আচরণবিধি লঙ্ঘন-শেরপুরে অ-বিচার
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলাকালে এক সদস্য প্রার্থীকে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস ও লাঠিপেটা করেছেন জনৈক 'কর্তব্যরত' ম্যাজিস্ট্রেট। রোববারের সমকালে এ বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। সম্ভাব্য ওই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি একাধিকবার ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের মাধ্যমে 'আচরণবিধি লঙ্ঘন' করেছেন।
বলাবাহুল্য, ইউনিয়ন পরিষদের মতো নিবিড় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আরও গুরুতর ঘটনা_ ব্যালট ছিনতাই, ভাংচুর এমনকি রক্তপাত_ প্রত্যক্ষ করে থাকি আমরা। সেই তুলনায় বেচারা ভোটপ্রার্থীর অপরাধ লঘুই বিবেচিত হবে। তবে অপরাধ যত লঘুই হোক না কেন, উপেক্ষার অবকাশ নেই; নিঃসন্দেহে এর প্রতিবিধান করতে হবে। সে জন্যই তো রাষ্ট্রীয় আইন ও আদালত রয়েছে। আইনের শাসন বজায় রাখার জন্যই তো ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে ভোটকেন্দ্রে কর্তব্য পালনে পাঠানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ঝিনাইগাতীর দুপুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আলোচ্য ম্যাজিস্ট্রেট যা করেছেন, তা কি বিধিসম্মত? কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সে জন্য জরিমানা ও জেল হতে পারে। কিন্তু তিনি যেভাবে একজন প্রার্থীকে 'শাস্তি' দিয়েছেন, তা তার আচরণবিধির লঙ্ঘন। এ ধরনের বিচার সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন, তিনি মধ্যযুগীয় সামন্ত নন, জনগণের সেবক মাত্র। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এ দেশের নাগরিকের অর্থ ব্যয় করে তাকে নিয়োগ করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক ওই ঘটনার পর সদস্য প্রার্থী মাথা নিচু করে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করলেও গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আমরা মনে করি, এ ক্ষোভ কেবল ঝিনাইগাতীর মানুষের নয়, সব নাগরিকের হওয়া উচিত। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে অবিলম্বে ওই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ঔপনিবেশিক মানসিকতার অবসান ঘটাতে না পারলে শোষণ ও বৈষম্যহীন যে দেশের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ প্রাণবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তা পূরণ হওয়ার নয়।
No comments