রাজনীতি-গণতন্ত্রের প্রহরী হোন! by মমতাজ লতিফ
এসব ঘটনার নেপথ্যের নায়ক, পরিকল্পক কালো দানবটিকে বের করা না গেলেও তার সঙ্গে বাঙালির জীবনের শুরুর শত্রুটির চরিত্র বৈশিষ্ট্য কি খাপে খাপে মিলে যায় না? এ শত্রু বাঙালি ও বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ, জঙ্গিমুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ উন্নত জাতি ও দেশ হতে বারবার বাধা দিয়েছে এবং দেবে_ এ বাধাকে, এ দানবকে,
জাতিকে সব দল-মতের ঊধর্ে্ব উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। নতুবা অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা দানব গণতন্ত্র রক্ষার প্রহরী ও মুক্তিযুদ্ধপন্থিদের বিনাশে উদ্যত হবে
দেশের উচ্চ আদালত সামরিক আইন, যা রাষ্ট্র শাসনের কোনো আইন নয়, সেটি বাতিল করেছেন। সংবিধানের চার মৌল স্তম্ভকে উচ্চ আদালত পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায় দ্বারা সংবিধানে পুনঃস্থাপন করেছেন। সম্প্রতি উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করেছেন একটি পর্যবেক্ষণসহ। পর্যবেক্ষণটি_ আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে কি-না তা সংসদকে বিবেচনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। বলাবাহুল্য, পর্যবেক্ষণ রায় নয়। এরশাদ এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন, আগের সংশোধনীগুলোর রায়ও গ্রহণ করেছেন_ এতে এরশাদের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি প্রমাণ হয়, যা বিরোধীদলীয় নেত্রীর চেয়ে এরশাদের রাজনীতি চর্চার গুণগত মানোন্নয়ন নির্দেশ করে।
তবে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র চর্চার পথ কখনোই মসৃণ, শত্রুমুক্ত ছিল না এবং এখনও সে পথ কণ্টক বা শত্রুমুক্ত নয়। কেন নয়, তা জানা বা বোঝার জন্য ২০০৬-০৮-এর মধ্য পর্যায় পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাবলির দিকে আরেকবার দৃষ্টিপাত করলে ভাসা ভাসা কিছু ভেস্টেড ইন্টারেস্ট গ্রুপের কার্যাবলি ধরা পড়ে। এদের অনেকে দেশের তদানীন্তন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে 'ইয়েসউদ্দিনে' পরিণত করেছিল! এদের একটি দল ২০০১-২০০৬-এর স্বৈরশাসিকা ও তরুণ স্বৈরশাসকের সুরক্ষা-বূ্যহ তৈরি করে তাদের স্বার্থ রক্ষায় আবারও একাত্তরের মতো ২০০১-০৬-এর মতোই আঘাত করতে শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রী, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, অসাম্প্রদায়িক ছাত্র-শিক্ষক-সাংবাদিক ও হিন্দু-আদিবাসীদের। তখনই বুদ্ধিজীবী মহল চিনতে পেরেছিল এদের। ২০০৬, ০৭, ০৮ কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়। এরা আশপাশেই আছে। কতগুলো ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে, আরও হয়তো হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার এবং সব রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দল-গোষ্ঠীকে বুঝতে হবে_
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপর যে বিশাল বিডিআর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, এর নেপথ্য শক্তি, দল, পরিকল্পক কারা? বিচারের আওতায় তারা আসবে কি?
চারদলীয় জোট আমলে, পরের তত্ত্বাবধায়ক আমলে যখন বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়নি, সেখানে বর্তমান মহাজোট সরকার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার পরও কেন, কারা ঢাকা শহরেই এত উচ্চমাত্রার লোডশেডিং করছে, যা উপরোক্ত দুই জমানায় কখনও হতে দেখা যায়নি?
মহাজোট সরকার আসার পর চালের দাম একবার কমে আবার দ্রুত চাল-তেল অথবা চাল-ডাল অথবা চাল-পেঁয়াজ-দুধ ইত্যাদি নিত্যপণ্যের দাম অন্যায্যভাবে উচ্চমূল্যে ধরে রাখছে যেসব পণ্য ব্যবসায়ী তাদেরও লক্ষ্য শুধুই মুনাফা কি?
সম্প্রতি শেয়ারবাজার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অতি কষ্টের আয়, সর্বমোট আট হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বিবেকহীন ব্যবসায়ীরা প্রকৃত অর্থে কাদের পক্ষের দল? কেন এরা সৎ, বিবেকবান ইব্রাহিম খালেদ, গরিববান্ধব ড. আতিউর রহমানদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে? তার নিহিতার্থ কী?
জঙ্গি দমনে সক্রিয় একটি বাহিনীকে ধ্বংস করতে কারা ক্রসফায়ার, গুম করছে বা করাচ্ছে? কারা চাচ্ছে 'র্যাব' নামটি কলঙ্কিত হোক এবং শত শত জঙ্গি, অপরাধী তাদের হাতে ধরা না পড়ূক?
ড. ইউনূস নিজের নিয়ম নিজে ভেঙেছেন, নিজেই আদালতে গিয়েছেন সরকারের সমঝোতার আহ্বান না শুনে, কিন্তু কেন দেশি-বিদেশি উচ্চশিক্ষিতরা এ প্রশ্নে সরকারকে দোষারোপ করে? দুষ্ট লোকেরা কেন রটাচ্ছে, ইউনূসকে নাকি দ্বিতীয় 'ইয়েসউদ্দিন' বানাতে চান বিরোধী নেত্রী? অবশ্য কে কার 'ইয়েসউদ্দিন' হবেন, সেটি তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, উচ্চশিক্ষিত মানুষ এখনও কি গণতন্ত্রপন্থির পক্ষে না থেকে ষড়যন্ত্রপন্থির পক্ষে থাকবেন?
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর 'লিমন' সম্পর্কে তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের কোনো কর্মকর্তাকে কোনো বক্তব্য দিতে নিষেধ করে প্রদত্ত বক্তব্যটি প্রচারের চার ঘণ্টা পর তা বাসস প্রত্যাহার করল! এর চেয়ে সেই নিকট অতীতের প্রকাণ্ড ভূতটির অস্তিত্ব প্রমাণের আর কোনো প্রমাণ দরকার হয় কি? মনে পড়ছে না সেই চিত্রটি_ শেখ হাসিনাকে বিদেশ থেকে দেশে আসতে না দেওয়ার অস্বাভাবিক স্বৈরাচারী ঘটনা? এরপর বানানো এক চাঁদাবাজির ঘটনায় এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে মামলা করিয়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার অবিশ্বাস্য ঘটনা? গুজব উঠেছিল স্লো পয়জনিংয়ের চেষ্টারও। এসব ঘটনার নেপথ্যের নায়ক, পরিকল্পক কালো দানবটিকে বের করা না গেলেও তার সঙ্গে বাঙালির জীবনের শুরুর শত্রুটির চরিত্র বৈশিষ্ট্য কি খাপে খাপে মিলে যায় না?
এ শত্রু বাঙালি ও বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ, জঙ্গিমুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ উন্নত জাতি ও দেশ হতে বারবার বাধা দিয়েছে এবং দেবে_ এ বাধাকে, এ দানবকে, জাতিকে সব দল-মতের ঊধর্ে্ব উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। নতুবা অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা দানব গণতন্ত্র রক্ষার প্রহরী ও মুক্তিযুদ্ধপন্থিদের বিনাশে উদ্যত হবে।
মমতাজ লতিফ : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
দেশের উচ্চ আদালত সামরিক আইন, যা রাষ্ট্র শাসনের কোনো আইন নয়, সেটি বাতিল করেছেন। সংবিধানের চার মৌল স্তম্ভকে উচ্চ আদালত পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায় দ্বারা সংবিধানে পুনঃস্থাপন করেছেন। সম্প্রতি উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করেছেন একটি পর্যবেক্ষণসহ। পর্যবেক্ষণটি_ আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে কি-না তা সংসদকে বিবেচনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। বলাবাহুল্য, পর্যবেক্ষণ রায় নয়। এরশাদ এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন, আগের সংশোধনীগুলোর রায়ও গ্রহণ করেছেন_ এতে এরশাদের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি প্রমাণ হয়, যা বিরোধীদলীয় নেত্রীর চেয়ে এরশাদের রাজনীতি চর্চার গুণগত মানোন্নয়ন নির্দেশ করে।
তবে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র চর্চার পথ কখনোই মসৃণ, শত্রুমুক্ত ছিল না এবং এখনও সে পথ কণ্টক বা শত্রুমুক্ত নয়। কেন নয়, তা জানা বা বোঝার জন্য ২০০৬-০৮-এর মধ্য পর্যায় পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাবলির দিকে আরেকবার দৃষ্টিপাত করলে ভাসা ভাসা কিছু ভেস্টেড ইন্টারেস্ট গ্রুপের কার্যাবলি ধরা পড়ে। এদের অনেকে দেশের তদানীন্তন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে 'ইয়েসউদ্দিনে' পরিণত করেছিল! এদের একটি দল ২০০১-২০০৬-এর স্বৈরশাসিকা ও তরুণ স্বৈরশাসকের সুরক্ষা-বূ্যহ তৈরি করে তাদের স্বার্থ রক্ষায় আবারও একাত্তরের মতো ২০০১-০৬-এর মতোই আঘাত করতে শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রী, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, অসাম্প্রদায়িক ছাত্র-শিক্ষক-সাংবাদিক ও হিন্দু-আদিবাসীদের। তখনই বুদ্ধিজীবী মহল চিনতে পেরেছিল এদের। ২০০৬, ০৭, ০৮ কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়। এরা আশপাশেই আছে। কতগুলো ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে, আরও হয়তো হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার এবং সব রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দল-গোষ্ঠীকে বুঝতে হবে_
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপর যে বিশাল বিডিআর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, এর নেপথ্য শক্তি, দল, পরিকল্পক কারা? বিচারের আওতায় তারা আসবে কি?
চারদলীয় জোট আমলে, পরের তত্ত্বাবধায়ক আমলে যখন বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়নি, সেখানে বর্তমান মহাজোট সরকার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার পরও কেন, কারা ঢাকা শহরেই এত উচ্চমাত্রার লোডশেডিং করছে, যা উপরোক্ত দুই জমানায় কখনও হতে দেখা যায়নি?
মহাজোট সরকার আসার পর চালের দাম একবার কমে আবার দ্রুত চাল-তেল অথবা চাল-ডাল অথবা চাল-পেঁয়াজ-দুধ ইত্যাদি নিত্যপণ্যের দাম অন্যায্যভাবে উচ্চমূল্যে ধরে রাখছে যেসব পণ্য ব্যবসায়ী তাদেরও লক্ষ্য শুধুই মুনাফা কি?
সম্প্রতি শেয়ারবাজার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অতি কষ্টের আয়, সর্বমোট আট হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বিবেকহীন ব্যবসায়ীরা প্রকৃত অর্থে কাদের পক্ষের দল? কেন এরা সৎ, বিবেকবান ইব্রাহিম খালেদ, গরিববান্ধব ড. আতিউর রহমানদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে? তার নিহিতার্থ কী?
জঙ্গি দমনে সক্রিয় একটি বাহিনীকে ধ্বংস করতে কারা ক্রসফায়ার, গুম করছে বা করাচ্ছে? কারা চাচ্ছে 'র্যাব' নামটি কলঙ্কিত হোক এবং শত শত জঙ্গি, অপরাধী তাদের হাতে ধরা না পড়ূক?
ড. ইউনূস নিজের নিয়ম নিজে ভেঙেছেন, নিজেই আদালতে গিয়েছেন সরকারের সমঝোতার আহ্বান না শুনে, কিন্তু কেন দেশি-বিদেশি উচ্চশিক্ষিতরা এ প্রশ্নে সরকারকে দোষারোপ করে? দুষ্ট লোকেরা কেন রটাচ্ছে, ইউনূসকে নাকি দ্বিতীয় 'ইয়েসউদ্দিন' বানাতে চান বিরোধী নেত্রী? অবশ্য কে কার 'ইয়েসউদ্দিন' হবেন, সেটি তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, উচ্চশিক্ষিত মানুষ এখনও কি গণতন্ত্রপন্থির পক্ষে না থেকে ষড়যন্ত্রপন্থির পক্ষে থাকবেন?
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর 'লিমন' সম্পর্কে তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের কোনো কর্মকর্তাকে কোনো বক্তব্য দিতে নিষেধ করে প্রদত্ত বক্তব্যটি প্রচারের চার ঘণ্টা পর তা বাসস প্রত্যাহার করল! এর চেয়ে সেই নিকট অতীতের প্রকাণ্ড ভূতটির অস্তিত্ব প্রমাণের আর কোনো প্রমাণ দরকার হয় কি? মনে পড়ছে না সেই চিত্রটি_ শেখ হাসিনাকে বিদেশ থেকে দেশে আসতে না দেওয়ার অস্বাভাবিক স্বৈরাচারী ঘটনা? এরপর বানানো এক চাঁদাবাজির ঘটনায় এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে মামলা করিয়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার অবিশ্বাস্য ঘটনা? গুজব উঠেছিল স্লো পয়জনিংয়ের চেষ্টারও। এসব ঘটনার নেপথ্যের নায়ক, পরিকল্পক কালো দানবটিকে বের করা না গেলেও তার সঙ্গে বাঙালির জীবনের শুরুর শত্রুটির চরিত্র বৈশিষ্ট্য কি খাপে খাপে মিলে যায় না?
এ শত্রু বাঙালি ও বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ, জঙ্গিমুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ উন্নত জাতি ও দেশ হতে বারবার বাধা দিয়েছে এবং দেবে_ এ বাধাকে, এ দানবকে, জাতিকে সব দল-মতের ঊধর্ে্ব উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। নতুবা অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা দানব গণতন্ত্র রক্ষার প্রহরী ও মুক্তিযুদ্ধপন্থিদের বিনাশে উদ্যত হবে।
মমতাজ লতিফ : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
No comments