মরণফাঁদ নয়, বহুতল ভবন নগরবাসীর জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে আনুক-ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি
ভবন নির্মাণে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া এবং জনগণের সচেতনতার অভাবে রাজধানী ঢাকার সিংহভাগ বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের মারাত্মক ঝুঁকি রয়ে গেছে। দমকল বাহিনী কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, শুধু ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগরে এক হাজার ৩৮৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা প্রতিবছর বেড়ে চলেছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে, ঢাকার ৯৭ শতাংশ বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা নেই—সরকারের হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের জরিপ থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল নগরগুলোর অন্যতম। এখানে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দমকল বাহিনী ও স্থানীয় জনগণ একমাত্র ভরসা। কিন্তু দমকল বাহিনীর আছে নানা সীমাবদ্ধতা। দেখা যায়, দমকল বাহিনীর পক্ষে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। সাধারনত আগুন লাগার স্থানসংলগ্ন রাস্তায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে, ফলে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়। সরু রাস্তা, মইয়ের তুলনায় দালানের উচ্চতা বেশি হওয়া বা পানির স্বল্পতার কারণে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না। ফলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়। অথচ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিটি ভবনে যদি অগ্নিনির্বাপণের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা থাকে, তাহলে এমন ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো যায়।
বাংলাদেশের জাতীয় ইমারত নির্মাণবিধিতে ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখাকে আইনগত বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা হয়েছে ২০০৬ সালে। ২০০৩ সালের অগ্নিকাণ্ড রোধ ও নির্বাপণ আইন অনুযায়ী আগুন থেকে সুরক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না পেলে কোনো ভবনকে ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করার বিধান রাখা হয়েছে এবং এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দমকল বাহিনী কর্তৃপক্ষের ওপর। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না। ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক, জরুরি নির্গমন-ব্যবস্থা, ফায়ার লিফট, ফায়ার অ্যালার্ম, ভবনের ভূগর্ভে ন্যূনতম দুই লাখ লিটার পানির আধার, দমকল বাহিনী সহজেই যেন আগুন নেভাতে পারে, সে রকম ব্যবস্থা রাখার কথা আইনে বলা আছে। কিন্তু ভবন নির্মাণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো এ শর্তগুলো মানছে না। জরিপের তথ্যানুসারে, যে ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রয়েছে সেগুলোর ব্যবহারও লোকজন জানে না।
আগুন থেকে কোনো দালানের শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় না, কিন্তু কতগুলো ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে আগুনের মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। সব বিধিবিধান মেনে নিরাপদ দালান নির্মাণের প্রতি সকল ভবনের মালিক ও ডেভেলপারদের দায়বদ্ধ থাকা প্রয়োজন। বহুতল ভবন নগরবাসীর জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে আনুক, তাদের মৃত্যুর কারণ যেন না হয়ে ওঠে।
No comments