সাক্ষাৎকার আবদুল জলিল-সব দল মিলে অন্তর্বর্তী বা নিরপেক্ষ সরকার হতে পারে by শাহেদ চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল জলিল পাঁচ দফায় নওগাঁ-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও দায়িত্ব পালন করেন নওগাঁ জেলা গভর্নর হিসেবে। তিনবার তিনি পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলীয় সংগঠনকে সক্রিয় করে তুলেছিলেন। পরে দুই দফায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে গ্রেফতারকৃত অবস্থায় বিতর্কিত চিঠি লেখার পর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের ফাটল ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েন এই তারকা রাজনীতিক। এখন তিনি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য
সমকাল :তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে রাজি নয়। বর্তমান অবস্থায় বিকল্প কী হতে পারে?
আবদুল জলিল :বাঘের মুখে আর ছাগল দেওয়া যাবে না। ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই প্রবাদ বাক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিরপেক্ষতার নামে ওরা অনেক অপকর্ম করেছে। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প ব্যবস্থা বের করতে হবে এবং এটা করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে সব রাজনৈতিক দল মিলে অন্তর্বর্তী কিংবা নিরপেক্ষ সরকার হতে পারে। এ জন্য সবার কাছে আন্তরিক উদ্যোগ আশা করব।
সমকাল :নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের দাবি প্রসঙ্গে আপনার মূল্যায়ন কী?
আবদুল জলিল :বিরোধী দল রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করলে ভালো। তারা সেটা না করে নিরাপত্তা বিঘি্নত করার অপচেষ্টা চালালে গণতন্ত্র হোঁচট খাবে। তাই দাবি জানাতে হলে তাদের জাতীয় সংসদে আসতে হবে। রাজপথ গরমের চেষ্টা করে লাভ নেই। নির্বাচন কীভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা যায়, তা নিয়ে সংসদে কথা বলতে হবে। পরে সংসদের বাইরেও আলোচনা হতে পারে। আলোচনার বিকল্প নেই। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। সংবিধানেও এ ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে স্থানীয় সরকারের অনেক নির্বাচন হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। কোনো নির্বাচনেই কারচুপির ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে পরাজিত হয়েছে এবং ফল মেনে নিয়েছে। হবিগঞ্জে এমপি পদে দলের প্রার্থী হেরে গেছেন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন এবং ক্ষমতাবান করতে হবে, এটা সবাই স্বীকার করে। এ জন্য সরকারের করণীয় রয়েছে। বিরোধীরাও ভূমিকা রাখতে পারে। পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের জন্য তাদের কাছ থেকে পরামর্শ চাইব। এটা মনে রাখতে হবে যে, তারা অনেক বছর ক্ষমতায় ছিলেন।
সমকাল :ওয়ান-ইলেভেনের সময়কালে গ্রেফতারের পর রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন?
আবদুল জলিল :শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় গ্রেফতারের পরপরই আমাকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হতো। ওই সময়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। একটা উদাহরণ দিই। প্রতিদিন রাত ১২টার পর দু'জন কর্নেল এসে ভোর ৪টা পর্যন্ত আইসিইউতে অবস্থান করতেন। আমাকে এক রত্তিও ঘুমাতে দিতেন না। তারা আমাকে কথিত সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য চাপ দিতেন। শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে উল্টোপাল্টা কথা লিখে দেওয়ার কথা বলতেন।
আমি কিছুতেই তাদের প্রস্তাবে রাজি হইনি। এভাবে এক মাস পার হওয়ার পর তারা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের গ্রেফতারের হুমকি দেন। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। স্ত্রী-সন্তানদের মঙ্গলের কথা ভেবে তাদের বলি, লিখে আনুন যা ইচ্ছা। সই করে দেব। এক সময়ে আমি আমার জীবন ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য সই করতে বাধ্য হয়েছি। যে অবস্থায় আমি সই করেছি, ওই অবস্থায় পড়লে বাংলাদেশের কোনো মানুষই ভিন্ন কিছু করার কথা ভাবতে পারত না।
সমকাল :আপনার মুক্তির দাবিতে আপনার স্ত্রীর বক্তব্যের সময় একটি রহস্যজনক চিঠি নিয়ে আলোচনা ছিল। এ বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
আবদুল জলিল : মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তি দাবি করে আমার স্ত্রী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন জানিয়ে দুই লাইনের একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, সেখানে রহস্যজনক কারণে আমার সই করা চিঠি বিলি করা হয়েছে। ওই চিঠি সেখানে কীভাবে গেল? কারা ওই চিঠি বিতরণ করল? জেনেও কেউ তা জানতে চাইল না। গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেল না। ওই কাজটি করেছে ডিজিএফআই।
সমকাল :ওয়ান-ইলেভেনের সময় কথিত সংস্কার নিয়ে কিছু বলবেন কি?
আবদুল জলিল :আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কথা বলার অপরাধে আমাকে ছাড়া আর কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আমি ভিকটিম হয়েছি। অথচ যারা কথিত সংস্কারের পক্ষে ছিল, ষড়যন্ত্র করেছিল তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে রয়েছে। মন্ত্রিসভায়ও রয়েছে অনেকে।
সমকাল :প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার কেন দূরত্ব বাড়ল? অতীতে তিনি আপনার ওপর আস্থা রেখেছিলেন বলেই জানি।
আবদুল জলিল :আমি জানি না কেন দূরত্ব বেড়েছে। তবে জানি যে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি দূরে ঠেলে দিলে কী করব? দায়িত্ব থাকাকালে আমি তাকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছি। তার কোনো নির্দেশই অমান্য করিনি। প্রধানমন্ত্রী আমার নেতা। দলের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। তিনি আমাকে শাস্তি দিতেই পারেন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিও আদালতে তার অপরাধের কারণ জানার সুযোগ পায়। তাই আমার কী অপরাধ, আমি সেটা জানতে চাই।
সমকাল :আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে আপনার মূল্যায়ন বলবেন?
আবদুল জলিল :আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব সচল নয়। এ কারণে দলীয় কার্যক্রম প্রায় নিষ্ক্রিয়। সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। জাতীয় সম্মেলনের পর দুই বছরেরও বেশি সময় গড়িয়ে গেলেও আজতক জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শুরু করা যায়নি। উপজেলা ও ইউনিয়ন সম্মেলন হচ্ছে না। মন্ত্রীরা সরকারি কাজে ঢাকার বাইরে গিয়ে রাতের অন্ধকারে ফিরে আসছেন। সাংগঠনিক কাজে তাদের পাওয়া যায় না। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না তারা। জনগণের সঙ্গে কথা বলছেন না। তাদের অভাব-অভিযোগ শুনছেন না। তাদের যোগাযোগ কেবল আমলাদের সঙ্গে। কিন্তু শুধু আমলারাই তো ভোট দেবে না। জনগণের কাছে যেতে হবে। সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের সক্রিয় উদ্যোগ বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটা নেই। এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে বিরোধী দল। তারা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অথচ দলীয়ভাবে এর পাল্টা জবাব দেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় মানুষ অসহায়। এটা দেখলে খারাপ লাগে। সংগঠনের দৈন্যদশার জন্য কষ্ট বাড়ে।
সমকাল :সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরও আপনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিদায়ী সম্মেলন আয়োজন হয়েছিল। বিষয়টি আপনি ভালোভাবে গ্রহণ করেননি...।
আবদুল জলিল :২০০৯ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের কার্যক্রম অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক। আমি নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। অথচ আমাকে বসিয়ে রেখে অন্যকে দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কাজ করানো হয়েছে। এটা অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক। কেউ বলুক, আমার অপরাধটা কী?
সমকাল :সংগঠনে গতি বাড়াতে কী করা উচিত?
আবদুল জলিল :বর্তমান নেতৃত্ব সচল নয় বলেই তারা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তও কার্যকর করছেন না। তৃণমূল সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও সাংগঠনিক সফরের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এই অবস্থায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাংগঠনিক সফর দরকার। সে সঙ্গে দ্রুত জাতীয় সম্মেলন করে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে দলকে ঢেলে সাজানো উচিত।
সমকাল :২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল ট্রাম্পকার্ড কেন দিলেন এবং কেন ব্যর্থ হলো?
আবদুল জলিল :ওসব নিয়ে এখন বলব না। আত্মজীবনী লিখছি। সেখানেই থাকবে ট্রাম্পকার্ড প্রসঙ্গ।
সমকাল :দেশ পরিচালনায় সরকারের সফলতা কী?
আবদুল জলিল :দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরাজমান সব সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের বেশ সাফল্যও আছে। শিক্ষা, কৃষি, সমাজ উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনাসহ অনেক ক্ষেত্রে সাফল্যের পাল্লাই ভারী। এসব নিয়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকায় তা প্রচার পাচ্ছে না।
সমকাল :সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলো কী?
আবদুল জলিল :বিদ্যুতে সফলতা নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থাও প্রয়োজনমতো সম্প্রসারিত হয়নি। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি সমাধান হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঝগড়া নয়, সমঝোতা দরকার। বিদ্যুতের ব্যর্থতার জন্য অবশ্য শুধু সরকারকেই দায়ী করলে হবে না। প্রতিদিনই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু সবসময় সমানতালে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে বিদ্যুৎ খাতে সফলতা আসতে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই আগামীতে স্থিতিশীলতা আসবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুতের দিকে কোনো নজরই দেয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায়নি। এ কারণে এখন চাপ পড়ছে দ্রুত উৎপাদন বাড়ানোর।
সমকাল :জাতীয় সংসদ কি কার্যকর ও গতিশীল হচ্ছে?
আবদুল জলিল :সংসদে রাজনৈতিক কর্মীর সংখ্যা কম। ব্যবসায়ীরা সংসদ দখল করেছেন। ব্যবসায়ীদের হাত থেকে সংসদকে রক্ষা করতে না পারলে গণতন্ত্র সঠিক পথে এগোবে না। সংসদও গতিশীল হবে না। তাই নির্বাচনে মনোনয়নের বেলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক কর্মীদের প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ হোক, এটা কাম্য নয়।
সমকাল :সরকারি দলের কয়েকজন সাংসদের কর্মকাণ্ড বিতর্কিত, এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আবদুল জলিল :সব সাংসদের কর্মকাণ্ডই ভালো, এমনটা কোনো সরকারের আমলেই ছিল না। তবে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদদের অনেকেই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন না বলে মনে হচ্ছে।
সমকাল :বর্তমান মন্ত্রিসভার মূল্যায়ন করুন।
আবদুল জলিল :তরুণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকলেও তারা ভালো করছেন। তবে তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞরা থাকলে মন্ত্রিসভা আরও সমৃদ্ধ হতো।
সমকাল :আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনার প্রস্তুতি কী? নিজে কি প্রার্থী হবেন?
আবদুল জলিল :কেন্দ্রীয় রাজনীতির ব্যস্ততায় না থাকলেও সারাক্ষণ সামাজিক কর্মকাণ্ডে ডুবে থাকি। সুযোগ পেলেই নওগাঁ-৫ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যাই। আগে প্রতি সপ্তাহে নওগাঁও যেতাম। এখন পারি না। দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। দেড় বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে তিন দফায় ১৫ ঘণ্টা ডায়ালাইসিস নিতে হচ্ছে। তাই এখন ১৫ দিন পর নওগাঁয় যাই। নওগাঁর সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হই। তাদের সঙ্গে কথা বলে নতুন করে পথ চলি। ঢের বয়স হয়েছে। তাই আগামীবার জীবনের শেষ নির্বাচন করে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নওগাঁর মানুষের সেবা করে যেতে চাই।
সমকাল :এক সময়কার দারুণ ব্যস্ত মানুষ হিসেবে বর্তমানে কীভাবে অলস সময় কাটছে?
আবদুল জলিল :নেতাকর্মীদের ভিড় অবশ্য কিছুটা কমেছে। দলের দায়িত্বে থাকার সময়ের মতো এখন আর অত ভিড় নেই। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চেয়ারম্যানের দাফতরিক কাজকর্ম দেখভাল করি। এর ফাঁকে দিনভর মানুষজন আসে। তাদের কষ্টের কথা শুনি। সমস্যার সমাধান দিই। সন্ধ্যায় বাসায় গিয়ে স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের সঙ্গে কথা বলি। এর ফাঁকে ফাঁকে রাত ১১টা পর্যন্ত মানুষের ভিড়ে একাত্ম হয়ে থাকি। এ নিয়ে বেশ ভালোই আছি। কোনো দুঃখবোধ নেই। কষ্ট নেই।
মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি করছি। আমার সেই চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। নওগাঁর মানুষ আমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। সেই মানুষ নিয়েই আমি এখনকার বন্ধুর পথ পাড়ি দিচ্ছি। নওগাঁর মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সারাদেশের অনেক নেতাকর্মী সুযোগ পেলেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের দুঃখ-বেদনার কথা বলেন। আমি সর্বাত্মকভাবে তাদের সহযোগিতা করি। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা চালাই।
সমকাল :নিজ ভূমে নিজেকে পরবাসী মনে হয় কি-না?
আবদুল জলিল :সবকিছুই তো আছে। মানুষের শ্রদ্ধা আছে। ভালোবাসা আছে। সুন্দর কর্মক্ষেত্র আছে। কিন্তু একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো না। আমি আমার দেশকে, আমার নওগাঁর মানুষকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। ইচ্ছা ছিল, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিয়ে শেষ জীবনে দেশের জন্য কিছু করার। সেটা আর হলো কোথায়? তাই মনে কষ্ট লাগে। যারা আমার হাতে তৈরি, তারা সামনে দিয়ে চলে যায়। আমি আফসোস করি। তবুও ভুলে থাকার চেষ্টা চলে।
সমকাল :সাক্ষাৎকারের জন্য ধন্যবাদ।
আবদুল জলিল : সমকাল পাঠকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
সমকাল :তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে রাজি নয়। বর্তমান অবস্থায় বিকল্প কী হতে পারে?
আবদুল জলিল :বাঘের মুখে আর ছাগল দেওয়া যাবে না। ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই প্রবাদ বাক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিরপেক্ষতার নামে ওরা অনেক অপকর্ম করেছে। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প ব্যবস্থা বের করতে হবে এবং এটা করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে সব রাজনৈতিক দল মিলে অন্তর্বর্তী কিংবা নিরপেক্ষ সরকার হতে পারে। এ জন্য সবার কাছে আন্তরিক উদ্যোগ আশা করব।
সমকাল :নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের দাবি প্রসঙ্গে আপনার মূল্যায়ন কী?
আবদুল জলিল :বিরোধী দল রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করলে ভালো। তারা সেটা না করে নিরাপত্তা বিঘি্নত করার অপচেষ্টা চালালে গণতন্ত্র হোঁচট খাবে। তাই দাবি জানাতে হলে তাদের জাতীয় সংসদে আসতে হবে। রাজপথ গরমের চেষ্টা করে লাভ নেই। নির্বাচন কীভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা যায়, তা নিয়ে সংসদে কথা বলতে হবে। পরে সংসদের বাইরেও আলোচনা হতে পারে। আলোচনার বিকল্প নেই। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। সংবিধানেও এ ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে স্থানীয় সরকারের অনেক নির্বাচন হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। কোনো নির্বাচনেই কারচুপির ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে পরাজিত হয়েছে এবং ফল মেনে নিয়েছে। হবিগঞ্জে এমপি পদে দলের প্রার্থী হেরে গেছেন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন এবং ক্ষমতাবান করতে হবে, এটা সবাই স্বীকার করে। এ জন্য সরকারের করণীয় রয়েছে। বিরোধীরাও ভূমিকা রাখতে পারে। পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের জন্য তাদের কাছ থেকে পরামর্শ চাইব। এটা মনে রাখতে হবে যে, তারা অনেক বছর ক্ষমতায় ছিলেন।
সমকাল :ওয়ান-ইলেভেনের সময়কালে গ্রেফতারের পর রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন?
আবদুল জলিল :শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় গ্রেফতারের পরপরই আমাকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হতো। ওই সময়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। একটা উদাহরণ দিই। প্রতিদিন রাত ১২টার পর দু'জন কর্নেল এসে ভোর ৪টা পর্যন্ত আইসিইউতে অবস্থান করতেন। আমাকে এক রত্তিও ঘুমাতে দিতেন না। তারা আমাকে কথিত সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য চাপ দিতেন। শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে উল্টোপাল্টা কথা লিখে দেওয়ার কথা বলতেন।
আমি কিছুতেই তাদের প্রস্তাবে রাজি হইনি। এভাবে এক মাস পার হওয়ার পর তারা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের গ্রেফতারের হুমকি দেন। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। স্ত্রী-সন্তানদের মঙ্গলের কথা ভেবে তাদের বলি, লিখে আনুন যা ইচ্ছা। সই করে দেব। এক সময়ে আমি আমার জীবন ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য সই করতে বাধ্য হয়েছি। যে অবস্থায় আমি সই করেছি, ওই অবস্থায় পড়লে বাংলাদেশের কোনো মানুষই ভিন্ন কিছু করার কথা ভাবতে পারত না।
সমকাল :আপনার মুক্তির দাবিতে আপনার স্ত্রীর বক্তব্যের সময় একটি রহস্যজনক চিঠি নিয়ে আলোচনা ছিল। এ বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
আবদুল জলিল : মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তি দাবি করে আমার স্ত্রী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন জানিয়ে দুই লাইনের একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, সেখানে রহস্যজনক কারণে আমার সই করা চিঠি বিলি করা হয়েছে। ওই চিঠি সেখানে কীভাবে গেল? কারা ওই চিঠি বিতরণ করল? জেনেও কেউ তা জানতে চাইল না। গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেল না। ওই কাজটি করেছে ডিজিএফআই।
সমকাল :ওয়ান-ইলেভেনের সময় কথিত সংস্কার নিয়ে কিছু বলবেন কি?
আবদুল জলিল :আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কথা বলার অপরাধে আমাকে ছাড়া আর কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আমি ভিকটিম হয়েছি। অথচ যারা কথিত সংস্কারের পক্ষে ছিল, ষড়যন্ত্র করেছিল তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে রয়েছে। মন্ত্রিসভায়ও রয়েছে অনেকে।
সমকাল :প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার কেন দূরত্ব বাড়ল? অতীতে তিনি আপনার ওপর আস্থা রেখেছিলেন বলেই জানি।
আবদুল জলিল :আমি জানি না কেন দূরত্ব বেড়েছে। তবে জানি যে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি দূরে ঠেলে দিলে কী করব? দায়িত্ব থাকাকালে আমি তাকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছি। তার কোনো নির্দেশই অমান্য করিনি। প্রধানমন্ত্রী আমার নেতা। দলের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। তিনি আমাকে শাস্তি দিতেই পারেন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিও আদালতে তার অপরাধের কারণ জানার সুযোগ পায়। তাই আমার কী অপরাধ, আমি সেটা জানতে চাই।
সমকাল :আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে আপনার মূল্যায়ন বলবেন?
আবদুল জলিল :আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব সচল নয়। এ কারণে দলীয় কার্যক্রম প্রায় নিষ্ক্রিয়। সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। জাতীয় সম্মেলনের পর দুই বছরেরও বেশি সময় গড়িয়ে গেলেও আজতক জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শুরু করা যায়নি। উপজেলা ও ইউনিয়ন সম্মেলন হচ্ছে না। মন্ত্রীরা সরকারি কাজে ঢাকার বাইরে গিয়ে রাতের অন্ধকারে ফিরে আসছেন। সাংগঠনিক কাজে তাদের পাওয়া যায় না। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না তারা। জনগণের সঙ্গে কথা বলছেন না। তাদের অভাব-অভিযোগ শুনছেন না। তাদের যোগাযোগ কেবল আমলাদের সঙ্গে। কিন্তু শুধু আমলারাই তো ভোট দেবে না। জনগণের কাছে যেতে হবে। সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের সক্রিয় উদ্যোগ বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটা নেই। এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে বিরোধী দল। তারা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অথচ দলীয়ভাবে এর পাল্টা জবাব দেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় মানুষ অসহায়। এটা দেখলে খারাপ লাগে। সংগঠনের দৈন্যদশার জন্য কষ্ট বাড়ে।
সমকাল :সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরও আপনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিদায়ী সম্মেলন আয়োজন হয়েছিল। বিষয়টি আপনি ভালোভাবে গ্রহণ করেননি...।
আবদুল জলিল :২০০৯ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের কার্যক্রম অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক। আমি নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। অথচ আমাকে বসিয়ে রেখে অন্যকে দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কাজ করানো হয়েছে। এটা অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক। কেউ বলুক, আমার অপরাধটা কী?
সমকাল :সংগঠনে গতি বাড়াতে কী করা উচিত?
আবদুল জলিল :বর্তমান নেতৃত্ব সচল নয় বলেই তারা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তও কার্যকর করছেন না। তৃণমূল সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও সাংগঠনিক সফরের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এই অবস্থায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাংগঠনিক সফর দরকার। সে সঙ্গে দ্রুত জাতীয় সম্মেলন করে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে দলকে ঢেলে সাজানো উচিত।
সমকাল :২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল ট্রাম্পকার্ড কেন দিলেন এবং কেন ব্যর্থ হলো?
আবদুল জলিল :ওসব নিয়ে এখন বলব না। আত্মজীবনী লিখছি। সেখানেই থাকবে ট্রাম্পকার্ড প্রসঙ্গ।
সমকাল :দেশ পরিচালনায় সরকারের সফলতা কী?
আবদুল জলিল :দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরাজমান সব সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের বেশ সাফল্যও আছে। শিক্ষা, কৃষি, সমাজ উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনাসহ অনেক ক্ষেত্রে সাফল্যের পাল্লাই ভারী। এসব নিয়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকায় তা প্রচার পাচ্ছে না।
সমকাল :সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলো কী?
আবদুল জলিল :বিদ্যুতে সফলতা নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থাও প্রয়োজনমতো সম্প্রসারিত হয়নি। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি সমাধান হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঝগড়া নয়, সমঝোতা দরকার। বিদ্যুতের ব্যর্থতার জন্য অবশ্য শুধু সরকারকেই দায়ী করলে হবে না। প্রতিদিনই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু সবসময় সমানতালে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে বিদ্যুৎ খাতে সফলতা আসতে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই আগামীতে স্থিতিশীলতা আসবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুতের দিকে কোনো নজরই দেয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায়নি। এ কারণে এখন চাপ পড়ছে দ্রুত উৎপাদন বাড়ানোর।
সমকাল :জাতীয় সংসদ কি কার্যকর ও গতিশীল হচ্ছে?
আবদুল জলিল :সংসদে রাজনৈতিক কর্মীর সংখ্যা কম। ব্যবসায়ীরা সংসদ দখল করেছেন। ব্যবসায়ীদের হাত থেকে সংসদকে রক্ষা করতে না পারলে গণতন্ত্র সঠিক পথে এগোবে না। সংসদও গতিশীল হবে না। তাই নির্বাচনে মনোনয়নের বেলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক কর্মীদের প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ হোক, এটা কাম্য নয়।
সমকাল :সরকারি দলের কয়েকজন সাংসদের কর্মকাণ্ড বিতর্কিত, এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আবদুল জলিল :সব সাংসদের কর্মকাণ্ডই ভালো, এমনটা কোনো সরকারের আমলেই ছিল না। তবে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদদের অনেকেই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন না বলে মনে হচ্ছে।
সমকাল :বর্তমান মন্ত্রিসভার মূল্যায়ন করুন।
আবদুল জলিল :তরুণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকলেও তারা ভালো করছেন। তবে তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞরা থাকলে মন্ত্রিসভা আরও সমৃদ্ধ হতো।
সমকাল :আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনার প্রস্তুতি কী? নিজে কি প্রার্থী হবেন?
আবদুল জলিল :কেন্দ্রীয় রাজনীতির ব্যস্ততায় না থাকলেও সারাক্ষণ সামাজিক কর্মকাণ্ডে ডুবে থাকি। সুযোগ পেলেই নওগাঁ-৫ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যাই। আগে প্রতি সপ্তাহে নওগাঁও যেতাম। এখন পারি না। দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। দেড় বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে তিন দফায় ১৫ ঘণ্টা ডায়ালাইসিস নিতে হচ্ছে। তাই এখন ১৫ দিন পর নওগাঁয় যাই। নওগাঁর সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হই। তাদের সঙ্গে কথা বলে নতুন করে পথ চলি। ঢের বয়স হয়েছে। তাই আগামীবার জীবনের শেষ নির্বাচন করে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নওগাঁর মানুষের সেবা করে যেতে চাই।
সমকাল :এক সময়কার দারুণ ব্যস্ত মানুষ হিসেবে বর্তমানে কীভাবে অলস সময় কাটছে?
আবদুল জলিল :নেতাকর্মীদের ভিড় অবশ্য কিছুটা কমেছে। দলের দায়িত্বে থাকার সময়ের মতো এখন আর অত ভিড় নেই। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চেয়ারম্যানের দাফতরিক কাজকর্ম দেখভাল করি। এর ফাঁকে দিনভর মানুষজন আসে। তাদের কষ্টের কথা শুনি। সমস্যার সমাধান দিই। সন্ধ্যায় বাসায় গিয়ে স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের সঙ্গে কথা বলি। এর ফাঁকে ফাঁকে রাত ১১টা পর্যন্ত মানুষের ভিড়ে একাত্ম হয়ে থাকি। এ নিয়ে বেশ ভালোই আছি। কোনো দুঃখবোধ নেই। কষ্ট নেই।
মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি করছি। আমার সেই চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। নওগাঁর মানুষ আমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। সেই মানুষ নিয়েই আমি এখনকার বন্ধুর পথ পাড়ি দিচ্ছি। নওগাঁর মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সারাদেশের অনেক নেতাকর্মী সুযোগ পেলেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের দুঃখ-বেদনার কথা বলেন। আমি সর্বাত্মকভাবে তাদের সহযোগিতা করি। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা চালাই।
সমকাল :নিজ ভূমে নিজেকে পরবাসী মনে হয় কি-না?
আবদুল জলিল :সবকিছুই তো আছে। মানুষের শ্রদ্ধা আছে। ভালোবাসা আছে। সুন্দর কর্মক্ষেত্র আছে। কিন্তু একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো না। আমি আমার দেশকে, আমার নওগাঁর মানুষকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। ইচ্ছা ছিল, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিয়ে শেষ জীবনে দেশের জন্য কিছু করার। সেটা আর হলো কোথায়? তাই মনে কষ্ট লাগে। যারা আমার হাতে তৈরি, তারা সামনে দিয়ে চলে যায়। আমি আফসোস করি। তবুও ভুলে থাকার চেষ্টা চলে।
সমকাল :সাক্ষাৎকারের জন্য ধন্যবাদ।
আবদুল জলিল : সমকাল পাঠকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
No comments