উত্তরের পথে by মিথুন দাশ

৮ মে, মঙ্গলবার। সকাল সাড়ে আটটায় সিলেট থেকে যাত্রা শুরু। প্রথম গন্তব্য নাটোর। গাড়ির ভেতর অনেক গল্প চলে। অংশ নেন পাপিয়া ভৌমিক, মীম ও অনাথবন্ধু এষ। গল্পের ফাঁকে দলনেতা নীরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, ‘আমরা কিন্তু বাংলাদেশের তাজমহল দেখতে যাচ্ছি।’ তিনি উত্তরা গণভবনের কথা বললেন।


তারপর একে একে হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর পেরিয়ে টাঙ্গাইল পৌঁছে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অসিত রঞ্জন পালের বাসায় দুপুরের খাবার।
টাঙ্গাইল থেকে যমুনা নদীর পাড় ছুঁতেই বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরবঙ্গে স্বাগত জানায়।
নাটোর পৌঁছাতেই রাত হয়। পরের দিন সকালের নাশতা শেষে আমরা যাই ‘রানী ভবানী রাজপ্রাসাদে’। রাজা রামজীবন কর্তৃক সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত সুরম্য রাজভবন দেখে চোখ আটকে যায়। ছুটে যাই দীঘাপাতিয়া রাজবাড়িতে, যা ‘উত্তরা গণভবন’ নামে পরিচিত। প্রথমেই চোখে পড়ে প্রবেশদ্বারের চূড়ায় বিলেতের কোক অ্যান্ড টেলভি কোম্পানির শতবর্ষী প্রাচীন ঘণ্টাঘড়ি। প্রধান ভবনের ভেতরে ঢুকতেই চোখ আটকে যায় অপার সৌন্দর্যে।
নাটোর থেকে বিদায় নিই। মনে পড়ে জীবনানন্দের কথা, ‘আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন...’
নওগাঁর পতিসর কাছারিবাড়ির রবীন্দ্রভাস্কর্য, কবির স্মৃতিময় নিদর্শন, কবিপুত্রের নামে প্রতিষ্ঠিত কালীগঞ্জ রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট, ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পতিসর কৃষি ব্যাংক আমাদের আপন করে নেয়।
ছুটে চলি রাজশাহীর উদ্দেশে। গাড়ির ভেতর থেকে চারদিকের তালগাছ দেখি। হঠাৎ রওশন ভাইয়ের (সাইদুজ্জামান) ফোন। ‘এখন কোথায় আছ? কোনো সমস্যা হলে জানিও।’ কয়েক ঘণ্টা পর আম চত্বর চোখে পড়লেই বুঝি রাজশাহীতে পৌঁছেছি। পদ্মাপাড়, শাহ মখদুমের (র.) মাজার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেখে সকালে যাই পুঠিয়া রাজবাড়ি। রাজভবনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে রানিপুকুর, শিবসাগরসহ কয়েকটি দিঘি, পোড়ামাটির ফলকে অলংকৃত মন্দির মুগ্ধতা ছড়ায়।
আবার গাড়ি চলে খুলনা বিভাগের মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে। যাই আমঝুপি নীলকুঠিতে। পরের দৃশ্যপর্ব কুষ্টিয়া। সকালেই যাই শিলাইদহে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়িতে। তারপর বাউলসম্রাট লালন শাহের সমাধি, কুমারখালীতে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ‘কাঙাল কুঠির’, গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকার এসএন প্রেস, মীর মশাররফ হোসেনের বাড়ি, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন সেতু ছাড়াও কুষ্টিয়া আমাদের মুগ্ধ করে।

No comments

Powered by Blogger.