শুধু ভারতীয় সিনেমাই ১০০ পেরোল? by ইমরুল কায়েস

বিশ্বজুড়ে সিনেমার শতবর্ষ পালিত হয়েছে ১৯৯৪ সালে। ১৮৯৪ সালে অটোমার আনচুটজ চলমান ছবি প্রদর্শন যন্ত্র ইলেকট্রোটাসাইস্কোপ আবিষ্কার করেছিলেন বার্লিনে বসে, একই বছর আগস্তে ও লুই_ এই দুই লুমিয়ের ভাই ফ্রান্সে বসে আবিষ্কার করেন একই ধরনের যন্ত্র সিনেমাটোগ্রাফ।


এ ঘটনা দুটিই চলচ্চিত্রের শুরু হিসেবে চিহ্নিত এবং সে অনুসারে ১৯৯৪ সালেই চলচ্চিত্রের শতবর্ষ পালিত হয়েছে বিশ্বজুড়ে। শতবর্ষের রেশ আমাদের এখানেও পেঁৗছেছিল কিছুটা। বলাবাহুল্য, সিনেমার প্রযুক্তি একটু দেরিতে পেঁৗছেছিল আমাদের দেশ মানে তৎকালীন ভারতবর্ষে। তবে সিনেমা পেঁৗছাতে সময় লাগেনি। ১৮৯৬ সালেই বোম্বের ওয়াটসন হোটেলে লুমিয়ের ভাইদের এজেন্ট আয়োজন করেছিলেন মার্ভেল অব দ্য সেঞ্চুরি সিনেমার প্রদর্শনী। ১৮৯৯ সালেই ক্যামেরা চলে এসেছিল। ১৯০২ সালে কলকাতা ময়দানে প্রথম বায়োস্কোপ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন জামশেদজি ফ্রামজি মাডান। ১৯০৭ সালেই প্রথম সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতায়। প্রতিষ্ঠাতা পার্সি ভদ্রলোক জেএফ মাডানই। জামশেদজি ফ্রামজি মাডান_ সংক্ষেপে জেএফ মাডান ভারতীয় সিনেমা বিকাশে যে অবদান রেখেছিলেন সে জন্য তাকে সিনেমার অন্যতম স্থপতির সম্মান দেওয়া হয়। তবে সিনেমা নির্মাণের কৃতিত্ব ধুন্দিরাজ গোবিন্দ ফালকের, তিনি দাদাসাহেব ফালকে নামেই পরিচিত। চলচ্চিত্রে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কারটি তার নামাঙ্কিত। ১৯১৩ সালে তিনি তৈরি করেছিলেন প্রথম ভারতীয় সিনেমা রাজা হরিশচন্দ্র। প্রায় একই সময় সিনেমায় সিদ্ধির দিকে এগোচ্ছিলেন হীরালাল সেন। কলকাতার অধিবাসী হীরালাল জন্মেছিলেন মানিকগঞ্জে। বিড়ম্বিত ভাগ্যের কারণে তিনি সিনেমা প্রস্তুত করে উঠতে পারেননি। কিন্তু কর্মোদ্যোগের দিক থেকে হীরালাল অনেকটা এগিয়েই ছিলেন। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে জেএফ মাডান, দাদাসাহেব ফালকে ও হীরালাল সেনকে স্থপতির সম্মান দেওয়া হয়। উদযাপনের সূত্র অবশ্যই রাজা হরিশচন্দ্র। ১৯১৩ থেকে ২০১৩_ ভারতীয় সিনেমা পুরো একশ' বছর পার করে ফেলল। এ নিয়ে ভারতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন আয়োজনের খবর এখন পর্যন্ত অন্তত আমাদের কানে আসেনি। আমাদের এখানে কথায় কথায় ভারতীয় ঐতিহ্যের অংশীদারিত্বের কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে দরকারি অনেক কিছুতেই তার ছাপ থাকে না। ১৯১৩ সালে বোম্বে-কলকাতা তো আমাদেরই দেশ ছিল। সে দেশের কীর্তির ওপর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অধিকার থাকার কথা। যদি দাদাসাহেব ফালকের ওপর অধিকার আরোপ একটু জবরদস্তি হয়ে যায়, তো হীরালাল সেনের ওপর নিশ্চয়ই অধিকার আরোপ করার বেলায় তা হবে না। আমাদের দেশের লোক তিনি। সিনেমার শুরুতে তার অবদান ছিল। বলতে গেলে ভারতীয় সিনেমার সূচনায় বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের বহু মানুষের অবদান ছিল। তাহলে সিনেমার শতবর্ষ বাংলাদেশে উদযাপন করতে বাধা কোথায়? সবচেয়ে বড় কথা, ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে বড় অর্জন অর্থাৎ পরিপকস্ফতার পেছনে যাদের অবদান সেই সত্যজিৎ রায় ও ঋতি্বক ঘটকের বাংলাদেশ কানেকশন তো সর্বজনবিদিত। তাদের প্রভাব স্বাধীন বাংলাদেশের সিনেমার ওপর কমবেশি পড়েছে। তাহলে সংকোচের উৎসটা কোথায়? ইতিহাসের কথা যদি বাদও দেই। বর্তমানের সিনেমার দিকে তাকালে আমরা কিন্তু স্পষ্ট বুঝে যাই এ সিনেমা মজ্জায় ও মাংসে ভারতীয় ঐতিহ্যেরই ছাপ বহন করে চলেছে। সে ছাপ মোচনের কোনো চেষ্টা সাম্প্রতিককালে হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। অদূর ভবিষ্যতেও হবে কি-না সন্দেহ। তাহলে বৃথা কেন দেশভাগ ও স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের সিনেমার ইতিহাস শুরু হবে? বস্তুত, ১৯১৩ বাংলাদেশের সিনেমারও শতবর্ষ। সেভাবে পালন করলে কোনো দোষ ঘটবে বলে মনে হয় না।
 

No comments

Powered by Blogger.