যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ১১ দলের আলোচনা : সরকারের নীতিনির্ধারকরাও বিচার নিয়ে বিভ্রান্ত : কয়েকজন ‘অপদার্থ’ মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত : ইনু

ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক ১১ দলের আলোচনায় বক্তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে ঠুঁটো জগন্নাথ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারকরাও এ বিচার নিয়ে বিভ্রান্ত। বিচার সম্পর্কে তাদের ধারণাও নেই। তাদের উপলব্ধির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কূটনৈতিক তত্পরতা দেখা যাচ্ছে না। বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ সরকারের আমলে বিচার শেষ করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।


যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। এতে মহাজোটের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরকারের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, কয়েকজন ‘অপদার্থ’ মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রতবোধ করছি। মহজোট নেত্রী শেখ হাসিনার একলা চল নীতি আমাদের ক্ষুব্ধ করছে।
এগারো দলের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান বাবুর সভাপতিত্বে বিকালে আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অজয় রায়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. কর্নেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ বীরপ্রতীক, নবগঠিত গণঐক্যের আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, গণআজাদী লীগ সভাপতি হাজী আবদুস সামাদ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের খতিব মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে অসম্পূর্ণ ও ঠুঁটো জগন্নাথ আখ্যায়িত করে শাহরিয়ার কবির বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব নয়। এর তদন্ত সেল নেই, আর্কাইভ নেই, আইটি সেল নেই এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তাও নেই। এত সঙ্কটের পরও ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু প্রসিকিউটররাও এখনও বিচারের জন্য প্রস্তুত নন। বিচারের আগে যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে প্রসিকিউটরদের যথেষ্ট জানতে হবে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রসিকিউশনে আরও দক্ষ ও সত্ আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র রুখতে আমরা সরকারের কোনো কূটনৈতিক তত্পরতা দেখছি না। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও এ বিচার নিয়ে বিভ্রান্ত। বিচার সম্পর্কে তাদের ধারণাও নেই। তাদের উপলব্ধির যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা কারাগার থেকে বেরিয়ে এলে এ ট্রাইব্যুনালেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমাদের সবার বিচার হবে। কারণ আমরা তাদের যুদ্ধাপরাধী বলছি। আর আগামীতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে হয়তো আওয়ামী লীগ নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন, কিন্তু আমাদের কী হবে! আমরা তো যেতে পারব না।
যুদ্ধারপাধীদের বিচারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাশেদ খান মেনন বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাত্ করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের বন্ধু বিভিন্ন বিদেশি আইনজীবীরাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ বিচারের বিরোধিতা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র বারবার এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে আমরা তেমন কোনো কূটনৈতিক তত্পরতা দেখছি না।
তিনি বলেন, এ বিচার নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে থাকা সন্দেহ, সংশয় ও অনাস্থা দূর করতে হবে। সব জনগণকে রাস্তায় নামাতে হবে।
হাসানুল হক ইনু সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, কয়েকজন ‘অপদার্থ’ মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রতবোধ করছি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং শেখ হাসিনার একলা চল নীতি আমাদের ক্ষুব্ধ করছে। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ফণা তুলছেন। আমরা মহাসমস্যায় পড়ে গেছি। দেশের এত সমস্যা মোকাবিলা করব না কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব।
লে. কর্নেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ বলেন, ১ বছর ৮ মাসে কেবল একজন অপরাধীর একটি কেসের চার্জশিট দেয়া হয়েছে, তাহলে বাকি ১১ হাজার অপরাধীর বিচার কবে হবে?
যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা যেভাবে যুদ্ধে নেমেছি তাতে আমাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ট্রাইবুনালকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বিচারের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের খালাস করে দেয়ার জন্য এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য। আমরা সেটাই চাই।
মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ বলেন, আওয়ামী লীগের অনেকেই সেদিন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন। তারা দ্বিজাতিতত্ত্বেও সমর্থন দিয়েছিলেন। সেজন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তারা আজও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। তিনি বলেন, শুধু প্রগতিশীলদের নিয়েই জাতীয় ঐক্য সম্ভব নয়। সেজন্য এ বিচারের পক্ষে দেশের সব জনগণকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.