বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত বিধিমালা-দেশিদের বেলায় কড়াকড়ি আর বিদেশিদের বেলায় ব্যাপক ছাড় by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকলেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ব্যাপক ছাড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত বিধিমালা-২০১১। এতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ছোটখাটো ভাড়া বাড়িতে কোচিং সেন্টারের ব্যবসা চালুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং এই টিউশন প্রভাইডিং, স্টাডি, টিচিং কিংবা কোচিং সেন্টার শুরু করতে মাত্র তিন হাজার বর্গফুট ভাড়া জায়গাই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে।
শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানিয়েছেন, বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশে এজেন্ট হিসেবে শাখা ক্যাম্পাস
করতে পারবে না। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বিধিমালাটি সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কেননা এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ স্বার্থের বিষয়টি জড়িত। তিনি জানান, এ বছরই বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি এই বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে। দেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে যেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাসকে মান বিচারের অন্যতম মাপকাঠি ধরা হয়েছে, সেখানে এই খসড়া বিধিমালায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বেলায় এ ধরনের কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ধারা-৬ প্রযোজ্য হবে। ওই আইনের ধারা ৬-এ ২৫ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাড়ির কথা বলা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম হায়দার বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অখণ্ড এক একর জমিতে শত কোটি টাকা মূল্যমানের আয়তনের ক্যাম্পাস করতে না পারলে যেখানে দেশিদের ভর্তি বন্ধের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বিদেশিদের বেলায় মাত্র তিন হাজার বর্গফুট ভাড়া জায়গার শর্ত বোধগম্য নয়। যদি এ রকম স্বল্প আয়তনের ভাড়া জায়গাই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও ডিগ্রি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত হবে, তবে দেশিদের বেলায় এক একর ক্যাম্পাস নিয়ে এত তাণ্ডব কেন?
ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক বলেন, খসড়া এই বিধিমালার অন্যতম সমস্যা হচ্ছে_ এখানে 'স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়' বা 'শাখা ক্যাম্পাস' বা 'কোচিং সেন্টার' বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তার স্পষ্ট ও বিস্তারিত কোনো সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা নেই। ফলে ধারণা করা যায়, এত দিন কোনো অনুমতি ছাড়াই যারা বিদেশি সার্টিফিকেটের বাণিজ্য করছিল, তারা কেউই ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে না গিয়ে স্বল্প তহবিলে তিন হাজার বর্গফুট ভাড়া জায়গায় 'শাখা ক্যাম্পাস' বা 'কোচিং সেন্টার' নামে আগের মতোই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে। এখন এই অপ্রতুল শিক্ষা কার্যক্রম আইনি বৈধতা পাবে। যে মানোন্নয়নের নামে এই বিধিমালা প্রণয়ন, তা আদৌ পূরণ হবে না এবং একটি মহলের ব্যবসায়িক স্বার্থই এতে পাকাপোক্ত হবে। তিনি আরো বলেন, 'পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়' ও 'শাখা ক্যাম্পাস'-এর সঠিক সংজ্ঞা প্রণয়ন জরুরি। উচ্চশিক্ষার সমান্তরাল মান বজায় রাখতে 'পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়' ছাড়া আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোনো ধরনের ডিগ্রি প্রদানের অনুমতি না দেওয়া এবং 'পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়'-এর ক্ষেত্রে এক একর স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শর্ত সমানভাবে প্রযোজ্য করা একান্ত অপরিহার্য। 'কোচিং সেন্টার'-জাতীয় কোনো ব্যবস্থাই থাকা উচিত নয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই বিধিমালায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদেশিদেরও প্রথমবারের মতো তহবিল জমা রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পাঁচ কোটি, শাখা ক্যাম্পাসের জন্য দুই কোটি ও কোচিং সেন্টারের জন্য ৫০ লাখ টাকা থাকতে হবে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বলেন, এই বিধিমালায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ফি ও বেতনের জন্য ইউজিসির অনুমোদনের যে নিয়ম রাখা হয়েছে তার পরিবর্তন দরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুসারে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, সিন্ডিকেটসহ সব কমিটি ও প্রশাসনিক পদ গঠন করার কথা বললেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোনো প্রশাসনিক কাঠামোর বিধান রাখা হয়নি। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটিসহ বিবিধ কমিটি গঠন ও তার আকৃতি বলা থাকলেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বেলায় এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
ওই অধ্যাপক বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগদান কার্যকরের জন্য ব্যবস্থা নিলেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও তার শাখার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্তারোপ করছে না। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা মূলত দূরশিক্ষণ/দূরক্যাম্পাস-এর আওতায় পড়লেও দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
করতে পারবে না। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বিধিমালাটি সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কেননা এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ স্বার্থের বিষয়টি জড়িত। তিনি জানান, এ বছরই বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি এই বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে। দেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে যেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাসকে মান বিচারের অন্যতম মাপকাঠি ধরা হয়েছে, সেখানে এই খসড়া বিধিমালায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বেলায় এ ধরনের কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ধারা-৬ প্রযোজ্য হবে। ওই আইনের ধারা ৬-এ ২৫ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাড়ির কথা বলা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম হায়দার বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অখণ্ড এক একর জমিতে শত কোটি টাকা মূল্যমানের আয়তনের ক্যাম্পাস করতে না পারলে যেখানে দেশিদের ভর্তি বন্ধের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বিদেশিদের বেলায় মাত্র তিন হাজার বর্গফুট ভাড়া জায়গার শর্ত বোধগম্য নয়। যদি এ রকম স্বল্প আয়তনের ভাড়া জায়গাই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও ডিগ্রি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত হবে, তবে দেশিদের বেলায় এক একর ক্যাম্পাস নিয়ে এত তাণ্ডব কেন?
ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক বলেন, খসড়া এই বিধিমালার অন্যতম সমস্যা হচ্ছে_ এখানে 'স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়' বা 'শাখা ক্যাম্পাস' বা 'কোচিং সেন্টার' বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তার স্পষ্ট ও বিস্তারিত কোনো সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা নেই। ফলে ধারণা করা যায়, এত দিন কোনো অনুমতি ছাড়াই যারা বিদেশি সার্টিফিকেটের বাণিজ্য করছিল, তারা কেউই ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে না গিয়ে স্বল্প তহবিলে তিন হাজার বর্গফুট ভাড়া জায়গায় 'শাখা ক্যাম্পাস' বা 'কোচিং সেন্টার' নামে আগের মতোই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে। এখন এই অপ্রতুল শিক্ষা কার্যক্রম আইনি বৈধতা পাবে। যে মানোন্নয়নের নামে এই বিধিমালা প্রণয়ন, তা আদৌ পূরণ হবে না এবং একটি মহলের ব্যবসায়িক স্বার্থই এতে পাকাপোক্ত হবে। তিনি আরো বলেন, 'পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়' ও 'শাখা ক্যাম্পাস'-এর সঠিক সংজ্ঞা প্রণয়ন জরুরি। উচ্চশিক্ষার সমান্তরাল মান বজায় রাখতে 'পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়' ছাড়া আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোনো ধরনের ডিগ্রি প্রদানের অনুমতি না দেওয়া এবং 'পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়'-এর ক্ষেত্রে এক একর স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শর্ত সমানভাবে প্রযোজ্য করা একান্ত অপরিহার্য। 'কোচিং সেন্টার'-জাতীয় কোনো ব্যবস্থাই থাকা উচিত নয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই বিধিমালায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদেশিদেরও প্রথমবারের মতো তহবিল জমা রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পাঁচ কোটি, শাখা ক্যাম্পাসের জন্য দুই কোটি ও কোচিং সেন্টারের জন্য ৫০ লাখ টাকা থাকতে হবে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বলেন, এই বিধিমালায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ফি ও বেতনের জন্য ইউজিসির অনুমোদনের যে নিয়ম রাখা হয়েছে তার পরিবর্তন দরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুসারে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, সিন্ডিকেটসহ সব কমিটি ও প্রশাসনিক পদ গঠন করার কথা বললেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোনো প্রশাসনিক কাঠামোর বিধান রাখা হয়নি। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটিসহ বিবিধ কমিটি গঠন ও তার আকৃতি বলা থাকলেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বেলায় এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
ওই অধ্যাপক বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগদান কার্যকরের জন্য ব্যবস্থা নিলেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও তার শাখার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্তারোপ করছে না। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা মূলত দূরশিক্ষণ/দূরক্যাম্পাস-এর আওতায় পড়লেও দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
No comments