চারদিক-এক সোনা ফলের দেশ by মৃত্যুঞ্জয় রায়
আষাঢ় এসেছে। ঘন কালো মেঘ ছেয়ে ফেলল নরসিংদীর আকাশ। আমরা চলেছি কাঁঠালের দেশে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে নারায়ণপুর বাজারের মোড় ঘুরতেই রাস্তার দুই পাশে দেখতে পেলাম নানা কিসিমের কাঁঠালগাছ। ছোট-বড় নানা রকম কাঁঠাল ঝুলছে অগুনতি গাছে গাছে। একটি-দুটি নয়, শত কিংবা হাজার বা তারও বেশি।
কোনো কোনো গাছে ঝুলছে শতাধিক কাঁঠাল। সোনা রঙের এসব কাঁঠাল দেখে মনে হচ্ছে, সত্যি এ যেন এক সোনা ফলের দেশ। জাতীয় ফল কাঁঠালের তীর্থভূমি। খানিকটা যেতেই অবশ্য ঘোর কাটল। আমরা চলেছি বেলাব উপজেলার দিকে। এই উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যে কাঁঠাল হয়, এত তার কাছে নস্যি। মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাই ছুটলাম সেই কাঁঠালের দেশে।
সেখানে পৌঁছাতেই চোখ ছানাবড়া। রাস্তার ধারে, ঘরের পেছনে, বাগানে, উঠানে—কোথায় নেই কাঁঠালের গাছ। আর তার মধ্যে কিছু কিছু গাছে এত বড় বড় কাঁঠাল ধরেছে যে দেখে ভাবতেই হয়, একটা সরু বোঁটায় এই কাঁঠালটা ঝুলছে কেমনে!। ওটার ওজন কত হবে? জিজ্ঞেস করলাম কাঁঠালের দেশের গাইড, সঙ্গে থাকা বেলাব কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাতকে। তিনি বললেন, ‘৬০-৭০ কেজি তো হবেই।’ ৬০-৭০ কেজি? একটা কাঁঠালের ওজন? ‘এত মামুলি ব্যাপার। ৪০-৫০ কেজি ওজনের কাঁঠাল তো যেকোনো সময়ই দেখতে পাবেন এখানে। তবে আমার জীবনে আমি ১০০ কেজি ওজনের কাঁঠালও দেখছি এই এলাকায়। গত বছরই তো জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে ৮৪ কেজি ওজনের একটা কাঁঠাল পাঠিয়েছিলাম এখান থেকে।’ মনে পড়ছে, এ রকম একটা ঢাউস কাঁঠাল সেখানে দেখেছিলাম বৈকি। অবশ্য সেটা দেখে বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গে তখন কেউ কেউ মন্তব্যও করেছিল ‘অখাদ্য’ বলে। তবে এ কথা সত্য যে, জাতীয় ফল কাঁঠাল নিয়ে আমরা অহংকার করতেই পারি। কেননা, এটাই বিশ্বের বৃহত্তম ভক্ষণযোগ্য ফল!
দেশের সব জায়গাতেই কমবেশি কাঁঠালের গাছ আছে, সুন্দরবন ছাড়া। দেশে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপন্ন হয় ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়ের লালচে মাটিতে। উৎকৃষ্ট মানের প্রচুর কাঁঠাল উৎপাদিত হয় গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলার কিছু অংশে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা, নরসিংদীর বেলাব উপজেলা, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, শ্রীপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমি কাঁঠালগাছের আওতায় রয়েছে। তবে তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল হয়। তেমনি নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আমলাব, চর আমলাব, চর বেলাব, পাহাড় বেলাব, চর মরজাল প্রভৃতি গ্রামে প্রচুর কাঁঠালের গাছ আছে। সবচেয়ে বেশি আছে আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর গ্রামে।
আমলাবে এত কাঁঠাল দেখে শখ হলো দু-চারটা কিনে ঢাকায় নিয়ে যাই। নিশ্চয়ই এখানে ভীষণ সস্তা। এখানকার ভালো আর বড় কাঁঠালগুলো সব চলে যায় বাইরে, সিলেটে। সেখানে তিন গুণ দামে বিক্রি হয়। আলাপ করে জানা গেল, যাঁদের অনেক কাঁঠালগাছ আছে তাঁরা ফল ধরার পর ব্যাপারিদের কাছে বাগান ধরে বিক্রি করে দেন। কেউ কেউ নিজেরা খাওয়ার জন্য দু-একটা গাছ রেখে বাকি সব বেচে দেন। আয় ও দাম নির্ভর করে কাঁঠাল ধরার ওপর। বেশি ধরলে একটি গাছের কাঁঠাল পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। শুধু শ্রীপুর উপজেলায়ই প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টাকার কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। স্থানীয় জৈনা ও মাওনা বাজারে এর অধিকাংশ বিক্রি হয়।
কাঁঠালের দেশে কাঁঠাল আছে কত রকম? কাঁঠাল তো কাঁঠালই। তার আবার রকম কী? কিন্তু একটা গাছে দেখলাম, ছোট ছোট কুমড়োর মতো অসংখ্য গোল্লা গোল্লা কাঁঠাল ধরে আছে গাছের সারা গা আর ডালপালা ভরে। এক গাছে এত কাঁঠাল! কতগুলো হবে? গোনা কঠিন। গাছপ্রতি প্রায় এক হাজার কাঁঠাল ধরে। তবে আরও এক নামের জাত পাওয়া গেল ‘এক মণি কাঁঠাল’। এ ছাড়া দেখা হলো বিচিত্র আকারের সব কাঁঠালের সঙ্গে। গোল, ডিমাকার, লম্বা, বেলুনাকার, বোতলাকার, কলসি আকার, ঘটাকৃতি ইত্যাদি। তবে রং আর আকার যা-ই হোক না কেন, আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর গ্রামের কাঁঠালচাষি শামসুল হক জানালেন, কাঁঠাল মূলত তিন জাতের—রসা বা গিলা, যেগুলোর কোষ নরম। এগুলো আগে পাকে আর আকারেও ছোট। দোরসা বা আধা গিলা, যার কোয়া নরম বা শক্ত কোনোটাই নয়। মাঝারি আকারের একটু বড় কাঁঠাল। এই জাতের কাঁঠাল পাকে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে। আর খাজা বা চাউলা কাঁঠালের কোয়া শক্ত। এগুলোর কোয়া কচকচ করে আর মিষ্টিও কম। কাঁঠালের গায়ের কাঁটা ছড়ানো। পাকে দেরিতে। সেসব কাঁঠাল পান্তার সঙ্গে খেতে জব্বর লাগে।
সেখানে পৌঁছাতেই চোখ ছানাবড়া। রাস্তার ধারে, ঘরের পেছনে, বাগানে, উঠানে—কোথায় নেই কাঁঠালের গাছ। আর তার মধ্যে কিছু কিছু গাছে এত বড় বড় কাঁঠাল ধরেছে যে দেখে ভাবতেই হয়, একটা সরু বোঁটায় এই কাঁঠালটা ঝুলছে কেমনে!। ওটার ওজন কত হবে? জিজ্ঞেস করলাম কাঁঠালের দেশের গাইড, সঙ্গে থাকা বেলাব কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাতকে। তিনি বললেন, ‘৬০-৭০ কেজি তো হবেই।’ ৬০-৭০ কেজি? একটা কাঁঠালের ওজন? ‘এত মামুলি ব্যাপার। ৪০-৫০ কেজি ওজনের কাঁঠাল তো যেকোনো সময়ই দেখতে পাবেন এখানে। তবে আমার জীবনে আমি ১০০ কেজি ওজনের কাঁঠালও দেখছি এই এলাকায়। গত বছরই তো জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে ৮৪ কেজি ওজনের একটা কাঁঠাল পাঠিয়েছিলাম এখান থেকে।’ মনে পড়ছে, এ রকম একটা ঢাউস কাঁঠাল সেখানে দেখেছিলাম বৈকি। অবশ্য সেটা দেখে বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গে তখন কেউ কেউ মন্তব্যও করেছিল ‘অখাদ্য’ বলে। তবে এ কথা সত্য যে, জাতীয় ফল কাঁঠাল নিয়ে আমরা অহংকার করতেই পারি। কেননা, এটাই বিশ্বের বৃহত্তম ভক্ষণযোগ্য ফল!
দেশের সব জায়গাতেই কমবেশি কাঁঠালের গাছ আছে, সুন্দরবন ছাড়া। দেশে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপন্ন হয় ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়ের লালচে মাটিতে। উৎকৃষ্ট মানের প্রচুর কাঁঠাল উৎপাদিত হয় গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলার কিছু অংশে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা, নরসিংদীর বেলাব উপজেলা, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, শ্রীপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমি কাঁঠালগাছের আওতায় রয়েছে। তবে তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল হয়। তেমনি নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আমলাব, চর আমলাব, চর বেলাব, পাহাড় বেলাব, চর মরজাল প্রভৃতি গ্রামে প্রচুর কাঁঠালের গাছ আছে। সবচেয়ে বেশি আছে আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর গ্রামে।
আমলাবে এত কাঁঠাল দেখে শখ হলো দু-চারটা কিনে ঢাকায় নিয়ে যাই। নিশ্চয়ই এখানে ভীষণ সস্তা। এখানকার ভালো আর বড় কাঁঠালগুলো সব চলে যায় বাইরে, সিলেটে। সেখানে তিন গুণ দামে বিক্রি হয়। আলাপ করে জানা গেল, যাঁদের অনেক কাঁঠালগাছ আছে তাঁরা ফল ধরার পর ব্যাপারিদের কাছে বাগান ধরে বিক্রি করে দেন। কেউ কেউ নিজেরা খাওয়ার জন্য দু-একটা গাছ রেখে বাকি সব বেচে দেন। আয় ও দাম নির্ভর করে কাঁঠাল ধরার ওপর। বেশি ধরলে একটি গাছের কাঁঠাল পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। শুধু শ্রীপুর উপজেলায়ই প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টাকার কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। স্থানীয় জৈনা ও মাওনা বাজারে এর অধিকাংশ বিক্রি হয়।
কাঁঠালের দেশে কাঁঠাল আছে কত রকম? কাঁঠাল তো কাঁঠালই। তার আবার রকম কী? কিন্তু একটা গাছে দেখলাম, ছোট ছোট কুমড়োর মতো অসংখ্য গোল্লা গোল্লা কাঁঠাল ধরে আছে গাছের সারা গা আর ডালপালা ভরে। এক গাছে এত কাঁঠাল! কতগুলো হবে? গোনা কঠিন। গাছপ্রতি প্রায় এক হাজার কাঁঠাল ধরে। তবে আরও এক নামের জাত পাওয়া গেল ‘এক মণি কাঁঠাল’। এ ছাড়া দেখা হলো বিচিত্র আকারের সব কাঁঠালের সঙ্গে। গোল, ডিমাকার, লম্বা, বেলুনাকার, বোতলাকার, কলসি আকার, ঘটাকৃতি ইত্যাদি। তবে রং আর আকার যা-ই হোক না কেন, আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর গ্রামের কাঁঠালচাষি শামসুল হক জানালেন, কাঁঠাল মূলত তিন জাতের—রসা বা গিলা, যেগুলোর কোষ নরম। এগুলো আগে পাকে আর আকারেও ছোট। দোরসা বা আধা গিলা, যার কোয়া নরম বা শক্ত কোনোটাই নয়। মাঝারি আকারের একটু বড় কাঁঠাল। এই জাতের কাঁঠাল পাকে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে। আর খাজা বা চাউলা কাঁঠালের কোয়া শক্ত। এগুলোর কোয়া কচকচ করে আর মিষ্টিও কম। কাঁঠালের গায়ের কাঁটা ছড়ানো। পাকে দেরিতে। সেসব কাঁঠাল পান্তার সঙ্গে খেতে জব্বর লাগে।
No comments