রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি

রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। গতকাল সকাল ১১টায় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলি কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বিজ্ঞান ও তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ও রাশিয়ার পক্ষে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সে দেশের রাষ্ট্রীয় পরমাণু জ্বালানি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক সের্গেই কিরিয়েনকো।


চুক্তিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া সরকার রূপপুর পরমাণু প্রকল্প এলাকায় আনুমানিক প্রতিটি ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা দেবে রাশিয়া। প্রয়োজনীয় অর্থায়নের বিষয়ে উভয় সরকারের মধ্যে একটি পৃথক চুক্তি হবে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়া। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়া ফেরত নেবে। প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়নে রাশিয়া প্রশিক্ষণ সহযোগিতা দেবে। চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়নে রোসাটম ও বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া রাশিয়ার পক্ষে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি
'অ্যাটমস্টোরি এক্সপোর্ট' ঠিকাদার হিসেবে এবং বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কাস্টমার হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
চুক্তি স্বাক্ষর শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে চুক্তিটির ওপর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, রাশিয়ার রোসাটমের মহাপরিচালক সের্গেই কিরিয়েনকো ও পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ড. গেন্নাদি পি. ট্রটসেঙ্কো ও মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. এসএম সাইফুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, জাপানের ফুকুশিমা দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখেই রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজটি বর্তমান সরকারের মেয়াদেই শুরু হবে।
সের্গেই কিরিয়েনকো চুক্তিটিকে 'জটিল চুক্তি' হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একটি সাধারণ চুক্তি হলে শুধু পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি থাকে। এখানে যে চুক্তিটি হলো তার আওতায় জ্বালানি সরবরাহ, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেরত নেওয়া, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থায়ন, আইনি অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাশিয়া সহায়তা করবে। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে, ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, 'আমরা নতুন নকশা অনুযায়ী পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করব, যেখানে পাঁচটি নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে জানতে চাইলে রোসাটম মহাপরিচালক সের্গেই বলেন, কারিগরি বিভিন্ন দিক চূড়ান্ত ও কিছু কাগুজে প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে হিসাব করা যাবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে বলে জানান সের্গেই কিরিয়েনকো। তিনি বলেন, 'আমরা রাশিয়া ও অন্য দেশে এ পর্যন্ত ২৯টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। একই নকশা অনুযায়ী বাংলাদেশেও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।' বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোও এই নির্মাণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারে।
রোসাটম মহাপরিচালক গতকালই ঢাকায় আসেন। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর সকাল ১১টায় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিকেলেই তিনি ঢাকা ছেড়ে গেছেন। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সহযোগিতা বিষয়ে চুক্তিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় হওয়ার কথা ছিল। এ বছরের শেষে তার মস্কো সফরে যাওয়ার কথা ছিল।
গত ১ আগস্ট সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য অনুমোদন পায়। গত ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আইনি অবকাঠামো উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তির অনুমোদন করা হয়।
মহাজোট সরকার গঠনের পরপরই ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প (আরএনপিপি) বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্প্রতি পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক ইনিশিয়াল চুক্তি ও একই বিষয়ে অবকাঠামো চুক্তি সই হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.