বিশেষ সাক্ষাৎকার-ভূ-রাজনৈতিক কারণে চীনের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ by আশফাকুর রহমান
আশফাকুর রহমান। চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত। এর আগে জার্মানি ও সিঙ্গাপুরে যথাক্রমে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান।
সম্প্রতি চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, কানেকটিভিটি, বাণিজ্যিক ভারসাম্য ইত্যাদি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা হয়। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ঢের সুযোগ আছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে চীনের কাছে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
প্রথম আলো চীনা ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এটি কি রুটিন সফর, না বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ?
আশফাকুর রহমান শি জিনপিং চীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সে দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা পলিটব্যুরোর সদস্য। ২০০৮ সালের মার্চ থেকে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বেইজিংয়ে সফল গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের কৃতিত্বও তাঁর। একই সঙ্গে তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি স্কুলের অধ্যক্ষ। কূটনৈতিক মহল মনে করে, শি জিনপিং চীনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। চীনা রীতি অনুযায়ী পরবর্তী প্রধান নেতা বন্ধুদেশগুলোতে ওরিয়েন্টেশন বা পরিচিতিমূলক সফর করে থাকেন। সেদিক থেকে তাঁর এই সফর নিছক রুটিনমাফিক নয়, গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে গিয়েছিলেন। তিনি যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সব প্রতিবেশী দেশের সহায়তা চেয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কিছুটা বিতর্কও হচ্ছে।
আশফাকুর রহমান আন্তরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ বা কানেকটিভিটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব যেমন আছে, তেমনি এর রাজনৈতিক বিবেচনাও অগ্রাহ্য করা যায় না। সে কারণে এটি স্পর্শকাতরও। কানেকটিভিটির প্রথম শর্ত হলো অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেতুবন্ধ হিসেবে আমরা কাজ করতে পারি। কুনমিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের দুটি উপায় আছে। একটি হলো প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে। সে ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আরেকটি চট্টগ্রাম থেকে মিয়ানমার হয়ে। সেখানে মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে রেল যোগাযোগ করাও কঠিন। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সে সুবিধা নেই। কুনমিং থেকে রেঙ্গুন পর্যন্ত যে রেললাইন আছে, তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে।
প্রথম আলো বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য-ঘাটতি রয়েছে। এ বাণিজ্য-বৈষম্য কমিয়ে আনার উপায় কী?
আশফাকুর রহমান বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন হয়। এর মধ্যে আমরা চীনে রপ্তানি করি ১০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে চীন রপ্তানি করে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের। বিশাল এই বাণিজ্য-ঘাটতি মোকাবিলার একটি উপায় হলো চীনা বিনিয়োগ বাড়ানো। চীনা অর্থায়নে সে দেশটিতে চাহিদা আছে এমন পণ্যের শিল্পকারখানা এখানে স্থাপন করা যায়। এটি তৈরি পোশাকশিল্প হতে পারে। চীনে শ্রম মজুরি বেড়ে যাচ্ছে। তুলনায় আমাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা অনেক কম। এসব পণ্য আমরা ইউরোপেও রপ্তানি করতে পারব।
দ্বিতীয়ত, চীনে চাহিদা আছে এমন পণ্যের বাজার খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের কাছাকাছি চীনা প্রদেশ ইউনান, সিচুয়ান, তিব্বতে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পাঠাতে হবে। চীনারা কাঁকড়া খুব পছন্দ করে। বাংলাদেশে প্রচুর কাঁকড়া হয় এবং তার মানও ভালো। আমরা এখানে কাঁকড়ার খামার করে চীনে রপ্তানি করতে পারি। এ ছাড়া আমরা চীনের পশ্চিমাঞ্চলে ওষুধ রপ্তানি করতে পারি। এ জন্য চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। এখন সেখানে বেশ কিছু বিদেশি কারখানা আছে, কিছু ওষুধ আসে পূর্বাঞ্চল থেকে। আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমি রাষ্ট্রদূত থাকাকালে কুনমিংয়ে ইপিবির মাধ্যমে নিটওয়্যারের একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলাম। আমরা প্রতিটি গেঞ্জি ৪০ আরএমবিতে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০০ টাকা) বিক্রি করেছিলাম। স্থানীয় গেঞ্জি বিক্রি হতো ৮০ আরএমবিতে। আমাদের স্টলে ক্রেতাদের ভিড় ঠেকাতে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল। অর্থাৎ চীনে আমাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।
প্রথম আলো আপনি চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অভিজ্ঞতার আলোকে জানতে চাই, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়?
আশফাকুর রহমান সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তারা আইটিতে আমাদের সহায়তা করতে পারে। ভারতের সঙ্গে তারা সফটওয়্যার ডেভেলপ করছে। বাংলাদেশও সেই সুযোগ নিতে পারে। আরেকটি সম্পর্ক হলো সাংস্কৃতিক। চীনে তো একটি সংস্কৃতি নয়। একেক প্রদেশে একেক রকম সংস্কৃতি। আমরা প্রাদেশিক পর্যায়ে সাংস্কৃতিক বিনিময় করতে পারি। ইউনানে যে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের আদিবাসী সংস্কৃতির মিল আছে।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন চীনা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতেও পড়ানো হচ্ছে। হার্ভার্ড ও ইয়েলের সঙ্গে ওদের ক্রেডিট ট্রান্সফারের ব্যবস্থা আছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগটিও নিতে পারে। আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কিন্তু অনেক চৌকস ও প্রতিভাবান। আমরা তাদের কাজে লাগাতে পারি। পর্যটনেও বিশাল সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছর তিন কোটি চীনা নাগরিক বিদেশে ঘুরতে যায়। এর মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশকেও যদি আমরা বাংলাদেশে টানতে পারি, প্রচুর বিদেশি মুদ্রা আয় হবে।
প্রথম আলো চীন ও ভারত বাংলাদেশের দুই বড় প্রতিবেশী। বাংলাদেশ কীভাবে তাদের থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারে?
আশফাকুর রহমান ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এটি আমাদের জন্য বিরাট সুবিধা। এর সুফল নিতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্ব ও পশ্চিমের গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। চীনের পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পণ্যবাহী জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করবে এবং সেখান থেকে পণ্য সড়কপথে গন্তব্যে যাবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, সেবার মান বাড়াতে হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর হতে পারে।
প্রথম আলো সরকারের দাবি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। আবার বিরোধী দল বলছে, সরকারের নীতি একপেশে। আপনার অভিমত কী?
আশফাকুর রহমান সম্পর্কের ভারসাম্য কথাটি আপেক্ষিক। দেখতে হবে, বাংলাদেশ এর মধ্য দিয়ে কতটা লাভবান হচ্ছে। আমরা ভারত বা চীন থেকে বিনিয়োগ আনতে পারছি কি না, বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে পারছি কি না। কাউকেই আমরা বাদ দিতে পারব না। আমাদের তিন পাশে ভারত। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও রয়েছে বহুমুখী সম্পর্ক। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ আছে। বিরোধ আছে মিয়ানমারের সঙ্গে। মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে চীন সহায়তা করেছে। একটি চীনা কোম্পানির জাহাজ সেখানে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। বাংলাদেশের আপত্তির কারণে তারা বন্ধ রেখেছে। অর্থনৈতিক কারণেই আমাদের মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। সেখানে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। ভারত ও চীন তা কাজে লাগাতে পারলে আমরা কেন পারব না। এ ব্যাপারে সরকারকে বাস্তববাদী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের নবায়ন প্রয়োজন। মিয়ানমারে গণতন্ত্র আসুক, তা আমরা চাই। কিন্তু গণতন্ত্র না এলে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। একবিংশ শতকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদর্শের চেয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
প্রথম আলো গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীন সহয়োগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এতে কি তাদের পূর্বমুখী বাণিজ্য যোগাযোগ বাড়বে?
আশফাকুর রহমান চীন প্রতিটি বিষয় বড় ক্যানভাসে দেখে। তারা মনে করে, বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর থাকলে পূর্বাঞ্চলের পণ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা হবে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারেও তারা এ ধরনের একটি গভীর সমুদ্রবন্দরে সহায়তা করেছিল। আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর করার উদ্দেশ্য তো শুধু আমাদের পণ্য খালাস করা নয়, এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দরই যথেষ্ট। আমরা চাই, এ বন্দর দিয়ে চীন, ভারত ও মিয়ানমারে প্রচুর পণ্য পরিবহন করা হবে। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে আমরা এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে পারব। সে জন্যই হয়তো চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ যেমন ইউনান, সিচুয়ানের সঙ্গে সমুদ্রে যাওয়ার কোনো পথ নেই। পূর্বাঞ্চলে যেতে তিন হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। আমাদের চট্টগ্রাম থেকে দূরত্ব অর্ধেক। তা ছাড়া ওই সব বন্দরে উচ্চ হারে শুল্ক গুনতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে কম ভাড়ায় পণ্য খালাস করতে পারবে। এ ছাড়া আমরা চট্টগ্রাম থেকে চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে তেলের পাইপলাইনও নির্মাণ করতে পারি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা ট্যাংকারগুলো চট্টগ্রামে নোঙর করবে। এখান থেকে পাইপলাইনে যাবে। তাতে চীনের কাছে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব বাড়বে।
প্রথম আলো বাংলাদেশ বরাবর এক চীন নীতি অনুসরণ করে আসছিল। কিন্তু বিএনপির আমলে ঢাকায় তাইওয়ানের বাণিজ্যিক মিশন খোলা নিয়ে বেইজিং আপত্তি জানিয়েছিল।
আশফাকুর রহমান বাংলাদেশ ও চীনের সুসম্পর্ক নষ্ট করতে এই ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ও তাইওয়ানের কিছু লোক এ কাজটি করেছিলেন। চীনও কিন্তু তাইওয়ানকে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়। সেখানে বহু তাইওয়ানি কোম্পানি আছে। তবে তাদের শর্ত হলো, রাজনৈতিক বিষয়ে কার্যক্রম চালানো যাবে না। আমাদের প্রথম বলা হয়েছিল, এটি বাণিজ্যিক অফিস। কিন্তু তাইওয়ানিরা চীনা ভাষায় ফলকে মিশন বলে প্রচার চালিয়েছিল। এতে চীন ক্ষুব্ধ হয়। এ জন্য আমি কোনো সরকারকে দোষ দেব না। কিছু ব্যক্তি এ কাজটি করেছিলেন। আমি তখন চীনে রাষ্ট্রদূত। আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।
প্রথম আলো বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় চীনের ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আশফাকুর রহমান আমাদের প্রতিরক্ষা আত্মরক্ষামূলক। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো দেশ নয়, আমাদের হুমকি হলো পরিবেশ, খাদ্য ও জঙ্গিবাদ। ভারত ও চীন আমাদের বন্ধুদেশ। আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তাদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছি। তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমাদের এ সহযোগিতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। অন্য দেশেও আমাদের সেনারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, চীনের সেনাবাহিনী ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম বদলে যাচ্ছে। আগে যেখানে ৩৫ লাখ সেনা ছিল, তারা সেটি ২০ লাখে নিয়ে এসেছে। তারা চৌকস ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তুলছে। আমাদেরও সেটি করতে হবে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজি ও ট্যাকটিকসই প্রধান।
প্রথম আলো পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক আছে।
আশফাকুর রহমান আমি মনে করি, এটি খুব ভালো। যত নানামুখী বিতর্ক হবে, জনগণ জানতে পারবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কী? বলা হয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়। এটি পুরোনো ধারণা। বন্ধুত্ব হতে হবে জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে। আমরা তো ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছি না। কে ঠিক করছেন পররাষ্ট্রনীতি? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, না প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়? আজ ব্রাজিলে আমরা দূতাবাস খুলতে যাচ্ছি। আগেও ছিল। মাঝখানে বন্ধ করা হলো কেন? পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করবেন জনপ্রতিনিধিরা। অতএব, আমাদের জাতীয় সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হতে হবে। আমার প্রস্তাব হলো, অন্তত বছরে একবার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সংসদে বিতর্ক হোক। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হতে হবে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
প্রথম আলো চীনা ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এটি কি রুটিন সফর, না বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ?
আশফাকুর রহমান শি জিনপিং চীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সে দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা পলিটব্যুরোর সদস্য। ২০০৮ সালের মার্চ থেকে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বেইজিংয়ে সফল গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের কৃতিত্বও তাঁর। একই সঙ্গে তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি স্কুলের অধ্যক্ষ। কূটনৈতিক মহল মনে করে, শি জিনপিং চীনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। চীনা রীতি অনুযায়ী পরবর্তী প্রধান নেতা বন্ধুদেশগুলোতে ওরিয়েন্টেশন বা পরিচিতিমূলক সফর করে থাকেন। সেদিক থেকে তাঁর এই সফর নিছক রুটিনমাফিক নয়, গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে গিয়েছিলেন। তিনি যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সব প্রতিবেশী দেশের সহায়তা চেয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কিছুটা বিতর্কও হচ্ছে।
আশফাকুর রহমান আন্তরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ বা কানেকটিভিটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব যেমন আছে, তেমনি এর রাজনৈতিক বিবেচনাও অগ্রাহ্য করা যায় না। সে কারণে এটি স্পর্শকাতরও। কানেকটিভিটির প্রথম শর্ত হলো অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেতুবন্ধ হিসেবে আমরা কাজ করতে পারি। কুনমিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের দুটি উপায় আছে। একটি হলো প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে। সে ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আরেকটি চট্টগ্রাম থেকে মিয়ানমার হয়ে। সেখানে মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে রেল যোগাযোগ করাও কঠিন। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সে সুবিধা নেই। কুনমিং থেকে রেঙ্গুন পর্যন্ত যে রেললাইন আছে, তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে।
প্রথম আলো বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য-ঘাটতি রয়েছে। এ বাণিজ্য-বৈষম্য কমিয়ে আনার উপায় কী?
আশফাকুর রহমান বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন হয়। এর মধ্যে আমরা চীনে রপ্তানি করি ১০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে চীন রপ্তানি করে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের। বিশাল এই বাণিজ্য-ঘাটতি মোকাবিলার একটি উপায় হলো চীনা বিনিয়োগ বাড়ানো। চীনা অর্থায়নে সে দেশটিতে চাহিদা আছে এমন পণ্যের শিল্পকারখানা এখানে স্থাপন করা যায়। এটি তৈরি পোশাকশিল্প হতে পারে। চীনে শ্রম মজুরি বেড়ে যাচ্ছে। তুলনায় আমাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা অনেক কম। এসব পণ্য আমরা ইউরোপেও রপ্তানি করতে পারব।
দ্বিতীয়ত, চীনে চাহিদা আছে এমন পণ্যের বাজার খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের কাছাকাছি চীনা প্রদেশ ইউনান, সিচুয়ান, তিব্বতে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পাঠাতে হবে। চীনারা কাঁকড়া খুব পছন্দ করে। বাংলাদেশে প্রচুর কাঁকড়া হয় এবং তার মানও ভালো। আমরা এখানে কাঁকড়ার খামার করে চীনে রপ্তানি করতে পারি। এ ছাড়া আমরা চীনের পশ্চিমাঞ্চলে ওষুধ রপ্তানি করতে পারি। এ জন্য চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। এখন সেখানে বেশ কিছু বিদেশি কারখানা আছে, কিছু ওষুধ আসে পূর্বাঞ্চল থেকে। আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমি রাষ্ট্রদূত থাকাকালে কুনমিংয়ে ইপিবির মাধ্যমে নিটওয়্যারের একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলাম। আমরা প্রতিটি গেঞ্জি ৪০ আরএমবিতে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০০ টাকা) বিক্রি করেছিলাম। স্থানীয় গেঞ্জি বিক্রি হতো ৮০ আরএমবিতে। আমাদের স্টলে ক্রেতাদের ভিড় ঠেকাতে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল। অর্থাৎ চীনে আমাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।
প্রথম আলো আপনি চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অভিজ্ঞতার আলোকে জানতে চাই, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়?
আশফাকুর রহমান সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তারা আইটিতে আমাদের সহায়তা করতে পারে। ভারতের সঙ্গে তারা সফটওয়্যার ডেভেলপ করছে। বাংলাদেশও সেই সুযোগ নিতে পারে। আরেকটি সম্পর্ক হলো সাংস্কৃতিক। চীনে তো একটি সংস্কৃতি নয়। একেক প্রদেশে একেক রকম সংস্কৃতি। আমরা প্রাদেশিক পর্যায়ে সাংস্কৃতিক বিনিময় করতে পারি। ইউনানে যে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের আদিবাসী সংস্কৃতির মিল আছে।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন চীনা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতেও পড়ানো হচ্ছে। হার্ভার্ড ও ইয়েলের সঙ্গে ওদের ক্রেডিট ট্রান্সফারের ব্যবস্থা আছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগটিও নিতে পারে। আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কিন্তু অনেক চৌকস ও প্রতিভাবান। আমরা তাদের কাজে লাগাতে পারি। পর্যটনেও বিশাল সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছর তিন কোটি চীনা নাগরিক বিদেশে ঘুরতে যায়। এর মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশকেও যদি আমরা বাংলাদেশে টানতে পারি, প্রচুর বিদেশি মুদ্রা আয় হবে।
প্রথম আলো চীন ও ভারত বাংলাদেশের দুই বড় প্রতিবেশী। বাংলাদেশ কীভাবে তাদের থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারে?
আশফাকুর রহমান ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এটি আমাদের জন্য বিরাট সুবিধা। এর সুফল নিতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্ব ও পশ্চিমের গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। চীনের পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পণ্যবাহী জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করবে এবং সেখান থেকে পণ্য সড়কপথে গন্তব্যে যাবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, সেবার মান বাড়াতে হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর হতে পারে।
প্রথম আলো সরকারের দাবি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। আবার বিরোধী দল বলছে, সরকারের নীতি একপেশে। আপনার অভিমত কী?
আশফাকুর রহমান সম্পর্কের ভারসাম্য কথাটি আপেক্ষিক। দেখতে হবে, বাংলাদেশ এর মধ্য দিয়ে কতটা লাভবান হচ্ছে। আমরা ভারত বা চীন থেকে বিনিয়োগ আনতে পারছি কি না, বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে পারছি কি না। কাউকেই আমরা বাদ দিতে পারব না। আমাদের তিন পাশে ভারত। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও রয়েছে বহুমুখী সম্পর্ক। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ আছে। বিরোধ আছে মিয়ানমারের সঙ্গে। মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে চীন সহায়তা করেছে। একটি চীনা কোম্পানির জাহাজ সেখানে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। বাংলাদেশের আপত্তির কারণে তারা বন্ধ রেখেছে। অর্থনৈতিক কারণেই আমাদের মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। সেখানে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। ভারত ও চীন তা কাজে লাগাতে পারলে আমরা কেন পারব না। এ ব্যাপারে সরকারকে বাস্তববাদী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের নবায়ন প্রয়োজন। মিয়ানমারে গণতন্ত্র আসুক, তা আমরা চাই। কিন্তু গণতন্ত্র না এলে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। একবিংশ শতকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদর্শের চেয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
প্রথম আলো গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীন সহয়োগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এতে কি তাদের পূর্বমুখী বাণিজ্য যোগাযোগ বাড়বে?
আশফাকুর রহমান চীন প্রতিটি বিষয় বড় ক্যানভাসে দেখে। তারা মনে করে, বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর থাকলে পূর্বাঞ্চলের পণ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা হবে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারেও তারা এ ধরনের একটি গভীর সমুদ্রবন্দরে সহায়তা করেছিল। আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর করার উদ্দেশ্য তো শুধু আমাদের পণ্য খালাস করা নয়, এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দরই যথেষ্ট। আমরা চাই, এ বন্দর দিয়ে চীন, ভারত ও মিয়ানমারে প্রচুর পণ্য পরিবহন করা হবে। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে আমরা এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে পারব। সে জন্যই হয়তো চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ যেমন ইউনান, সিচুয়ানের সঙ্গে সমুদ্রে যাওয়ার কোনো পথ নেই। পূর্বাঞ্চলে যেতে তিন হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। আমাদের চট্টগ্রাম থেকে দূরত্ব অর্ধেক। তা ছাড়া ওই সব বন্দরে উচ্চ হারে শুল্ক গুনতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে কম ভাড়ায় পণ্য খালাস করতে পারবে। এ ছাড়া আমরা চট্টগ্রাম থেকে চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে তেলের পাইপলাইনও নির্মাণ করতে পারি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা ট্যাংকারগুলো চট্টগ্রামে নোঙর করবে। এখান থেকে পাইপলাইনে যাবে। তাতে চীনের কাছে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব বাড়বে।
প্রথম আলো বাংলাদেশ বরাবর এক চীন নীতি অনুসরণ করে আসছিল। কিন্তু বিএনপির আমলে ঢাকায় তাইওয়ানের বাণিজ্যিক মিশন খোলা নিয়ে বেইজিং আপত্তি জানিয়েছিল।
আশফাকুর রহমান বাংলাদেশ ও চীনের সুসম্পর্ক নষ্ট করতে এই ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ও তাইওয়ানের কিছু লোক এ কাজটি করেছিলেন। চীনও কিন্তু তাইওয়ানকে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়। সেখানে বহু তাইওয়ানি কোম্পানি আছে। তবে তাদের শর্ত হলো, রাজনৈতিক বিষয়ে কার্যক্রম চালানো যাবে না। আমাদের প্রথম বলা হয়েছিল, এটি বাণিজ্যিক অফিস। কিন্তু তাইওয়ানিরা চীনা ভাষায় ফলকে মিশন বলে প্রচার চালিয়েছিল। এতে চীন ক্ষুব্ধ হয়। এ জন্য আমি কোনো সরকারকে দোষ দেব না। কিছু ব্যক্তি এ কাজটি করেছিলেন। আমি তখন চীনে রাষ্ট্রদূত। আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।
প্রথম আলো বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় চীনের ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আশফাকুর রহমান আমাদের প্রতিরক্ষা আত্মরক্ষামূলক। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো দেশ নয়, আমাদের হুমকি হলো পরিবেশ, খাদ্য ও জঙ্গিবাদ। ভারত ও চীন আমাদের বন্ধুদেশ। আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তাদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছি। তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমাদের এ সহযোগিতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। অন্য দেশেও আমাদের সেনারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, চীনের সেনাবাহিনী ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম বদলে যাচ্ছে। আগে যেখানে ৩৫ লাখ সেনা ছিল, তারা সেটি ২০ লাখে নিয়ে এসেছে। তারা চৌকস ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তুলছে। আমাদেরও সেটি করতে হবে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজি ও ট্যাকটিকসই প্রধান।
প্রথম আলো পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক আছে।
আশফাকুর রহমান আমি মনে করি, এটি খুব ভালো। যত নানামুখী বিতর্ক হবে, জনগণ জানতে পারবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কী? বলা হয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়। এটি পুরোনো ধারণা। বন্ধুত্ব হতে হবে জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে। আমরা তো ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছি না। কে ঠিক করছেন পররাষ্ট্রনীতি? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, না প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়? আজ ব্রাজিলে আমরা দূতাবাস খুলতে যাচ্ছি। আগেও ছিল। মাঝখানে বন্ধ করা হলো কেন? পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করবেন জনপ্রতিনিধিরা। অতএব, আমাদের জাতীয় সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হতে হবে। আমার প্রস্তাব হলো, অন্তত বছরে একবার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সংসদে বিতর্ক হোক। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হতে হবে।
No comments