া তো সাধারণ কেউ নন। তার অবদান দেশকে যা দিয়েছে, তা কি ভোলা সম্ভব? তাই জাতি তাকে মনে রেখেছে। তার আদর্শ নিয়ে বিএনপিও বেঁচে আছে। দল আরও শক্তিশালী হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কাছে জীবিত জিয়ার চেয়ে মৃত জিয়া যেন বেশি ভয়ের কারণ। তাই ষড়যন্ত্র থেমে নেই। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে তাদের চেষ্টার অন্ত নেই। কিন্তু জিয়াকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবেও না। বাংলাদেশ যত দিন বাঁচবে, জিয়াও বেঁচে থাকবেন। তার নীতি, আদর্শ ও দর্শন নিয়ে জনগণ দেশ রক্ষার সব আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
এখন আমাদের আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের। সরকারকে এ দাবি মানতেই হবে। জনগণ এ ব্যবস্থাই চায়। দেশে আইনের শাসন নেই। দুর্নীতি সর্বব্যাপী। সরকার কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে পথচলায় আমরা সফল হবোই।

আবদুল্লাহ আল নোমান : ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি
 

No comments

Powered by Blogger.