পড়তে চাইলে সমাজকর্ম by সুচিত্রা সরকার
‘ভূপেন হাজারিকার “মানুষ মানুষের জন্য” গানটির ভক্ত ছিলাম শৈশব থেকেই। মানুষের জন্য কিছু করার জন্য সব সময়ই চেষ্টা করেছি। আর এ কারণে এই বিভাগে পড়তে এসেছি।’ বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আবদুর রব।
অন্যদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বায়েজীদ আমীন যোগ করেন, ‘আমি আসলে সমাজকর্মী হতে চেয়েছিলাম। আশা করছি, এই বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে সেটা করতে পারব। এখানে সমাজকর্মী হওয়ার শিক্ষাটা দেওয়া হয় একেবারে হাতে-কলমে।’
কথা হচ্ছিল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাদের জিজ্ঞাসা করি, সমাজকর্ম পড়ে মানুষের জন্য কাজ করার উৎসাহ কীভাবে পান? ‘আমরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। যেমন আমি পঙ্গু হাসপাতালে ৬০ কর্মদিবস কাজ করেছি। রোগীদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়াসহ সব ধরনের কাজ শিখেছি।’, বলেন রিয়াদ হাসান। উৎসাহের পরিমাণ এক ধাপ বাড়িয়ে পাপিয়া সুলতানা যোগ করেন, ‘এই যেমন আগামী মাসে আমরা বান্দরবান যাব। আদিবাসীদের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিকটি দেখতেই সেখানে যাচ্ছি। আমরা সেখানে এক সপ্তাহ থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ করব।’ জিজ্ঞেস করি, এ ধরনের কাজ কি সব শিক্ষাবর্ষেই করতে হয়?
‘না, শুধু সম্মান চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার আর এমএ দ্বিতীয় সেমিস্টার। এখানে আমাদের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। যেখানে পাঠানো হয় এনজিও বা জিওতে।’, বলেন অমিত।
খানিকটা অনুযোগের সুরে সম্মান সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আবু সানিফ বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ক্লাসরুম বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট রয়েছে। তবে আমাদের হলগুলো অনেক দূরে। রিকশা ভাড়াও খুব বেশি। তবু প্রতিদিন হেঁটে বা রিকশায় এখানে আসতে হয়। অথচ একটা বাস হলেই এই সমস্যা দূর হয়।’
একবাক্যে এই প্রস্তাবে সহমত জানান রিয়াদ, জলিল, শিরীন, মেজবাহ, আকরাম। মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য কাজ করার স্বপ্ন যাঁদের রয়েছে, তাঁরা জেনে নিতে পারেন এ বিষয়ে শিক্ষার সঠিক তথ্য।
শুরুর গল্প
জাতিসংঘের সুপারিশ ও সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে ১৯৫৮ সালে ‘দ্য কলেজ অব সোস্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণা ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১৯৭৩ সালে প্রথম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হয়। এখানে বর্তমানে সম্মান কোর্স (চার বছর মেয়াদি), মাস্টার্স কোর্স (এক বছর মেয়াদি) সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রাম (দুই বছর ও এক বছর মেয়াদি), এমফিল ও পিএইচডি কার্যক্রম চালু আছে। ঢাকার নিউ মার্কেটের পশ্চিমে এই ইনস্টিটিউট অবস্থিত।
কেন পড়ব?
আমাদের সমাজের চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। আবার সুযোগ ও সম্পদ থাকলেও সেগুলো সঠিক ব্যবহার না হওয়ার কারণে জনগণ হচ্ছে লাঞ্ছিত, অধিকারহারা। দক্ষ ও নিবেদিত সমাজকর্মীই পারেন জনগণের জন্য কাজ করতে। তাই এই একবিংশ শতকে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষকে উন্নত করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য সমাজকর্মী প্রয়োজন। আর এ বিষয়ে তত্ত্ব ও ব্যবহারিক শিক্ষালাভের জন্যই এ বিষয়টি পড়ানো হয়। বললেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক নুরুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনমতো শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে পারলে তারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সমষ্টিভিত্তিক সমাজকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। আর এতে জনগণের দুর্দশাও অনেকাংশে কমবে।
ভর্তির যোগ্যতা ও পদ্ধতি
সমাজকর্ম বিষয়ে সম্মান কোর্স চার বছর মেয়াদি। এ বিষয়ে পড়তে এইচএসসি পাস হতে হবে। মানবিক বিভাগের যেকোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী এ বিষয় পড়তে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এখানে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া সাধারণ মাস্টার্সের পাশাপাশি সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স চালু হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে। সম্প্রতি ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামের আবেদনপত্র গ্রহণ ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এক বছর মেয়াদি এ প্রোগ্রামের ফরম জমাদানের শেষ তারিখ ১০ জুন। আবেদনপত্রের দাম ৫০০ টাকা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আবেদন করতে পারবে।
আর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাজের সুযোগ
শিক্ষাক্রম শেষ করে কাজের ক্ষেত্র বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্সিটিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক জানান, দেশের বিভিন্ন এনজিও ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল সোস্যাল ওয়ার্কারসহ অন্যান্য পদে কাজও করা যায়। আর আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মান ও মাস্টার্সে ৬০ কর্মদিবস বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি বাধ্যতামূলক। তাই সেসব প্রতিষ্ঠানেও তাদের কাজের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
কথা হচ্ছিল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাদের জিজ্ঞাসা করি, সমাজকর্ম পড়ে মানুষের জন্য কাজ করার উৎসাহ কীভাবে পান? ‘আমরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। যেমন আমি পঙ্গু হাসপাতালে ৬০ কর্মদিবস কাজ করেছি। রোগীদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়াসহ সব ধরনের কাজ শিখেছি।’, বলেন রিয়াদ হাসান। উৎসাহের পরিমাণ এক ধাপ বাড়িয়ে পাপিয়া সুলতানা যোগ করেন, ‘এই যেমন আগামী মাসে আমরা বান্দরবান যাব। আদিবাসীদের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিকটি দেখতেই সেখানে যাচ্ছি। আমরা সেখানে এক সপ্তাহ থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ করব।’ জিজ্ঞেস করি, এ ধরনের কাজ কি সব শিক্ষাবর্ষেই করতে হয়?
‘না, শুধু সম্মান চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার আর এমএ দ্বিতীয় সেমিস্টার। এখানে আমাদের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। যেখানে পাঠানো হয় এনজিও বা জিওতে।’, বলেন অমিত।
খানিকটা অনুযোগের সুরে সম্মান সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আবু সানিফ বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ক্লাসরুম বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট রয়েছে। তবে আমাদের হলগুলো অনেক দূরে। রিকশা ভাড়াও খুব বেশি। তবু প্রতিদিন হেঁটে বা রিকশায় এখানে আসতে হয়। অথচ একটা বাস হলেই এই সমস্যা দূর হয়।’
একবাক্যে এই প্রস্তাবে সহমত জানান রিয়াদ, জলিল, শিরীন, মেজবাহ, আকরাম। মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য কাজ করার স্বপ্ন যাঁদের রয়েছে, তাঁরা জেনে নিতে পারেন এ বিষয়ে শিক্ষার সঠিক তথ্য।
শুরুর গল্প
জাতিসংঘের সুপারিশ ও সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে ১৯৫৮ সালে ‘দ্য কলেজ অব সোস্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণা ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১৯৭৩ সালে প্রথম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হয়। এখানে বর্তমানে সম্মান কোর্স (চার বছর মেয়াদি), মাস্টার্স কোর্স (এক বছর মেয়াদি) সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রাম (দুই বছর ও এক বছর মেয়াদি), এমফিল ও পিএইচডি কার্যক্রম চালু আছে। ঢাকার নিউ মার্কেটের পশ্চিমে এই ইনস্টিটিউট অবস্থিত।
কেন পড়ব?
আমাদের সমাজের চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। আবার সুযোগ ও সম্পদ থাকলেও সেগুলো সঠিক ব্যবহার না হওয়ার কারণে জনগণ হচ্ছে লাঞ্ছিত, অধিকারহারা। দক্ষ ও নিবেদিত সমাজকর্মীই পারেন জনগণের জন্য কাজ করতে। তাই এই একবিংশ শতকে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষকে উন্নত করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য সমাজকর্মী প্রয়োজন। আর এ বিষয়ে তত্ত্ব ও ব্যবহারিক শিক্ষালাভের জন্যই এ বিষয়টি পড়ানো হয়। বললেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক নুরুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনমতো শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে পারলে তারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সমষ্টিভিত্তিক সমাজকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। আর এতে জনগণের দুর্দশাও অনেকাংশে কমবে।
ভর্তির যোগ্যতা ও পদ্ধতি
সমাজকর্ম বিষয়ে সম্মান কোর্স চার বছর মেয়াদি। এ বিষয়ে পড়তে এইচএসসি পাস হতে হবে। মানবিক বিভাগের যেকোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী এ বিষয় পড়তে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এখানে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া সাধারণ মাস্টার্সের পাশাপাশি সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স চালু হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে। সম্প্রতি ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামের আবেদনপত্র গ্রহণ ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এক বছর মেয়াদি এ প্রোগ্রামের ফরম জমাদানের শেষ তারিখ ১০ জুন। আবেদনপত্রের দাম ৫০০ টাকা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আবেদন করতে পারবে।
আর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাজের সুযোগ
শিক্ষাক্রম শেষ করে কাজের ক্ষেত্র বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্সিটিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক জানান, দেশের বিভিন্ন এনজিও ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল সোস্যাল ওয়ার্কারসহ অন্যান্য পদে কাজও করা যায়। আর আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মান ও মাস্টার্সে ৬০ কর্মদিবস বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি বাধ্যতামূলক। তাই সেসব প্রতিষ্ঠানেও তাদের কাজের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
No comments