এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, চট্টগ্রাম-স্বীকৃতির স্বীকৃতি পাওয়ার গল্প by নিজাম সিদ্দিকী

আমার কিন্তু আগে ইংরেজি ও কম্পিউটারের ওপর তেমন কোনো ধারণাই ছিল না। এখানে এসেই আমি এ সম্পর্কে সব জানার সুযোগ পেয়েছি। একই সঙ্গে জানতে পেরেছি নীতিবোধ, আদর্শ, দর্শন সম্পর্কেও। আমি বলতে পারি, এখানে আসার পর আমার চিন্তাচেতনায় একটা বিশাল পরিবর্তন হয়েছে।’


বলছিলেন চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উমেনের (এইউডব্লিউ) আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী স্বীকৃতি প্রামাণিক।
স্বীকৃতি ২০০৯ সালে এইউডব্লিউতে ভর্তি হন। তাঁর বাড়ি নাটোর জেলায়। বাবা কৃষিজীবী; নিজে জমি চাষ করেন। মা গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে ছোট স্বীকৃতি। বড় বোন বিয়ে করে সংসার করছেন।
কোনো ভাই ছিল না বলে ওঁর মা-বাবার মনে কোনো আক্ষেপ নেই। দুজনকেই তাঁরা পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করার স্বপ্নই দেখেছেন বরাবর।
আর সে জন্যই স্বীকৃতি ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত পড়ালেখায় কখনো ঠেকে থাকেননি। বৃত্তি পেয়েছেন পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে।
উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন ‘এ’ পেয়েছেন। নাটোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী ছিলেন। মাধ্যমিকেও ভালো ফল করেছেন। ‘এ’ প্লাস পেয়েছেন।
স্বীকৃতির অর্জনের তালিকায় যোগ হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেলোশিপ। এ বছরই তিনি পেয়েছেন এই ফেলোশিপ। একই বছরে তিনি ‘আইকেইএ’ বৃত্তি পান, যেটি দেওয়া হয়েছে সুইডিশ আসবাবপত্র প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া ২০০৯ সালে শিক্ষা বোর্ড থেকে বৃত্তি পেয়েছেন। আর মাধ্যমিকে ভালো ফলের জন্য পেয়েছেন স্বর্ণপদক।
স্বীকৃতি এইউডব্লিউতে ভর্তির খবর পেয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে। এর কারণ স্বীকৃতির বাবা ওই ব্যাংকের একজন ঋণগ্রহীতা। জমি চাষের জন্য ঋণ নিয়েছেন তিনি। তাই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক স্বীকৃতির উচ্চশিক্ষার ভালো সুযোগটি কোথায় পাওয়া যাবে তারই খবর দিতে আসেন তাঁদের বাসায়। এরপর স্বীকৃতি তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন নিজের মেধা দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাঁকে একজন অদম্য মেধাবী হিসেবে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ দিয়েছে এখানে।
স্বীকৃতি স্বপ্ন দেখেন, পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেবেন। জনস্বাস্থ্য বিষয়ে পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে। শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার মনে হয়, এর মাধ্যমে আমার চিন্তাভাবনা সবাইকে জানাতে পারব। সবাইকে বিভিন্ন বিষয়ে সহজেই সচেতন করে তোলা যাবে।’
স্বীকৃতি গত বছর জনস্বাস্থ্যের ওপর কাজ করেছেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। তাঁর কাজের বিষয় ছিল মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা। তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জর্জিয়া গালডন।

No comments

Powered by Blogger.