কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় এমন উদাহরণ নেই-অতঃপর বুয়েট বন্ধ

বিশ্বকাপ ফুটবল-জ্বরে আক্রান্ত সারা বিশ্ব। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। কিন্তু এরই মধ্যে ছন্দ পতন ঘটল, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়—বুয়েট। ঘটনা সামান্য। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার জন্য ক্লাস বন্ধ রাখার দাবি করছিলেন বুয়েটের একটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।


এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ ২৬ জুন থেকে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার ঘোষণাও দিয়েছিল। কিন্তু তার পরও ক্লাস বন্ধ রাখার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এ নিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি ও সৃষ্ট উত্তেজনার কারণে কর্তৃপক্ষ বুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। তার মানে, প্রায় তিন সপ্তাহ বুয়েটে পড়াশোনা বন্ধ।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সেরা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। অনেক সাধনায় তাঁরা ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেরাদের সেরা হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর মারামারির জন্য অন্য সবার লেখাপড়া বন্ধ করা জরুরি কি না তা কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত ছিল। বিশ্বকাপের জন্য আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ তো বন্ধ হয়নি। তাহলে সেরা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় কেন বন্ধ করতে হবে?
এটা ঠিক যে বুয়েটের পড়াশোনা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আলাদা। এখানে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো পরীক্ষা থাকে বা প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। তাই রাত জেগে খেলা দেখে পরের দিন পরীক্ষা দেওয়া কঠিন। কিন্তু এ সমস্যা তো কারও অজানা নয়। বিগত বিশ্বকাপের সময়ও খেলা দেখা নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে এবং পরিণামে বুয়েট বন্ধ রাখতে হয়েছে। সুতরাং কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, এ বছরের একাডেমিক ক্যালেন্ডার (শিক্ষা সময়সূচি) এমনভাবে তৈরি করা, যেন বিশ্বকাপের সময় পরীক্ষার চাপ কম থাকে। অন্তত কোয়ার্টার ফাইনালের সময় থেকে কয়েক দিন ক্লাস বন্ধ রাখার পরিকল্পনা আগে থেকেই করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।
বুয়েট বন্ধ, অথচ যেখানে বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ রকম আকস্মিকভাবে বন্ধ করতে হয়নি। তারা বরং আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে খেলা ও ছুটির সমন্বয় করেছে। গ্রাহামসটাউনের রোডস ইউনিভার্সিটি তাদের কাজের সময় এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করেছে, যেন বিশ্বকাপের ৬৪টি খেলা দেখা থেকে কাউকে বঞ্চিত হতে না হয়। কাওয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয় এমনভাবে তাদের ২০১০ সালের একাডেমিক ক্যালেন্ডার পুনর্বিন্যাস করেছে, যেন খেলার সময় তাদের অর্ধবার্ষিক ছুটি থাকে।
খেলা দেখা ও পড়াশোনা অব্যাহত রাখার সমন্বিত ব্যবস্থা করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। সেখানে ব্যর্থতা সত্যিই দুঃখজনক।

No comments

Powered by Blogger.