স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত নয়তো

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী বিদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মান জানাবে বাংলাদেশ। আমাদের কৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস হিসেবে গণ্য করা যায় এ উদ্যোগকে। সুধীমহলের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর এ দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় ছিল না দীর্ঘদিন।


যে কারণে বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানকে সম্মান জানানো হয়ে ওঠেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে তারা বিদেশিদের সম্মাননা জানাবে। ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী বিদেশি ব্যক্তিদের অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। তার পরও বলতে হবে, স্বাধীনতা লাভের ৪০ বছর হলেও এ উদ্যোগটি গ্রহণ করে জাতি হিসেবে আমাদের দায় মুক্তি হবে।
এ কাজটি আরো আগেই সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কাজটি বারবারই পিছিয়েছে। তবু আশার কথা, সরকার বিষয়টি নিয়ে আন্তরিক এবং গুরুত্বসহ বিবেচনা করছে। কিন্তু কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট (আইসিজে) একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে। এমন হলে যে উদ্দেশ্যে এমন বড়মাপের একটি কাজ করা হচ্ছে সে উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারীদের নিয়ে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান কটাক্ষ করে থাকে কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, সে ব্যাপারে যদি অস্বাভাবিক উচ্চারণ করে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের কোনো কর্মকাণ্ডে তাদের জড়িত হওয়ার সুযোগ থাকে না। বরং তাদের উপস্থিতি মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করবে।
বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর গোচরে এনেছে একটি প্রতিষ্ঠান। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সংবর্ধনাপ্রাপ্তদের তালিকা প্রণয়নকালে যদি কোনো ভুল করে থাকে, তা সংশোধন করার সময় পেরিয়ে যায়নি। বরং এখন যেহেতু বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে, তাই সহজেই তা সংশোধন করে নেওয়া যায়।
আইসিজের তথ্য থেকে আমরা স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়ে আরেকটি উদাহরণ পাই। কিন্তু এ উদাহরণটি ঠিক পাকিস্তানিদের অনুকরণে সংগঠিত হয়েছে, এটা বললেও অত্যুক্তি হবে না। খুনিদের সহযোগী কাউকে সম্মাননা জানানোর কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নতুন করে প্রণয়নকালে কোনো কোনো এলাকায় অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে বলে যে অভিযোগ করা হয়, তেমনি কোনো স্বাধীনতাবিরোধী যদি সম্মানিত হয়ে পড়ে, তাহলেও তেমনি দুঃখজনক ঘটনাই ঘটবে। তাই দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। আর সে ক্ষেত্রে সংবর্ধনার তালিকা থেকে প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রত্যাহার করাই হবে শ্রেয়।

No comments

Powered by Blogger.