হজ-প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই by ফেরদৌস ফয়সাল

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় অর্ধ লাখ লোক হজ পালন করতে যান। এবার চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৭ নভেম্বর হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবারও ৭৫ হাজার বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে যেতে পারবেন ৬০ হাজার।


সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের পাশাপাশি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত এজেন্সির ব্যবস্থাপনায়ও হজ করে আসার ব্যবস্থা থাকছে। যাঁরা এবার হজে যেতে চান, তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।
খেয়াল করবেন, কোন এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন, বিমানের ফ্লাইট, মক্কা-মদিনায় আবাসন মসজিদুল হারাম থেকে কত দূরে। কত নম্বর মোয়াল্লেমের অধীনে হজ করবেন। খাবার, কোরবানি, অভিজ্ঞ গাইড, কত দিনের প্যাকেজ, হজ এজেন্সির শর্তাবলি, বৈধতা ও সুনাম ইত্যাদি।
পত্রিকায় খবর বের হয়েছে ২০০৯ সালে ২৫০টি হজ এজেন্সির মধ্যে ৬৭টি বেসরকারি এজেন্সির বিরুদ্ধে দেশে এবং সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের কাছ থেকে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত এজেন্সির কার্যক্রম তদন্তের পর ধর্ম মন্ত্রণালয় তিনটি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, ১৩টির স্থগিত করাসহ ৪৭টি বেসরকারি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর মধ্যে ২৬টি এজেন্সির জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। বাকিদের সতর্ক করে নোটিশ দেওয়া হবে।
গত বছর হাজিদের অভিযোগ ছিল, হাজিকে না জানিয়ে তাঁর বা তাঁদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অন্য এজেন্সিকে দেওয়া, হাজিদের যথোপযুক্ত স্থানে না রাখা, হাজিদের বিমানবন্দরে রেখে সটকে পড়া, এজেন্সি বাড়ি ভাড়ার টাকা পরিশোধ না করায় বিড়ম্বনায় পড়া, আবাসনের অব্যবস্থাপনা, পাসপোর্ট করতে নির্ধারিত ফির পাঁচ গুণ টাকা নেওয়া, খাবারের মান নিম্ন ও ঠিকমতো খাবার না দেওয়া, চুক্তিপত্র না দেখাতে পারা, হাজিদের যেখানে রাখা হয়েছে সেখানকার বাথরুমে পানি না থাকা, ৪৫ দিনের প্যাকেজ ২৮ দিনে শেষ করা, মদিনায় নামাজ পড়তে না দেওয়া, হাবের সদস্য হয়েও চুক্তি ভাঙা এবং মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক দলের সঙ্গে হজ এজেন্সির যোগাযোগ রক্ষা না করা ছিল অন্যতম অভিযোগ।
হজ ব্যবস্থাপনায় খরচের খাতগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে কোন খাতে খরচ কতটা, তা সুবিধা হয়। যেমন—খরচের খাতগুলো হলো বিমান ভাড়া বাবদ খরচ হবে ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা (এক হাজার ৩৫০ মার্কিন ডলার)। জেদ্দা ডিপারচার ট্যাক্স ৯২৫ টাকা, এম্বারকেশন ফি ৩০০ টাকা, ইন্স্যুরেন্স সারচার্জ ৭০০ টাকা, স্থানীয় সার্ভিস চার্জ ৩০০ টাকা, আপদকালীন ফান্ডে জমা ৫০ টাকা, মিনা- আরাফাতে তাঁবু ভাড়া, জেদ্দা-মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত বাবদ খরচ ২০ হাজার ১৪৭ টাকা, মিনা ও আরাফাতে মোয়াল্লেম ফি নয় হাজার ২৫০ টাকা, হজযাত্রীদের খাবার ১৭ হাজার টাকা, হজ গাইড ও প্রশিক্ষণ চার্জ চার হাজার ৪৩ টাকা, মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া ক্যাটাগরি অনুযায়ী ৮১ হাজার ৪০০ টাকা ।

সরকারি ব্যবস্থাপনায়
মক্কায় ৪ বর্গমিটার ও মদিনায় ৪ দশমিক ৫ বর্গমিটার থাকার ব্যবস্থাসহ একই রকম সুবিধা নিশ্চিত করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি মাত্র হজ প্যাকেজে হজযাত্রী পাঠানো হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনে ইচ্ছুকদের সার্বিক খরচ বাবদ দুই লাখ ২৮ হাজার ৬১৫ টাকা। আগামী ২২ জুলাই ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় জমা দেওয়া যাবে। হজ আবেদন ফরম (ওয়েবসাইট থেকে তথ্যসংগ্রহ করা যাবে) পূরণ করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হজের আবেদন ফরমের সঙ্গে জমাকৃত টাকার স্লিপ সংযুক্ত করতে হবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনকারীদের জন্য বাড়তি সুবিধার মধ্যে আছে প্রতি ৬০ জন হজযাত্রীর জন্য একজন হজ গাইড নিয়োগ করা হবে। অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধা ও সেবা প্রায় বিগত বছরগুলোর মতোই রাখা হয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হজযাত্রীদের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংবাদ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে www. hajj.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে তথ্যসংগ্রহ করা যাবে। নির্দিষ্ট আবেদনপত্র সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এবং হজ কর্মকর্তা ঢাকার কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা যাবে। আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে তা স্ব-স্ব্ব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে দাখিল করতে হবে। বিস্তারিত জানা যাবে এই ঠিকানায়: হজ কর্মকর্তা, হজ কার্যালয়, আশকোনা, উত্তরা, ঢাকা; ফোন: ৮৯১৬৫৭৪, ৮৯১৬৫৭০, ৭১৬৪৮০৭, ৭১৬৪৮১৯, ৭১৬৩৬৭৮। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা যাবে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়
আগে যাঁরা হজে গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে অনুমোদিত এজেন্সির প্যাকেজ যাচাই-বাছাই করে হজে যাবেন। চুক্তি ছাড়া কোনো এজেন্সি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না। কোনো হজ এজেন্সি দুই লাখ ২৮ হাজার ৬১৫ টাকার নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না। কোনোভাবেই এজেন্সির কাছে নগদ টাকা দেওয়া যাবে না। অনুমোদিত বেসরকারি হজ এজেন্সির নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে টাকা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক এজেন্সি সর্বনিম্ন ৫০ জন, সর্বোচ্চ ৪০০ জন হজযাত্রী প্রেরণ করতে পারবে।

খেয়াল করুন
হজ প্যাকেজ অনুযায়ী নারী হজযাত্রীদের মাহরামের সঙ্গে একত্রে টাকা জমা দিতে হবে। মাহরাম ছাড়া কোনো নারী এককভাবে হজে যাওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড বেশির ভাগ হজযাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করবে। বিমানে অল্প পানি ব্যবহার করে টয়লেট ব্যবহারবিধি, হাইকমোড, রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক সিগন্যাল ইত্যাদি সম্পর্কে জানা থাকলে সুবিধা হয়। সংশোধিত জাতীয় হজনীতি অনুযায়ী, শুধু আবেদনকারীর মৃত্যুজনিত কারণে জমা টাকা ফেরত দেওয়া হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ, স্বাস্থ্য সনদ, পুলিশ ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে অবস্থানকাল হবে ৪০ দিন। কোনো হজযাত্রী বিমানে ৩০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না। কোনো খাদ্যদ্রব্য চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড়, পচনশীল খাবার, রান্না করা খাবার, পান-সুপারি নেওয়া যাবে না। নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, হজ এজেন্সির নাম, টেলিফোন নম্বর হজযাত্রীর লাগেজে ইংরেজিতে লিখতে হবে, যাতে ব্যাগ হারালেও পাওয়া যাবে। কোরবানি বা দম দেওয়ার জন্য ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে দেওয়া সৌদি সরকারের একমাত্র স্বীকৃত ব্যবস্থা। ডায়াবেটিস, হূদরোগসহ ক্রনিক রোগের রোগীরা চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী ৪৫ দিনের ওষুধ সঙ্গে নিয়ে যাবেন। চশমা ব্যবহারকারীরা অতিরিক্ত একটি চশমা সঙ্গে রাখবেন। ভিড়ে কোনো কারণে ভেঙে যেতে পারে।
ফেরদৌস ফয়সাল: সাংবাদিক।
afef78@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.