এসএসসি ’১২ অদম্য মেধাবী-ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা
বার্ধক্যজনিত অসুস্থ বাবার সংসারে খাতা-কলম জোটানো কঠিন হয়ে পড়ে ইমান আলীর। বাবাহারা হাফছা আরজু দিনমজুর দুই ভাইয়ের সংসারে শত কষ্টেও হাল ছাড়েনি। বাকপ্রতিবন্ধী দিনমজুর বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় শামীমা আক্তার। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মাকে সঙ্গে নিয়ে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছে সাজেদুল।
এরা সবাই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে পরিবারের সদস্যদের। সাফল্য পাওয়া এই চারজনের কষ্টের কথা শোনা যাক আজ:
অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিপিএ-৫ পাওয়া এমন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৫০ জনকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হবে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী, প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়।
ইমান আলী: ইমান আলীর বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের মুরাদাবাদ গ্রামে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেশিন টুলস অপারেশন বিভাগের ছাত্র সে। ওই প্রতিষ্ঠানের ১৬৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সেই একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে।
যমুনা নদীর বাঁধসংলগ্ন একটি কুঁড়েঘর ছাড়া তাদের আর ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই। বাবা মো. কুদ্দুছ আলী (৭০) আগে দিনমজুর ছিলেন। শরীর কুলোয় না। বড় চার ছেলে অন্যত্র চলে গেছে। চেয়েচিন্তে সংসার চালান। ইমান আলী বলে, ‘আমার পড়ার কোনো চেয়ার-টেবিল নেই। খাতা-কলমও জুটত না। দিনের পড়া দিনে শেষ করলে পরীক্ষার রাতে কোনো সমস্যা হয় না। আমি যন্ত্র প্রকৌশলী হতে চাই।’
বাবা কুদ্দুছ আলী বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। মা রাবিয়া বেগম বললেন, ‘ইমান তো পড়বের চায়। খালি পড়া পড়া করে। খচ্চ (খরচ) কই পামু?’ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবদুল মতিন বলেন, ‘ইমান আলীর মতো পড়ালেখার প্রতি এত আগ্রহ আর কাউকে দেখা যায়নি। ইচ্ছাশক্তি দিয়েই সে ভালো ফলাফল করে সবাইকে অবাক করেছে।’
উন্মে হাফছা আরজু: কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামে ছোট্ট কুঁড়েঘরে উন্মে হাফছা আরজুর বসবাস। ১১ বছর আগে বাবা আলী আমদের মৃত্যু হলে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। বড় দুই ভাই রংমিস্ত্রির কাজ করে কোনোমতে চালাচ্ছেন পাঁচ সদস্যের সংসার। মা জাহানারা বেগম জানান, এত কষ্ট সহ্য করেও আরজু লেখাপড়া করতে আগ্রহী। ছোটবেলা থেকেই সে মেধাবী। কোনো প্রাইভেট ছাড়াই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় রামু বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহমদ জানান, খেয়ে না- খেয়ে এই মেধাবী ছাত্রী এ পর্যন্ত এসেছে। সুযোগ পেলে সে ভালো করবে।
শামীমা আক্তার: শামীমার বাবা নুরুল আলম বাকপ্রতিবন্ধী। জেলে নৌকায় প্রতিদিন ১৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন তিনি। এই টাকা থেকে খেয়ে না-খেয়ে তিনি প্রতিদিন ২০ টাকা আলাদা করে রাখতেন শামীমার পড়ার খরচের জন্য। বাবার এই কষ্টের মান রেখেছে শামীমা। সে এবার সুনামগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৫ (সব বিষয়ে-জিপিএ-৫) পেয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহরের উত্তর আরপিননগর এলাকায় ছোট্ট একচালা টিনের ঘরে পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাস করেন নুরুল আলম ও খাদিজা বেগম। শামীমা জানায়, বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু প্রাইভেট খরচের কথা ভেবে ওই বিভাগে পড়া হয়নি। বাবাকে জড়িয়ে ধরে শামীমা বলে, ‘বাবা কথা বলতে পারেন না। এরপরও তিনি সারা দিন কষ্ট করে যা রোজগার করেন সেই টাকা থেকে আমার জন্য ২০ টাকা আলাদা করে রাখেন। আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ করবই।’
সাজেদুল ইসলাম: কুড়িগ্রাম পৌরসভার নাজিরা মিয়াপাড়া গ্রামের সাজেদুল ইসলামের বাবা নেই। মা মোসলেমা বেগম ঝিয়ের কাজ করেন। সে নীলারাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মোসলেমা বলেন, ঝিয়ের কাজ করে যা পাই তা দুই মা-ছেলে ভাগ করে খাই। তিনি আরও বলেন, সাজেদুল প্রায় অসুস্থ থাকে, টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারি না। পরীক্ষার আগে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্কুলের শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে তার চিকিৎসা করায়। ফরম পূরণের টাকা ছিল না। মানুষের সাহায্য নিয়ে সাজেদুলের ফরম পূরণ করতে হয়েছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন, মোস্তফা মনজু, জামালপুর; আব্দুল কুদ্দুস, কক্সবাজার; খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ; সফি খান, কুড়িগ্রাম।]
অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিপিএ-৫ পাওয়া এমন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৫০ জনকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হবে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী, প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়।
ইমান আলী: ইমান আলীর বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের মুরাদাবাদ গ্রামে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেশিন টুলস অপারেশন বিভাগের ছাত্র সে। ওই প্রতিষ্ঠানের ১৬৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সেই একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে।
যমুনা নদীর বাঁধসংলগ্ন একটি কুঁড়েঘর ছাড়া তাদের আর ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই। বাবা মো. কুদ্দুছ আলী (৭০) আগে দিনমজুর ছিলেন। শরীর কুলোয় না। বড় চার ছেলে অন্যত্র চলে গেছে। চেয়েচিন্তে সংসার চালান। ইমান আলী বলে, ‘আমার পড়ার কোনো চেয়ার-টেবিল নেই। খাতা-কলমও জুটত না। দিনের পড়া দিনে শেষ করলে পরীক্ষার রাতে কোনো সমস্যা হয় না। আমি যন্ত্র প্রকৌশলী হতে চাই।’
বাবা কুদ্দুছ আলী বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। মা রাবিয়া বেগম বললেন, ‘ইমান তো পড়বের চায়। খালি পড়া পড়া করে। খচ্চ (খরচ) কই পামু?’ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবদুল মতিন বলেন, ‘ইমান আলীর মতো পড়ালেখার প্রতি এত আগ্রহ আর কাউকে দেখা যায়নি। ইচ্ছাশক্তি দিয়েই সে ভালো ফলাফল করে সবাইকে অবাক করেছে।’
উন্মে হাফছা আরজু: কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামে ছোট্ট কুঁড়েঘরে উন্মে হাফছা আরজুর বসবাস। ১১ বছর আগে বাবা আলী আমদের মৃত্যু হলে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। বড় দুই ভাই রংমিস্ত্রির কাজ করে কোনোমতে চালাচ্ছেন পাঁচ সদস্যের সংসার। মা জাহানারা বেগম জানান, এত কষ্ট সহ্য করেও আরজু লেখাপড়া করতে আগ্রহী। ছোটবেলা থেকেই সে মেধাবী। কোনো প্রাইভেট ছাড়াই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় রামু বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহমদ জানান, খেয়ে না- খেয়ে এই মেধাবী ছাত্রী এ পর্যন্ত এসেছে। সুযোগ পেলে সে ভালো করবে।
শামীমা আক্তার: শামীমার বাবা নুরুল আলম বাকপ্রতিবন্ধী। জেলে নৌকায় প্রতিদিন ১৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন তিনি। এই টাকা থেকে খেয়ে না-খেয়ে তিনি প্রতিদিন ২০ টাকা আলাদা করে রাখতেন শামীমার পড়ার খরচের জন্য। বাবার এই কষ্টের মান রেখেছে শামীমা। সে এবার সুনামগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৫ (সব বিষয়ে-জিপিএ-৫) পেয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহরের উত্তর আরপিননগর এলাকায় ছোট্ট একচালা টিনের ঘরে পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাস করেন নুরুল আলম ও খাদিজা বেগম। শামীমা জানায়, বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু প্রাইভেট খরচের কথা ভেবে ওই বিভাগে পড়া হয়নি। বাবাকে জড়িয়ে ধরে শামীমা বলে, ‘বাবা কথা বলতে পারেন না। এরপরও তিনি সারা দিন কষ্ট করে যা রোজগার করেন সেই টাকা থেকে আমার জন্য ২০ টাকা আলাদা করে রাখেন। আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ করবই।’
সাজেদুল ইসলাম: কুড়িগ্রাম পৌরসভার নাজিরা মিয়াপাড়া গ্রামের সাজেদুল ইসলামের বাবা নেই। মা মোসলেমা বেগম ঝিয়ের কাজ করেন। সে নীলারাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মোসলেমা বলেন, ঝিয়ের কাজ করে যা পাই তা দুই মা-ছেলে ভাগ করে খাই। তিনি আরও বলেন, সাজেদুল প্রায় অসুস্থ থাকে, টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারি না। পরীক্ষার আগে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্কুলের শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে তার চিকিৎসা করায়। ফরম পূরণের টাকা ছিল না। মানুষের সাহায্য নিয়ে সাজেদুলের ফরম পূরণ করতে হয়েছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন, মোস্তফা মনজু, জামালপুর; আব্দুল কুদ্দুস, কক্সবাজার; খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ; সফি খান, কুড়িগ্রাম।]
No comments