জন্মদিন-অতুলনীয় সুফিয়া কামাল by কাজী সুফিয়া আখতার
‘মুসলিম সমাজ আজ এক কঠোর দায়িত্ব গ্রহণের সম্মুখীন। অর্জিত স্বাধীনতা, সম্মান ও গৌরব অক্ষুণ্ন রাখতে হলে কেবল পুরুষেরই নয়, মুসলিম নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে নতুন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের কাজে। তার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ নারীসমাজকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সেই স্বাধীন সার্বভৌম আদর্শ রাষ্ট্রের সত্যিকার দাবিদার হতে পারে সগৌরবে।
এর জন্য চাই আমাদের মানসিক প্রসার, আশা-আকাঙ্ক্ষার ব্যাপ্তি আর জীবন সম্পর্কে এক স্থির ধারণা।’ এই কথাগুলো ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন কবি-সম্পাদক সুফিয়া কামাল। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত বক্তব্য সমান তাৎপর্যময়, গুরুত্ববহ।
মহীয়সী নারী, জননী সাহসিকা, সমাজের মুক্তির পথ রচয়িতাদের অন্যতম পথিকৃৎ সুফিয়া কামাল অকুতোভয়ে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, মানব মুক্তি, নারী মুক্তি, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সব সময়ই ছিলেন সামনের সারিতে।
যেখানে অন্যায় দেখেছেন, সেখানেই তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠ কখনো এককভাবে, কখনো সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হতো। অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ছিল তাঁর আমৃত্যু লড়াই। পাকিস্তানি শাসকের ভয় দেখানো কিংবা জঙ্গি, জামায়াতে ইসলামীদের তৎপরতা তাঁকে কখনো ভীত বা বিচলিত করেনি।
১৯১১ সালের ২০ জুন, ১৩১৮ বাংলা সনের ১০ আষাঢ় তিনি বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবার নাম সৈয়দ আবদুল বারী। মা নবাবজাদী সৈয়দা সাবেরা খাতুন। বাবা ছিলেন সুফি সাধক, আধ্যাত্মিক ঘরানার মানুষ। এক রাতে স্ত্রী-পুত্র ও সাত মাসের শিশু সুফিয়াকে ছেড়ে ধর্মকে ভালোবেসে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এ কারণে তাঁর শৈশব কাটে মাতুলালয়ের আভিজাত্যে এবং সংস্কারের ঘেরাটোপে। তাঁর বড় মামা ছিলেন বহু ভাষাবিদ ও বিদ্বান। কিন্তু নারী শিক্ষার বিরোধী। বাড়িতে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ছিল। মামা সন্ধ্যার পর বাড়ির মেয়েদের মূল সংস্কৃতে লেখা মেঘদূত, রঘুবংশ পড়ে মুখে মুখে বাংলা করে বুঝিয়ে দিতেন। এতে সুফিয়ার মন ভরত না। তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে ‘দাসী-বাঁদী’দের মুখের ভাষা বাংলা শিখে গল্প-কবিতা পড়ে নিজেকে স্বশিক্ষিত করে তোলেন এবং সাহিত্যচর্চায় অনুপ্রাণিত হন। তাঁর কথা অনুসারে সাত বছর বয়সে প্রথম কবিতা লেখেন তিনি। বিস্ময় জাগে মনে, শৈশব থেকেই আভিজাত্যের দেয়াল ভেঙে মায়ের সহযোগিতায় কুসংস্কার ভাঙার সাহস দর্শনে! বাংলা শিখেছেন। কবিতা লিখেছেন। তাঁর এই সাহসের কোনো ‘তল’ স্পর্শ করতে পারি না।
১৯২৩ সালে সুফিয়ার বিয়ে হয় আইনের ছাত্র সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে। স্বামীর সহায়তায় শিক্ষা, কবিতা লেখা এবং পত্রিকায় প্রকাশের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই সময়ে তিনি সাহস করে উড়োজাহাজে চড়েন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যান। বলাই বাহুল্য, নবাববাড়ির আত্মীয়স্বজন তাঁর এসব দুঃসাহসী, সময় ও সমাজের চেয়ে অগ্রগামী কর্ম সুনজরে দেখেননি। তিনি এবং তাঁর মা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এ নিয়ে কোনো মনস্তাপ করতে শুনিনি। ১৯৩২ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে নেহাল হোসেন অকালে মারা যান। ছয় মাসের শিশুকন্যা নিয়ে সুফিয়া এন হোসেন তখন অসহায়। জীবনযাপনের জন্য আধুনিক, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারী কলকাতা করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মাসিক বেতন ৫০ টাকা।
নবাববাড়ির আভিজাত্যের মধ্যে তাঁর মা চিরকাল বৈধব্যের যন্ত্রণা নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন। মায়ের মতো তাঁকেও সহ্য করতে হয় অকাল বৈধব্যের যন্ত্রণা। সমাজ-সংসারের গঞ্জনা। এই গঞ্জনার কথা সুফিয়া কামাল অকপটে লিখেছেন চিঠির মাধ্যমে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব, সাহিত্যিক বন্ধু আবুল ফজলকে। ১৯৩৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজে বিধবার অবস্থা আপনাকে কি বলতে হবে নতুন করে? বিধির বিধানের ওপর মানুষের বিধান বড় ভয়ানক। আমি কিছুই করতে পারছি না। একই বিরহের কবিতা বার বার লিখে আমারই বিরক্তি ধরে গেছে।’
১৯৩২ সালে কামাল উদ্দীন খানের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সাহিত্যচর্চা এবং স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে সুফিয়া কামাল দ্রুতই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। দেশভাগের পরে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। বেগম পত্রিকা ঘিরে গড়ে ওঠে সাহিত্যের আড্ডা, সমাজকল্যাণমূলক কাজ এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে নারীদের পথচলা।
১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি আয়োজিত ‘শান্তি মিছিলে’ সুফিয়া কামাল সম্মুখভাবেই ছিলেন। ১৯৫১ সালের ১৬ থেকে ১৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রাম শহরের হরিখোলার মাঠে প্রান্তিক নবনাট্য সংঘের শ্রমে প্রথম একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রতিক্রিয়াশীল মহলের অপপ্রচারে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও অংশগ্রহণ করেননি। সম্মেলনে ভাষণদানকালে সুফিয়া কামাল বলেছিলেন ‘বিশ্বের সঙ্গে, সকল জাতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় যত নিবিড় হবে, ততই আমাদের মনের সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামি দূর হবে। ফলে আমাদের সাহিত্য হবে সুদূরপ্রসারী ও বহু বিস্তৃত।’ বৈরী সময়ে তাঁর এই বক্তব্য স্বচ্ছ চিন্তা ও সাহসের পরিচায়ক। উল্লেখ্য, ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মনীষী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় ২২ ফেব্রুয়ারি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে ঢাকার মহিলাদের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর হার্দিক সম্পর্ক সবারই জানা। রাজনীতি করেন না বলে বাকশালে যোগ দেননি। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁকে এক সভায় বলেছিলেন, ‘আপনি নেতা হতে চান না? খাল কাটতে চান না?’ সুফিয়া কামাল তাঁর স্বভাবসুলভ হাসিতে জবাব দিয়েছিলেন, ‘না, আমার নেতা হবার শখ নেই, খাল কাটারও বয়স নেই।’
তীব্র ঘৃণা করতেন রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের। আমৃত্যু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছেন। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তান সরকারের দেওয়া তমঘা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলাদেশে নারী জাগরণ, নারী অধিকার আদায় ও নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ সুফিয়া কামাল ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গঠন করেন।
অতুলনীয় সুফিয়া কামালকে তাঁর ৯৯তম জন্মদিনে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। শুভ জন্মদিন।
মহীয়সী নারী, জননী সাহসিকা, সমাজের মুক্তির পথ রচয়িতাদের অন্যতম পথিকৃৎ সুফিয়া কামাল অকুতোভয়ে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, মানব মুক্তি, নারী মুক্তি, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সব সময়ই ছিলেন সামনের সারিতে।
যেখানে অন্যায় দেখেছেন, সেখানেই তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠ কখনো এককভাবে, কখনো সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হতো। অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ছিল তাঁর আমৃত্যু লড়াই। পাকিস্তানি শাসকের ভয় দেখানো কিংবা জঙ্গি, জামায়াতে ইসলামীদের তৎপরতা তাঁকে কখনো ভীত বা বিচলিত করেনি।
১৯১১ সালের ২০ জুন, ১৩১৮ বাংলা সনের ১০ আষাঢ় তিনি বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবার নাম সৈয়দ আবদুল বারী। মা নবাবজাদী সৈয়দা সাবেরা খাতুন। বাবা ছিলেন সুফি সাধক, আধ্যাত্মিক ঘরানার মানুষ। এক রাতে স্ত্রী-পুত্র ও সাত মাসের শিশু সুফিয়াকে ছেড়ে ধর্মকে ভালোবেসে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এ কারণে তাঁর শৈশব কাটে মাতুলালয়ের আভিজাত্যে এবং সংস্কারের ঘেরাটোপে। তাঁর বড় মামা ছিলেন বহু ভাষাবিদ ও বিদ্বান। কিন্তু নারী শিক্ষার বিরোধী। বাড়িতে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ছিল। মামা সন্ধ্যার পর বাড়ির মেয়েদের মূল সংস্কৃতে লেখা মেঘদূত, রঘুবংশ পড়ে মুখে মুখে বাংলা করে বুঝিয়ে দিতেন। এতে সুফিয়ার মন ভরত না। তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে ‘দাসী-বাঁদী’দের মুখের ভাষা বাংলা শিখে গল্প-কবিতা পড়ে নিজেকে স্বশিক্ষিত করে তোলেন এবং সাহিত্যচর্চায় অনুপ্রাণিত হন। তাঁর কথা অনুসারে সাত বছর বয়সে প্রথম কবিতা লেখেন তিনি। বিস্ময় জাগে মনে, শৈশব থেকেই আভিজাত্যের দেয়াল ভেঙে মায়ের সহযোগিতায় কুসংস্কার ভাঙার সাহস দর্শনে! বাংলা শিখেছেন। কবিতা লিখেছেন। তাঁর এই সাহসের কোনো ‘তল’ স্পর্শ করতে পারি না।
১৯২৩ সালে সুফিয়ার বিয়ে হয় আইনের ছাত্র সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে। স্বামীর সহায়তায় শিক্ষা, কবিতা লেখা এবং পত্রিকায় প্রকাশের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই সময়ে তিনি সাহস করে উড়োজাহাজে চড়েন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যান। বলাই বাহুল্য, নবাববাড়ির আত্মীয়স্বজন তাঁর এসব দুঃসাহসী, সময় ও সমাজের চেয়ে অগ্রগামী কর্ম সুনজরে দেখেননি। তিনি এবং তাঁর মা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এ নিয়ে কোনো মনস্তাপ করতে শুনিনি। ১৯৩২ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে নেহাল হোসেন অকালে মারা যান। ছয় মাসের শিশুকন্যা নিয়ে সুফিয়া এন হোসেন তখন অসহায়। জীবনযাপনের জন্য আধুনিক, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারী কলকাতা করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মাসিক বেতন ৫০ টাকা।
নবাববাড়ির আভিজাত্যের মধ্যে তাঁর মা চিরকাল বৈধব্যের যন্ত্রণা নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন। মায়ের মতো তাঁকেও সহ্য করতে হয় অকাল বৈধব্যের যন্ত্রণা। সমাজ-সংসারের গঞ্জনা। এই গঞ্জনার কথা সুফিয়া কামাল অকপটে লিখেছেন চিঠির মাধ্যমে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব, সাহিত্যিক বন্ধু আবুল ফজলকে। ১৯৩৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজে বিধবার অবস্থা আপনাকে কি বলতে হবে নতুন করে? বিধির বিধানের ওপর মানুষের বিধান বড় ভয়ানক। আমি কিছুই করতে পারছি না। একই বিরহের কবিতা বার বার লিখে আমারই বিরক্তি ধরে গেছে।’
১৯৩২ সালে কামাল উদ্দীন খানের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সাহিত্যচর্চা এবং স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে সুফিয়া কামাল দ্রুতই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। দেশভাগের পরে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। বেগম পত্রিকা ঘিরে গড়ে ওঠে সাহিত্যের আড্ডা, সমাজকল্যাণমূলক কাজ এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে নারীদের পথচলা।
১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি আয়োজিত ‘শান্তি মিছিলে’ সুফিয়া কামাল সম্মুখভাবেই ছিলেন। ১৯৫১ সালের ১৬ থেকে ১৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রাম শহরের হরিখোলার মাঠে প্রান্তিক নবনাট্য সংঘের শ্রমে প্রথম একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রতিক্রিয়াশীল মহলের অপপ্রচারে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও অংশগ্রহণ করেননি। সম্মেলনে ভাষণদানকালে সুফিয়া কামাল বলেছিলেন ‘বিশ্বের সঙ্গে, সকল জাতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় যত নিবিড় হবে, ততই আমাদের মনের সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামি দূর হবে। ফলে আমাদের সাহিত্য হবে সুদূরপ্রসারী ও বহু বিস্তৃত।’ বৈরী সময়ে তাঁর এই বক্তব্য স্বচ্ছ চিন্তা ও সাহসের পরিচায়ক। উল্লেখ্য, ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মনীষী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় ২২ ফেব্রুয়ারি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে ঢাকার মহিলাদের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর হার্দিক সম্পর্ক সবারই জানা। রাজনীতি করেন না বলে বাকশালে যোগ দেননি। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁকে এক সভায় বলেছিলেন, ‘আপনি নেতা হতে চান না? খাল কাটতে চান না?’ সুফিয়া কামাল তাঁর স্বভাবসুলভ হাসিতে জবাব দিয়েছিলেন, ‘না, আমার নেতা হবার শখ নেই, খাল কাটারও বয়স নেই।’
তীব্র ঘৃণা করতেন রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের। আমৃত্যু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছেন। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তান সরকারের দেওয়া তমঘা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলাদেশে নারী জাগরণ, নারী অধিকার আদায় ও নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ সুফিয়া কামাল ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গঠন করেন।
অতুলনীয় সুফিয়া কামালকে তাঁর ৯৯তম জন্মদিনে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। শুভ জন্মদিন।
No comments