কর্মক্ষেত্রেও সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীন-দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

কোথাও নিরাপত্তা নেই সাংবাদিকদের। নিজের বাসগৃহ, সেখানেও ঘাতকের হানা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজপথে পুলিশের বেধড়ক পিটুনির শিকার হতে হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে সন্ত্রাসী হামলা। কোথায় যাবে সাংবাদিক সমাজ? সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতা। সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিয়ে কারো কোনো ভাবনা আছে বলে মনেই হয় না।


নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব যাদের, সেই সংস্থার কর্তারাই যখন সাংবাদিক নির্যাতনে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ, তখন সাংবাদিকের আর কোনো আশ্রয় নেই- এটাই যেন এখন স্পষ্ট হয়ে গেল। যে পেশাটি অন্য দশটি চাকরির মতো নয়, নিতে হয় ব্রত হিসেবে, সেই পেশায় থেকে নিরাপত্তা চেয়ে কোন দরোজায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে সাংবাদিকদের?
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর অনেক দিন চলে গেল, এখনো খুনিদের খুঁজে বের করা যায়নি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব রহস্য ভেদ করার কথা যিনি বলেছিলেন, তিনিই আবার জানিয়েছেন, কবে এ রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে সেটা কেউ বলতে পারে না। 'প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি' হচ্ছে বলে যিনি আশার বাণী শুনিয়েছিলেন, তিনিও এখন কুলুপ এঁটেছেন মুখে। মহানগর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের কর্তারা আদালতে গিয়ে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে আসার পরও যার যার পদে গদিনসীন। অসহায় সাংবাদিক সমাজ। অসংগতি তুলে ধরা যাঁদের কাজ, তাঁদের নিরাপত্তা নেই বেডরুমে, রাস্তায়। এমনকি কর্মক্ষেত্রও এখন সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত। এমন অসহায় একটি সময়ের মুখোমুখি কি বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজকে আর কখনো হতে হয়েছে? দেশের মানুষের মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার যে সাংবাদিক সমাজ, তাঁদের অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত, রক্তাক্ত।
সোমবার রাতে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম অফিসে। সেখানে কর্মরত সাংবাদিকরা গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অতীতের রেকর্ড বজায় রেখে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গেছেন। ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা নিরাপদ দূরত্বে। সুতরাং ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম অফিসে সন্ত্রাসী হামলার পর সাংবাদিকরা আবার পথে নেমেছেন। বিক্ষোভ করেছেন। নিরাপত্তা চেয়েছেন। পথে নামা ছাড়া কী আর করার আছে সাংবাদিকদের? সময়সীমার ঝুঁকি না নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, শিগগিরই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। 'এ ধরনের ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ধরতে ডিএমপির শতভাগ সফলতা রয়েছে'- পুলিশের উপকমিশনারের এ উক্তিও আশাবাদী করে।
কিন্তু সন্দেহ যায় না। সাগর-রুনির হত্যাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই দেশে রাস্তায় ফেলে সাংবাদিক পেটায় পুলিশ। তাহলে কি নিরাপত্তাহীনতাই সাংবাদিকের নিয়তি।
« পূর্ববর্তী সংবাদ
       

No comments

Powered by Blogger.