আবারও সাংবাদিক পেটাল পুলিশ আইনজীবীসহ আহত ৫-এক নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ শুনছিলেন তাঁরা

তিন দিন না যেতেই খবর সংগ্রহ করার সময় সাংবাদিকদের আবার পিটিয়েছে পুলিশ। তবে এবার রাস্তায় নয়, হামলা হয়েছে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতসংলগ্ন এলাকায়। সেখানে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে এক নারী তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ জানানোর সময় পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়।


তাদের লাঠির আঘাতে তিন সাংবাদিকসহ পাঁচজন গুরুতর আহত হন। এই হামলায় নেতৃত্ব দেন কোতোয়ালি থানার ওসি সালাহউদ্দিন।
আহতরা হলেন কালের কণ্ঠের আদালত প্রতিবেদক এম এ জলিল উজ্জ্বল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আদালত প্রতিবেদক তুহিন হাওলাদার ও প্রথম আলোর আদালত প্রতিবেদক প্রশান্ত কুমার কর্মকার। এ ছাড়া রাজু ও সাকিব নামের দুজন আইনজীবীকেও লাঠিপেটার পর পুলিশ-ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কোতোয়ালি থানার পুলিশ দুই আইনজীবীকে তুলে নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে গতকাল রাতেই কোতোয়ালি থানার দুই এএসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, এএসআই জামান ও আমির আফজাল। ঘটনা তদন্তে পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মারুফ হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
আহত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, এক নারী আদালত এলাকায় পুলিশ ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ করছিলেন তাঁদের কাছে। এ অভিযোগ শোনার সময় পুলিশ তেড়ে এসে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনার পর আদালতে কর্তব্যরত সাংবাদিকরা মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহার কাছে নালিশ নিয়ে যান। তিনি ঘটনার ব্যাখ্যা শুনতে ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন।
ডিসি প্রসিকিউশন আনিছুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি আমিও শুনেছি। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের সিএমএমের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিয়ে বসার কথা জানিয়েছেন।'
কালের কণ্ঠের আদালত প্রতিবেদক এম এ জলিল উজ্জ্বল বলেন, 'আমরা ওই নারীর কাছ থেকে অভিযোগ শুনছিলাম। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালায়।'
সূত্র জানায়, ওই নারী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য গতকাল সকালে পুরান ঢাকায় সিএমএম কোর্টে আসেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা ফারুক আহমেদ ও মা। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা তিনজনই একটি মোটরসাইকেলে চড়ে চলে যাওয়ার সময় পুলিশ ক্লাবের পাশে এক পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলটি দাঁড় করান। বলেন, ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা রয়েছে। পুলিশ এরপর ফারুক আহমেদকে ধরে ক্লাবের ভেতর নিয়ে যায়। এ সময় তাঁর মেয়ে ও স্ত্রী প্রতিবাদ করতে থাকেন। মেয়ে একপর্যায়ে পুলিশ ক্লাবের ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক পরাগ আজিম তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে থাকেন। তখন ওই দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন তিন পত্রিকার তিনজন আদালত প্রতিবেদক। তাঁরাও গিয়ে ওই নারীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন আরো কয়েকজন আইনজীবী সেখানে জড়ো হন।
ওই নারী বলেন, 'আমার নির্দোষ বাবাকে পুলিশ ক্লাবে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি সেখানে গেলে কোতোয়ালি থানার দুই এসআই আমাকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। আমি জোর করে কোনোক্রমে বাইরে বেরিয়ে এসেছি।' তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ জানানোর সময় কোতোয়ালি থানার ওসি সালাহউদ্দিন এসে তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন, 'বললাম না, থানায় বসে কথা বলতে।' ওই নারী তখন উত্তেজিত হয়ে ওসির কাছেও তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টার কথা বলতে থাকেন। আর তখনই পুলিশ লাঠি নিয়ে চড়াও হয় সাংবাদিক ও আইনজীবীদের ওপর। পরে আহত দুই আইনজীবীকে পুলিশ-ভ্যানে তুলে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পাশাপাশি ওই নারী ও তাঁর মাকেও ধস্তাধস্তি করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে ওসি সালাহউদ্দিনের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর বশির কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ফারুক আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে ছাড়া কোর্ট এলাকা থেকে আর কাউকে থানায় আনা হয়নি। এখন পর্যন্ত (মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টা) তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না বলতে পারছি না।'
পরে রাতে লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মারুফ হোসেন জানান, অভিযোগকারী নারী এবং তাঁর মা-বাবাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার দুপুরে দায়িত্ব পালনের সময় আগারগাঁওয়ে পুলিশি পিটুনির শিকার হন প্রথম আলোর তিন আলোকচিত্র সাংবাদিক খালেদ সরকার, সাজিদ হোসেন ও জাহিদুল করিম। এরপর গত সোমবার রাতে মহাখালীর কার্যালয়ের সামনে ও ভেতরে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের দুই সাংবাদিক ও একজন অফিস সহকারী।

No comments

Powered by Blogger.