‘ওপরের নির্দেশে’ খোকন গ্রেফতার : আসল খুনিদের আড়াল করার অপচেষ্টা - বিএনপি

বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও নরসিংদী জেলা কমিটির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনকে মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল সকালে তাকে অতিগোপনে নরসিংদী নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। নরসিংদী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খোকনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেন নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া। তবে এ ঘটনায় গত রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা অতিক্রম হলেও থানায় মামলা হয়নি।


ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) এডিসি মেহেদী হাসান বলেছেন, খোকনকে গ্রেফতার করেছে নরসিংদী জেলা পুলিশ। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের সহায়তা করেছে। রাত ৩টার দিকে খিলগাঁও মাটির মসজিদের বাসা থেকে খোকনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে নরসিংদী জেল সুপারের কক্ষে বসা খোকনের সঙ্গে গতকাল সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে ডিবি পুলিশ আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। আমি দেশবাসীর কাছে বিচার চাই। অপরদিকে সন্ধ্যায় খোকনের সঙ্গে চিনিশপুরের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে
পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খোকনকে অযথা হয়রানি না করে তার মুক্তির দাবি করা হয়।
প্রকৃত খুনিকে আড়াল করতেই খোকনকে গ্রেফতার : বিএনপি
এদিকে নরসিংদীর পৌর মেয়রের প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতেই সরকার জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। অবিলম্বে তার মুক্তি এবং প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এদিকে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা অভিযোগ করেন, রাত পৌনে ৩টায় খোকনকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হলেও সকালে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
খোকনের মুক্তি দাবি করে গতকাল সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এম ইলিয়াস আলী বলেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগের হাতে খুন হয়েছেন নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন। খুনিদের বিরুদ্ধে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগও করা হয়েছে। সরকারি দলের এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে নরসিংদীতে হরতাল পালিত হচ্ছে। অথচ আওয়ামী সরকার ঐতিহ্যগতভাবে নিজ দলের দ্বন্দ্বের খুনের দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে। রাতে বাসায় তল্লাশি চালিয়ে বিএনপি নেতা খোকনকে গ্রেফতার করার ঘটনা এ সরকারের অশুভ রাজনীতির পরিচয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এটা সরকারের মানবতাবিরোধী কাজেরই একটি অংশ অভিহিত করে তিনি অবিলম্বে খোকনের মুক্তি দাবি করেন।
এদিকে সকালে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী জানান, ভোর রাতে গ্রেফতার করা হলেও সকাল এগারোটা পর্যন্ত খোকনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে না। তিনি এই গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে খোকন কোথায় আছেন তা প্রকাশ করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগের কাছে জোর দাবি জানান।
খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, তার স্বামী খায়রুল কবির খোকন রাত বারোটার দিকে নরসিংদীর গুলিবিদ্ধ মেয়র লোকমানকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যান। সেখান থেকে বাসায় এসে ঘুমিয়েছিলেন। তারপর পৌনে তিনটার দিকে সাদা পোশাকের পুলিশ বাসায় আসে। আমি তাদের বলি খোকনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাকে কেন নিয়ে যাবেন? পুলিশ বলে কোনো অসুবিধা নেই। জিজ্ঞাসাবাদ করে তাকে সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। শিরিন বলেন, ডিবি পুলিশ খোকনকে নিয়ে যাওয়ার পর আমি আমার গাড়ি নিয়ে তাদের গাড়ি ফলো করে ডিবি অফিস পর্যন্ত যাই। ডিবি অফিসের গেট দিয়ে গাড়ি ভিতরে ঢোকার পর আর আমাকে ঢুকতে দেয়নি। ভেতর থেকে মোবাইলে খোকন আমার সঙ্গে কথা বলেন। পরে তার মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ তখনও বলে কোনো সমস্যা নেই। আপনারা চলে যান। সকালে নাস্তা নিয়ে ডিবি অফিসে যাওয়ার পর সেখান থেকে বলা হয় তিনি ডিবি অফিসে নেই।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমি খুবই উত্কণ্ঠার মধ্যে আছি। তাকে কোথায় নিয়ে রাখা হয়েছে তা-ও জানাচ্ছে না। আমি দ্রুত জানতে চাই তাকে কোথায় রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা পত্রিকায় জানতে পেরেছি নরসিংদীর মেয়র লোকমান হত্যার ঘটনা তাদের দলীয় কোন্দল। সেখানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীরা এই হত্যাকাণ্ডের দোষ চাপিয়েছে। সেখানে খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেফতারের কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাই না।
এদিকে বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের মুক্তির দাবিতে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে মিছিলটি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে আরও অংশ নেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাবিবুর রশিদ হাবিব, ওমর ফারুক সাফিন, যুগ্ম সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা জাভেদ হাসান স্বাধীন, মাহবুবুর রশিদ মাহবুব, বিল্লাল হোসেন তারেক, মহিদুল হাসান হিরু, আবুল মনসুর খান দিপক, জাকির হোসেন খানসহ কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের নেতারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ক্ষোভ : বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকনকে অন্যায়, অসত্ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেফতার এবং পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, নিজেদের অভ্যন্তরীণ হানাহানি, রক্তারক্তির হোলিখেলায় বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের দৃষ্টিকে ঝাপসা করার জন্য বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায়, পীড়ন ও নির্যাতনের এক নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠেছে। শাসক দলের দুষ্কর্মের অংশ হিসেবেই সরকার খোকনকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করেছে। নব্বইয়ের দশকে দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কঠিন সংগ্রামে ছাত্রনেতা হিসেবে খোকন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। খোকনের মতো একজন জাতীয় নেতৃত্বকে হেয় করতে শাসক দলের অন্দর মহলের দুর্বৃত্তদের অপকর্মের দায় চাপিয়ে দেয়ার জন্য গভীর রাতে বাসা থেকে খোকনের মতো একজন সর্বজনপ্রিয় মানুষকে গ্রেফতার এবং মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খোকনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে কারান্তরীণ করার ঘটনায় সরকারের নির্লজ্জ দুঃশাসনের আর একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো।
মির্জা আলমগীর বলেন, পতনের সাইরেন বেজে উঠেছে বলেই সরকার কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে বিএনপির সংগ্রামী বলিষ্ঠ জাতীয় নেতাকে সাজানো ঘটনায় গ্রেফতার করা শুরু করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসিচব বলেন, ‘আমি অবিলম্বে খায়রুল কবির খোকনের মুক্তি দাবি করছি, অন্যথায় জনগণের প্রতিশোধ ও ক্রোধের দাবানল থেকে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী রেহাই পাবে না।’

No comments

Powered by Blogger.