কৃষি-ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধি ও বিকল্প by রাজীব কামাল শ্রাবণ
এ দেশে জৈব সারের ব্যবহার বহু আগে থেকেই চলে আসছে। রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সারের ব্যবহার অনেক বেশি নিরাপদ। রাসায়নিক সারের ব্যবহারে ফসলের মধ্যে বিষক্রিয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা থাকে, কিন্তু জৈব সারের মধ্যে এটির কোনো সম্ভাবনা নেই সরকার ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগে যেখানে প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ছিল ১২ টাকা, সেখানে বর্তমানে ডিলারদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে কেজিপ্রতি ১৮ টাকা। আর কৃষক পর্যায়ে তা বিক্রি হবে কেজিপ্রতি ২০ টাকায়। সে হিসাবে ৫০ কেজির একটি বস্তার জন্য কৃষককে ৪০০ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ। দুঃখজনক হচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই সার ক্রয়ের ক্ষেত্রে কৃষকরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা মোটেও কাম্য নয়। সরকারের সারের দাম বৃদ্ধির পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। বাজেটের ওপর বাড়তি চাপ পড়ায় সরকার সারের ওপর দেওয়া ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, পাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সারের দাম কম থাকায় সীমান্তপথে অনেক সার পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা রোধ করা প্রয়োজন। শুধু তা-ই নয়, ইউরিয়া সারের দাম অন্যান্য সম্পূরক সারের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় কৃষকরা সেসবের পরিবর্তে বেশি মাত্রায় ইউরিয়া ব্যবহার করেন। এসব বিবেচনায় ইউরিয়ার দাম বাড়ানো হয়েছে। ইউরিয়ার মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারণগুলো যুক্তিযুক্ত। এতে কৃষক ইউরিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সম্পূরক সারের ব্যবহার বাড়াবে। ফসলে সারের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হবে। তবে দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের মধ্যে কী ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এবং তা থেকে রক্ষার বিষয়টিও সরকারের মাথায় রাখতে হবে।
বেশিরভাগ কৃষকই এখনও সারের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না। ইউরিয়া অতিরিক্ত ব্যবহারে গাছ বেশি বড় ও সবুজ হয় বটে, কিন্তু ফলন অনেক কমে যায়। অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ফলে মাটি, পানি, বায়ু দূষিত হয়ে পড়ছে। বছরের পর বছর এরকম বাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে ইউরিয়া সারের বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ দেশে জৈব সারের ব্যবহার বহু আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু কখনোই তা ব্যাপকভাবে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়নি। রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সারের ব্যবহার অনেক বেশি নিরাপদ। রাসায়নিক সারের ব্যবহারে ফসলের মধ্যে বিষক্রিয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা থাকে, কিন্তু জৈব সারের মধ্যে এটির কোনো সম্ভাবনা নেই।
দেশে এখন পোলট্রি শিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য পশুপাখির খামার গড়ে উঠেছে। কাঁচামালের জন্য এটি একটি ভালো উৎস। তবে সবচেয়ে বড় উৎস হতে পারে গৃহস্থালির আবর্জনা। ঢাকায় প্রতিদিন যে পরিমাণ আবর্জনা তৈরি হয় তা দিয়ে কাঁচামালের অভাব অনেকখানি পূরণ করা সম্ভব। যদি এসব আবর্জনা সংগ্রহ করে জৈব সারের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে আমরা সারও পাব আবার ঢাকাকে দূষণমুক্ত রাখতে পারব। অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর দিকেও এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি কল-কারখানার বর্জ্য শোধনের মাধ্যমে জৈব সারের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। আরও নতুন নতুন প্রযুক্তির কার্যকরী জৈব সার উদ্ভাবন করতে হবে। যদি সরকারি পর্যায়ে দেশে জৈব সার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে কৃষকরা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। এর জন্য পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তাহলে এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে উঠবে। অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। জৈব সারের বাণিজ্যিক উৎপাদন হলে সার আমদানি বাবদ সরকারের হাজার কোটি টাকা খরচ কমে যাবে। এটি সম্ভব হলে সারের দাম বৃদ্ধির ফলাফল কৃষকের ফসল উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। শুধু তা-ই নয়, মানুষ ও পরিবেশ রাসায়নিক সারের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। জমির উর্বরতা ফিরে আসবে। উৎপাদন অনেক বাড়বে। আমরা পারব বিষমুক্ত খাবার খেতে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকারের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
রাজীব কামাল শ্রাবণ :শিক্ষার্থী
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বেশিরভাগ কৃষকই এখনও সারের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না। ইউরিয়া অতিরিক্ত ব্যবহারে গাছ বেশি বড় ও সবুজ হয় বটে, কিন্তু ফলন অনেক কমে যায়। অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ফলে মাটি, পানি, বায়ু দূষিত হয়ে পড়ছে। বছরের পর বছর এরকম বাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে ইউরিয়া সারের বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ দেশে জৈব সারের ব্যবহার বহু আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু কখনোই তা ব্যাপকভাবে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়নি। রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সারের ব্যবহার অনেক বেশি নিরাপদ। রাসায়নিক সারের ব্যবহারে ফসলের মধ্যে বিষক্রিয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা থাকে, কিন্তু জৈব সারের মধ্যে এটির কোনো সম্ভাবনা নেই।
দেশে এখন পোলট্রি শিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য পশুপাখির খামার গড়ে উঠেছে। কাঁচামালের জন্য এটি একটি ভালো উৎস। তবে সবচেয়ে বড় উৎস হতে পারে গৃহস্থালির আবর্জনা। ঢাকায় প্রতিদিন যে পরিমাণ আবর্জনা তৈরি হয় তা দিয়ে কাঁচামালের অভাব অনেকখানি পূরণ করা সম্ভব। যদি এসব আবর্জনা সংগ্রহ করে জৈব সারের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে আমরা সারও পাব আবার ঢাকাকে দূষণমুক্ত রাখতে পারব। অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর দিকেও এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি কল-কারখানার বর্জ্য শোধনের মাধ্যমে জৈব সারের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। আরও নতুন নতুন প্রযুক্তির কার্যকরী জৈব সার উদ্ভাবন করতে হবে। যদি সরকারি পর্যায়ে দেশে জৈব সার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে কৃষকরা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। এর জন্য পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তাহলে এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে উঠবে। অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। জৈব সারের বাণিজ্যিক উৎপাদন হলে সার আমদানি বাবদ সরকারের হাজার কোটি টাকা খরচ কমে যাবে। এটি সম্ভব হলে সারের দাম বৃদ্ধির ফলাফল কৃষকের ফসল উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। শুধু তা-ই নয়, মানুষ ও পরিবেশ রাসায়নিক সারের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। জমির উর্বরতা ফিরে আসবে। উৎপাদন অনেক বাড়বে। আমরা পারব বিষমুক্ত খাবার খেতে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকারের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
রাজীব কামাল শ্রাবণ :শিক্ষার্থী
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
No comments