পবিত্র কোরআনের আলো-কে ক্ষমা পাবে আর কে শাস্তি পাবে, তা সত্য ও ন্যায়ের বিধানদাতা আল্লাহর হাতে
১২৬। ওয়ামা জা'আলাহুল্লাহু ইল্লা বুশ্রা লাকুম ওয়ালিতাত্বমায়িন্না ক্বুলূবুকুম বিহী; ওয়া মান নাস্রু ইল্লা মিন 'ইন্দিল্লাহিল 'আযীযিল হাকীম। ১২৭। লিইয়াক্ব্ত্বা'আ ত্বরাফাম মিনাল্লাযীনা কাফারূ আও ইয়াক্বিতাহুম ফা-ইয়ান্ক্বালিবূ খায়িবীন।
১২৮। লাইসা লাকা মিনাল আম্রি শাইয়্যুন আও ইয়াতূবা 'আলাইহিম আও ইউ'আয্যিবাহুম ফা-ইন্নাহুম জলিমূন।
১২৮। লাইসা লাকা মিনাল আম্রি শাইয়্যুন আও ইয়াতূবা 'আলাইহিম আও ইউ'আয্যিবাহুম ফা-ইন্নাহুম জলিমূন।
১২৯। ওয়া লিল্লাহি মা ফিস্সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আর্দ্বি; ইয়াগ্ফিরু লিমাইঁ ইয়াশাউ ওয়া ইউ'আয্যিবু মাইঁ ইয়াশাউ; ওয়াল্লাহু গাফূরুর রাহীম। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১২৬-১২৯]
অনুবাদ
১২৬। আসলে এ সংখ্যাটি বলার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের জন্য একটি সুসংবাদ দিয়েছেন, যেন এর ফলে তোমাদের মন আশ্বস্ত হয়। আর বিজয়ের জন্য সাহায্য? তা তো পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।
১২৭। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের এক দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান অথবা লাঞ্ছিত করতে চান; অতঃপর এরা যেন পরাজিত হয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে যায়।
১২৮। (হে নবী) এ ব্যাপারে আপনার কিছুই করার নেই। আল্লাহ তায়ালা চাইলে তাদের প্রতি দয়াপরবশ হবেন অথবা শাস্তি দেবেন। কারণ, এরা অত্যাচারী।
১২৯। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তার সব কিছুই আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন, আর যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলো ওহুদ যুদ্ধের পটভূমিতে নাজিল হয়েছে। ১২৬ নম্বর আয়াতটিতে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে আগের আয়াতে যে পাঁচ হাজার ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে, সেই কথাটির। এখানে ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্যের কথা এবং পাঁচ হাজার সংখ্যাটির উল্লেখ আনা হয়েছে ইমানদারদের মনোবল বাড়ানোর জন্য। আল্লাহ তায়ালা ইমানদারদের সাহায্য করতে চাইলে যেকোনোভাবেই করতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর অবাধ্যদের সমূলে বিনাশও করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি অলৌকিকভাবে কিছুই করেননি। অন্যান্য যুদ্ধের মতোই ওহুদ যুদ্ধে যা সংঘটিত হয়েছে, তার সবই জাগতিক বাস্তবতার ঘটনা। এখানে মানুষের শক্তির ওপর নির্ভর করেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে; অলৌকিক শক্তির ওপর নির্ভর করে নয়।
এখানে ঐতিহাসিক এই ঘটনার কিছুটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করা দরকার। হিজরি তৃতীয় সনে সংঘটিত হয়েছিল এই যুদ্ধ। ওহুদ প্রান্তরে যুদ্ধ আরম্ভ হলে প্রথম আক্রমণেই মক্কার কুরাইশ বাহিনীর পরাজয় ঘটে। ইমানদাররা পলায়নরত কাফিরদের ফেলে যাওয়া মালপত্র সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ইমানদারদের একটি ক্ষুদ্র অংশকে পশ্চাতের একটি গিরিপথ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধে জয় হয়েছে ভেবে পশ্চাতের সেই গিরিপথরক্ষী দলটি তাদের অবস্থান ছেড়ে চলে আসে মালপত্র সংগ্রহে শামিল হওয়ার জন্য। এই সুযোগে কাফির বাহিনী পেছন দিক থেকে এসে পুনরায় আক্রমণ চালিয়ে মুসলিম বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। ওই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অন্যতম সেনানায়ক আমির হামজা (রা.) ও ইবনে যুবাইর (রা.) সহ অনেকে শাহাদাতবরণ করেন এবং স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সা.) আহত হন। তবে ওই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটেনি। বিশিষ্ট সাহাবিরা মুসলিম বাহিনীকে ত্বরিত একত্রিত করে বীরবিক্রমে কাফিরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাদের পলায়নে বাধ্য করেন। যুদ্ধ শেষে প্রিয় সাহাবিদের লাশ দেখে রাসুল (সা.) অত্যন্ত মর্মাহত হন। তখন এই আয়াত নাজিল হয়। এই আয়াতে রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, 'এখানে আপনার কিছুই করার নেই, যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তাঁদের তাওবা কবুল করবেন অথবা শাস্তি দেবেন। হয়তো শাস্তি অনেকেরই হবে। কারণ তারা ভীষণ জুলুম করেছে।' এর পরের ইতিহাস হলো, কুরাইশদের অনেকে কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, আবার কেউ কেউ ইমান এনে বিজয়ের অংশীদার হয়েছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ
১২৬। আসলে এ সংখ্যাটি বলার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের জন্য একটি সুসংবাদ দিয়েছেন, যেন এর ফলে তোমাদের মন আশ্বস্ত হয়। আর বিজয়ের জন্য সাহায্য? তা তো পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।
১২৭। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের এক দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান অথবা লাঞ্ছিত করতে চান; অতঃপর এরা যেন পরাজিত হয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে যায়।
১২৮। (হে নবী) এ ব্যাপারে আপনার কিছুই করার নেই। আল্লাহ তায়ালা চাইলে তাদের প্রতি দয়াপরবশ হবেন অথবা শাস্তি দেবেন। কারণ, এরা অত্যাচারী।
১২৯। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তার সব কিছুই আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন, আর যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলো ওহুদ যুদ্ধের পটভূমিতে নাজিল হয়েছে। ১২৬ নম্বর আয়াতটিতে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে আগের আয়াতে যে পাঁচ হাজার ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে, সেই কথাটির। এখানে ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্যের কথা এবং পাঁচ হাজার সংখ্যাটির উল্লেখ আনা হয়েছে ইমানদারদের মনোবল বাড়ানোর জন্য। আল্লাহ তায়ালা ইমানদারদের সাহায্য করতে চাইলে যেকোনোভাবেই করতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর অবাধ্যদের সমূলে বিনাশও করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি অলৌকিকভাবে কিছুই করেননি। অন্যান্য যুদ্ধের মতোই ওহুদ যুদ্ধে যা সংঘটিত হয়েছে, তার সবই জাগতিক বাস্তবতার ঘটনা। এখানে মানুষের শক্তির ওপর নির্ভর করেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে; অলৌকিক শক্তির ওপর নির্ভর করে নয়।
এখানে ঐতিহাসিক এই ঘটনার কিছুটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করা দরকার। হিজরি তৃতীয় সনে সংঘটিত হয়েছিল এই যুদ্ধ। ওহুদ প্রান্তরে যুদ্ধ আরম্ভ হলে প্রথম আক্রমণেই মক্কার কুরাইশ বাহিনীর পরাজয় ঘটে। ইমানদাররা পলায়নরত কাফিরদের ফেলে যাওয়া মালপত্র সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ইমানদারদের একটি ক্ষুদ্র অংশকে পশ্চাতের একটি গিরিপথ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধে জয় হয়েছে ভেবে পশ্চাতের সেই গিরিপথরক্ষী দলটি তাদের অবস্থান ছেড়ে চলে আসে মালপত্র সংগ্রহে শামিল হওয়ার জন্য। এই সুযোগে কাফির বাহিনী পেছন দিক থেকে এসে পুনরায় আক্রমণ চালিয়ে মুসলিম বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। ওই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অন্যতম সেনানায়ক আমির হামজা (রা.) ও ইবনে যুবাইর (রা.) সহ অনেকে শাহাদাতবরণ করেন এবং স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সা.) আহত হন। তবে ওই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটেনি। বিশিষ্ট সাহাবিরা মুসলিম বাহিনীকে ত্বরিত একত্রিত করে বীরবিক্রমে কাফিরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাদের পলায়নে বাধ্য করেন। যুদ্ধ শেষে প্রিয় সাহাবিদের লাশ দেখে রাসুল (সা.) অত্যন্ত মর্মাহত হন। তখন এই আয়াত নাজিল হয়। এই আয়াতে রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, 'এখানে আপনার কিছুই করার নেই, যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তাঁদের তাওবা কবুল করবেন অথবা শাস্তি দেবেন। হয়তো শাস্তি অনেকেরই হবে। কারণ তারা ভীষণ জুলুম করেছে।' এর পরের ইতিহাস হলো, কুরাইশদের অনেকে কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, আবার কেউ কেউ ইমান এনে বিজয়ের অংশীদার হয়েছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments