ইতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হোক-চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছিল। তবে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বরং অভিযোগ উঠতে শুরু করে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর অবশ্য সরকারি ও বিরোধী দল—দুই পক্ষই নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ বলে মেনে নিয়েছে।


বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা সাধারণত বিরল। সামান্য হলেও এই যে পরিবর্তন, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাতে চাই।
তবে চট্টগ্রামের এই নির্বাচনটি পুরোপুরি অনন্য হতে পারত, যদি ফলাফল ঘোষণার আগে বিরোধী দল অহেতুক অভিযোগ না তুলত। আমরা অনুমান করতে পারি যে গতানুগতিকভাবে ও নির্বাচনে পরাজিত হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে আগাম এ ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। বিএনপির নেতারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, তাঁরা অন্তত স্বীকার করেছেন যে এমনটা না করলেও চলত। আমাদের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই ভুল স্বীকার করার বিষয়টি একেবারে উপেক্ষা করার মতো নয়।
সিটি করপোরেশনের নির্বাচন রাজনৈতিক নির্বাচন নয়। কিন্তু প্রার্থীদের পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন থাকে এবং এ ধরনের নির্বাচনে নিজ দলের সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়কে রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে দিক থেকে দেখলে সরকারি দলের জন্য এটা একটা বড় ধাক্কা। তবে সরকারি দল নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলমকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নে তাঁকে সরকার থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের এই অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই।
এই নির্বাচন সরকার ও বিরোধী দল—সব পক্ষের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু নিয়ে হাজির হয়েছে। সরকারি দলের জন্য শেখার বিষয় হলো, জনগণ সবকিছু সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম এবং ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাঁদের মূল্যায়ন জানিয়ে দেন। সরকারি দলের উচিত হবে, কেন তাদের দলের সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন পর্যালোচনা করা ও ভবিষ্যতে এই পর্যালোচনাকে বিবেচনায় নেওয়া। কারণ, চট্টগ্রামের একটি নির্বাচনই শেষ কথা নয়। গণতন্ত্রে ভরসা থাকলে শেষ পর্যন্ত জনগণের সামনেই যে হাজির হতে হবে, তা বিবেচনায় রেখে কাজ করা। পরাজিত প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর উচিত হবে, নিজ দলের পথ অনুসরণ করে ফল মেনে নিয়ে নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানানো।
নিজেদের সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় বিরোধী দল এখন খুশি। তাদের বোঝা উচিত, গণতান্ত্রিক সমাজে নির্বাচনই আসল কথা। জনগণ এর মধ্য দিয়েই তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন। আগামী ২৭ জুন হরতাল ডেকেছে বিএনপি, যা পুরোনো ও গতানুগতিক বিরোধীদলীয় রাজনীতির অংশ। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের অভিযোগ আর টেকে না। এখন বিএনপির উচিত, ২৭ জুনের হরতালটি প্রত্যাহার করে সংসদে গিয়ে সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করার ইতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গ্রহণ করা ও সামনের সব নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা।

No comments

Powered by Blogger.