রুল সময়োপযোগী, সরকারের আন্তরিকতা কাম্য-বিচারক নিয়োগ নীতিমালা

উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চের রুল জারি সময়োপযোগী। প্রধানত দুটি বিষয়ে ঘাটতির কারণেই বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে; আর তা হলো, স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতার অভাব। হাইকোর্ট এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করতেই রুল জারি করেছেন। আমরা আদালতকেন্দ্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।


তবে এ থেকে সুফল পাওয়া নির্ভর করছে সরকার ও সংসদের আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতার ওপর।
বেশির ভাগ সময় বিচার-অঙ্গনের আগ্রহী ব্যক্তিরা জানতেও পারেন না যে বিচারক নিয়োগ হতে যাচ্ছে। সবচেয়ে নাজুক হলো, ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশে হাইকোর্টের বিচারকের সংখ্যা আইন বা বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। আর এটা থাকলে আগাম ধারণা করা যায় নির্দিষ্ট সময়ান্তে কতগুলো পদ শূন্য হবে এবং সে জন্য কখন কতজনকে নিয়োগ দিতে হবে। বাংলাদেশে অলিখিত রেওয়াজ ছিল সর্বশেষ বিচারকসংখ্যাকে লোকবল হিসেবে বিবেচনা করা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে এক দশক ধরে এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিচ্যুতি লক্ষ করা যাচ্ছে। অনিষ্পন্ন মামলার স্ফীতিকে বাড়তি বিচারক নিয়োগ করার কারণ হিসেবে দেখানো হয়, কিন্তু এর কোনো তদারকির ব্যবস্থা নেই।
সংসদ বা সুপ্রিম কোর্ট বারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই বর্তমান সরকার আপিল বিভাগের বিচারকসংখ্যা সাত থেকে এগারোতে উন্নীত করেছে। আবার সরকার তার খেয়ালখুশিমতো সেই সংখ্যা পূরণের বাধ্যবাধকতা পালন করা থেকে বিরত রয়েছে। গত কয়েক মাসে আপিল বিভাগ থেকে পাঁচজন বিচারক অবসর নিয়েছেন। এই পদগুলো শূন্য থাকলেও তা পূরণ করার উদ্যোগ নেই।
এখানে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার। প্রথমত, বাংলাদেশের ইতিহাসে হাইকোর্টে সরাসরি কাউকে স্থায়ীভাবে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ পর্যন্ত সবাইকে প্রবেশ করতে হয়েছে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে, অনধিক দুই বছর মেয়াদে। এই মেয়াদের পরে তাঁদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন তাঁরা পুনরায় শপথ নেন। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত বিচারক থেকে তাঁরা স্থায়ী বিচারক হন। বয়স ৬৭ হওয়া পর্যন্ত তাঁরা স্বপদে বহাল থাকেন। অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ থেকে স্থায়ী হওয়ার বিষয়টি কোনো পদোন্নতি নয়। তৃতীয়ত, হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগে যাওয়া কোনো পদোন্নতি নয়, একেবারে নতুন নিয়োগ। বিচারকেরা নতুন করে শপথ নেন। সে কারণে আমাদের সুপারিশ হলো, বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের জন্য একটি তিন স্তরবিশিষ্ট সুবিন্যস্ত বিচারক নিয়োগ নীতিমালা দরকার। বর্তমানে এসব পর্যায়ে যে একেবারেই কোনো বিচার-বিবেচনা বা মানদণ্ড নেই তা নয়। কিন্তু তা সব সময়, সব ক্ষেত্রে সমভাবে অনুসরণ করা হয় না বলেই প্রতীয়মান হয়।
২০০৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগ অতিরিক্ত বিচারক ও আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগে নির্দিষ্ট বিধিমালা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগ হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের ওই রায় থেকে আপিল বিভাগের নিয়োগ নীতিমালার অংশটি বাদ দেন। এ প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট বিভাগ ৬ জুন রুল জারি করলেন। ইতিপূর্বে কী প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা আইন মন্ত্রণালয়কে চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলেছেন আদালত। আপাতত আমাদের বিশেষ আগ্রহ সরকারের এই জবাব প্রদানের বিষয়টিতে। আমরা আশা করব, সরকার কোনো অজুহাতেই কালক্ষেপণ বা পাশ কাটানোর চেষ্টা করবে না।

No comments

Powered by Blogger.