জন্ম হোক নতুন কাহিনির by ফিজার আহমেদ

বন্ধুসভার নিয়মিত আড্ডার সঙ্গী ওরা ১০ জন। অনেক দিন থেকেই পরিকল্পনা করছে এইচএসসি পরীক্ষার পর কোথাও বেড়াতে যাবে। কোথায় যাওয়া যায়? সাগর বলে, ‘চলো কুয়াকাটা যাই।’ সফিক বলে, ‘তোর নাম তো সাগর, তাই সাগর দেখার শখ বেশি। তার চেয়ে বরং সুন্দরবন যাই।’


তুহিন বলে, ‘আমরা তো সমতলের মানুষ, তাই পাহাড় দেখাতে আনন্দটা মনে হয় একটু বেশিই হবে। তাই চলো, বান্দরবান যাই।’ কেউ বলে এসব বাদ দাও, চলো, কক্সবাজার যাই। আলোচনাটা এভাবেই চলছিল, সিদ্ধান্ত আর হয় না। অবশেষে লটারির মাধ্যমে স্থান নির্ধারণ। সিদ্ধান্ত হয় কুয়াকাটা যাওয়ার। ভ্রমণে ওরা সবাই নতুন। পথ চেনে না কেউ। তাতে কী? সফিক বলে, আমাদের বন্ধুসভা আছে না। ওরা মাঠে বসেই তুহিনের ল্যাপটপে ‘কুয়াকাটা যেতে চাই’ শিরোনামে একটি লেখা পোস্ট করে বন্ধুসভার ওয়েবসাইটে। পরদিনই আসে চারটি মন্তব্য। বাউফল থেকে লিখেছে শামীম, বরিশাল থেকে লিখেছে পলাশ, পটুয়াখালী থেকে লিখেছে আলিফ আর কলাপাড়া থেকে লিখেছে পার্থ। ওদের সবার লেখায় কুয়াকাটার পথ আর অজানা থাকে না। ভ্রমণের আনন্দের সঙ্গে নতুন নতুন এলাকার বন্ধুসভার বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগও করে দিল বন্ধুসভার ওয়েবসাইটটি।
হারুনের মা জটিল রোগে আক্রান্ত। প্রতি সপ্তাহে এক ব্যাগ রক্ত লাগছে। রক্ত দিতে না পারলে বাঁচার আশা নেই। কিন্তু এত রক্ত কোথায় মিলবে? হারুন বন্ধুসভার পুরোনো বন্ধু। নিয়মিত লেখে বন্ধুসভার ওয়েবসাইটে। এবার সে লিখল মাকে নিয়ে। শিরোনাম: ‘মা, তোমাকে ছাড়ি কী করে...’। হারুনের লেখা পড়ে বন্ধুদের চোখ ভিজে আসে। বন্ধুসভাগুলো এগিয়ে আসে হারুনের মাকে বাঁচাতে। প্রতি সপ্তাহে একটি করে বন্ধুসভা রক্ত দিতে থাকে। হারুনের মা তারপর বেঁচেছিলেন অনেক দিন। রক্তের অভাবে একজন মা যেন তাঁর ছেলেকে ছেড়ে চলে যেতে না পারেন, এটা নিশ্চিত করেছিল বন্ধুসভাগুলো। আর এই সেতুবন্ধটা তৈরি হয়েছিল বন্ধুসভার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
নেশার কবলে সারা দেশ। তরুণসমাজের এমন অবক্ষয়ে চিন্তিত সবাই। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী? ভাবছে বন্ধুসভাগুলো। পত্রিকার পাতায় আর কয়টা লেখা ধরে! শত শত লেখা আসছে নিয়মিত বন্ধুসভার ওয়েবসাইটে। লিখছে অনেকেই। নেশার ছোবল থেকে ফিরে আসার গল্পটা লিখেছে সুমন, রফিক। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে বাপ্পি আর আকাশও ফিরতে পেরেছে। সব বন্ধুর একই মন্তব্য—সুস্থভাবে বাঁচতে হবে। নেশার বিরুদ্ধে রচিত হলো মানবঢাল। সারা দেশের বন্ধুসভার সহস্র বন্ধুর এ ঢালের বন্ধন সুদৃঢ় করেছে বন্ধুসভার ওয়েবসাইটটি।
এই মফস্বল শহরে সবাই সবার চেনা। কিন্তু সাইকেলের এই ৩০ জন আরোহী এখানে একেবারে নতুন। সবার মন্তব্য, এরা কারা? স্কুলমাঠের এক কোনায় বসে আছে জটলা করে। মাঠের আরেক পাশে চলছে নজরুলজয়ন্তীর আয়োজন। স্থানীয় বন্ধুসভার বন্ধুদের আয়োজনে এই উৎসব। বন্ধুসভার ওয়েবসাইটে নোটিশ আকারে এসেছে এই আয়োজনের খবর। নজরুল জয়ন্তীতে তো গাইতে হবে নজরুলের গান। কিন্তু সমস্যাটা হলো, এই মফস্বল শহরে আর কয়জনইবা নজরুলের গানের চর্চা করে। আর একটি গানের পরই শেষ হবে অনুষ্ঠান। কিন্তু সূর্য ডোবার এখনো অনেক বাকি। দর্শক উঠতে চায় না। মঞ্চের পাশে এল সাইকেল আরোহীদের একজন। সে উপস্থাপকের কানে কানে কিছু একটা বলে মঞ্চে উঠল বন্ধুসভার শেষ গানের পরে। নিজের পরিচয় না দিয়েই হারমোনিয়ামটা ধরে গাইতে শুরু করল, ‘বধূ তোমার আমার এই যে পিরিতি এক জনমের নহে’। সাইকেলে আসা তরুণেরা একে একে গাইল নজরুলের আরও ১০টি গান। মুগ্ধ দর্শক। মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত স্কুলমাঠ। কিন্তু ওরা কারা? পরিচয় মিলল অনুষ্ঠানের শেষে। ওরা পাশের জেলার বন্ধুসভার বন্ধু। ওয়েবসাইটে এই অনুষ্ঠানের খবরটা পেয়ে এসেছে এখানে। চমকে দেওয়াই ওদের উদ্দেশ্য। রাতে আর ওই ৩০ জনের ফিরে যাওয়া হয়নি। মুগ্ধ এলাকাবাসী ওদের জন্য রাতে ভূরিভোজের ব্যবস্থা করে। সারা রাত চলে গান আর নজরুলকে নিয়ে আলোচনা, যা অপ্রত্যাশিত ছিল কয়েক ঘণ্টা আগেও।
এমন হাজারো অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে প্রথম আলো বন্ধুসভার এই ওয়েবসাইটটি। এ জন্য দরকার বন্ধুদের নিয়মিত ওয়েবসাইট ভ্রমণ করা। বন্ধুদের হাতের স্পর্শে এ সাইটে জন্ম হোক নতুন নতুন কাহিনির। এই তো প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.