অন্য ভুবন-পাস্তাটা ভালোই রাঁধেন ভেত্তেল

তাঁরাও আর দশজন মানুষের মতো। আছে আবেগ, আছে ভালোবাসা। কিন্তু তাঁদের খেলোয়াড়ি জীবনের বাইরের অনেক কিছুই আমাদের অজানা। ক্রীড়াবিদদের অজানা জীবনটা কেমন, সেটা জানতেই নিয়মিত এ আয়োজন। জেনে নিন সেবাস্তিয়ান ভেত্তেলের অন্য ভুবনটা কেমনমাইকেল জর্ডান, মাইকেল শুমাখার আর মাইকেল জ্যাকসন। এই তিন 'মাইকেল' কেবলই চলে আসেন স্কুলপড়ুয়া এক জার্মান কিশোরের মনে। এই তিনকে নিয়েই তার বেলা যায় গড়িয়ে, মন বসে না পড়ার টেবিলেও। পরীক্ষার ফলও তাই খারাপ হতে শুরু করে।


গলাটা ঠিক গায়কসুলভ নয়, তাই একদিন মাইকেল জ্যাকসন চলে গেলেন স্বপ্নের দুনিয়া থেকে। উচ্চতাও যে সাহস জোগাচ্ছে না মাইকেল জর্ডান হতে, তাই বাস্কেটবলের দুনিয়ায় রাজত্ব করার ইচ্ছেটাও উড়াল দিল। থেকে গেলেন শুধু স্বদেশি এক 'মাইকেল' শুমাখার। ছোট সেবাস্তিয়ান ভেত্তেল তখন থেকেই গোঁ ধরেছিলেন, গতির দুনিয়ার মুকুটটা তাঁর চাই-ই চাই। এই স্বপ্নটা অবশ্য সত্যি হয়েছে ভেত্তেলের, ফরমুলা ওয়ানের ১ নম্বর চালক এখন তিনিই।
সবচেয়ে কম বয়সে ফরমুলা ওয়ানের ড্রাইভারস চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী সেবাস্তিয়ান ভেত্তেলের অন্য ভুবনটা অবশ্য আরো দশজন তরুণের মতোই। তাঁরও ভালো লাগে অ্যাডভেঞ্চার। আড্ডা আর পড়াশোনার প্রতি আকর্ষণটা যেন একটু কম। চুপি চুপি বলে রাখা যায়, হাই স্কুল পাসের পরীক্ষায় ভেত্তেলের জিপিএ ছিল মাত্র ২.৮। শুধু তাই নয়, ইঁদুরের ভয়টা এখনো যায়নি তাঁর! ১৯৮৭ সালের ৩ জুলাই পশ্চিম জার্মানির হেপ্পেনহেইমে জন্ম ভেত্তেলের। বড় দুই বোন, মেলানি আর স্টেফানি। ফাবিয়ান নামের ছোট এক ভাইও আছে ভেত্তেলের। রেসিংটা অবশ্য মিশে আছে তাঁর রক্তেই, যার প্রমাণ তিন বছর বয়সেই একটা কার্ট ( ছোট ইঞ্জিনের এক ধরনের গাড়ি) পেয়ে তাতে চড়ে বসে আর বের হয়ে আসতে না চাওয়া! বাবা নরবার্টও ভালোবাসতেন গতি, বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে প্রায়ই রেস দেখতে যেতেন। কার্ট রেসিংয়ে ভেত্তেল পরিবারের একটা দলও ছিল, যেখানে কার্ট চালাতেন ভেত্তেলের বোন স্টেফানি। কিন্তু বোনকে হারাতে হারাতে একটা সময় সেবাস্তিয়ান ভেত্তেলই বনে যান দলের মূল চালক। মোনাকোতে একটা কার্ট রেসের পর পুরস্কারটা ভেত্তেল পেয়েছিলেন মাইকেল শুমাখারের হাত থেকে। তখনই হীরে চিনেছিলেন শুমাখার, ফেরারির রেসিং দলের প্রধান গেরহার্ড বার্জারকে তক্ষুনি তিনি বলে দেন, 'একজন আসছে।'
ফরমুলা ওয়ানের রেসট্র্যাকে রেডবুল রেসিংয়ের 'আরবিসেভেন' মডেলের রেসিং কার চালান ভেত্তেল। কিন্তু সেই সব গাড়ি নিয়ে তো রাস্তায় বের হওয়া যায় না! দৈনন্দিন জীবনে ভেত্তেল আবার খুব একটা গাড়িপ্রেমী নন, 'সুপার কার'-এর বদলে, ইনফিনিটি এফএঙ্ ৫০ মডেলের একটি স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল (এসইউভি) চালান তিনি। ব্যাপারটা খানিকটা বেমানান হলেও এটাই ভেত্তেলের পছন্দ, 'আমি আসলে খুব একটা গাড়িপাগল নই। আমার যেটা চালাতে ভালো লাগে, সেটাই চালাই। আমার যদি স্কোডা চালাতে ইচ্ছে করে, তাহলে স্কোডাই চালাব। তবে যেহেতু আমি বিএমডাবি্লউর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, তাই বিএমডাবি্লউ চালাই।' ইনফিনিটির সঙ্গে ভেত্তেলের রেসিং দল রেডবুলের বাণিজ্যিক সমপর্ক থাকায় এখন ইনফিনিটিতেই ঘুরে বেড়ান ভেত্তেল। গাড়ি নিয়ে একটা পাগলামো অবশ্য আছে ভেত্তেলের, তা হলো তাঁর প্রতিটি গাড়ির একেকটা অদ্ভুতুড়ে নাম দেওয়া। এখন যে 'আরবিসেভেন'টা চালাচ্ছেন, সেটির নাম দিয়েছেন কিংকি কাইলি! অস্ট্রেলিয়ান পপ গায়িকা কাইলি মিনোগের গান ইদানীং খুব শুনছেন বলেই এই গাড়ির নাম 'কাইলি', তাঁর আগের গাড়িগুলোর নাম ছিল 'লুসিয়াস লিজ', 'র‌্যান্ডি ম্যান্ডি' ও 'কেট'। অবসরে পছন্দ করেন স্নো বোর্ডিং, পাহাড়ি রাস্তায় সাইকেল চালানো আর সাঁতার কাটতে। খেতে ভালোবাসেন পাস্তা, সেটা নিজেও বেশ ভালোই রান্না করেন বলে দাবি করেন! বইপোকা নন ভেত্তেল, বরং সিনেমা দেখতেই বেশি আগ্রহ। 'লাইফ ইজ বিউটিফুল' ছবিটা দেখে তো কেঁদেই ফেলেছিলেন। মায়ের হাতের খাবারের জন্য যেকোনো কিছুই করতে রাজি ভেত্তেল, আর তাঁর কাছে আদর্শ ছুটির দিনের সংজ্ঞা হলো_দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, মায়ের বানানো খাবার দিয়ে পেটপুরে নাশতা করা, কিছুটা খেলাধুলা_সেটা ব্যাডমিন্টন বা যেকোনো আউটডোর খেলাধুলা হলে ভালো, আর চমৎকার একটা সিনেমা দেখা। ভাবা যায়, এই অলস ঘরকুনো ধরনের মানুষটাই রেসট্র্যাকে গাড়ি ছোটান বাতাসের আগে! ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.