লাখো মানুষের চোখের জলে সমাহিত by সুমন বর্মণ,
নরসিংদী পৌর এলাকার বাসাইলের প্রতিটি অলিগলিতে মানুষের ঢল। দলবেঁধে শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ সবাই আসছে প্রিয় মেয়র লোকমান হোসেনের লাশ এক নজর দেখার জন্য। লোকমানের বাড়ির সামনের বিশাল আঙ্গিনায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লোকে লোকারণ্য। সবার চোখে পানি, চেহারায় নীরব কান্না।তিন তলা বাড়ির ভেতরে চলছে শোকের মাতম। লোকমানের পাঁচ বছরের মেয়ে নাজা মানুষের ভিড় দেখে মায়ের কোল ছাড়ছে না। মায়ের কান্না দেখে সেও শুধু কাঁদছে। মায়ের মুখ ধরে বারবার বলছে, মা তুমি কাঁদছো কেন? আমি ভয় পাচ্ছি। আমি বাবার কাছে যাব। মেয়ের কথা শুনে মা বুবলি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদতে থাকেন।
কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'কেন ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করল? কী দোষ ছিল আমার স্বামীর? যে মানুষটা নরসিংদীর মানুষের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে গেল, সেই নরসিংদীরই কেউ আমার স্বামীকে মারল! আমার সন্তানদের এতিম করল!'
এই বিলাপ শুনে উপস্থিত অনেকেই আর কান্না চেপে রাখতে পারে না।
লোকমানের মা মজিদা বেগম শুধুই কাঁদছেন। ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই তিনি কোনো কিছু মুখে দেননি। কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। 'আমার ছেলেকে তোমরা এনে দাও' বলে আহাজারি করতে থাকেন মা। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, কাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমার গলা জড়িয়ে ধরে লোকমান বলে, 'মা, আমি নরসিংদীতে এমন উন্নয়ন করব, সারা দেশের মধ্যে মডেল হয়ে থাকবে। শুধু নরসিংদীর উন্নয়ন নিয়ে কথা বলত ছেলেটা।' তিনি কেঁদে বলেন, 'বাবারে, এখন তুমি কই গেলা? কে তোমার নরসিংদীর উন্নয়ন করবো? আমার গলা জড়িয়ে ধরে এখন কে এমন কথা বলবে? এবার ভোটে জিতে সবার আগে আমার গলায় মালা দিয়ে বলেছিল, 'মা, আমি বিজয়ী হই নাই, তুমি হইছো'_এ কথা বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মা।
এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লোকমান হোসেনের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুর ১২টায় লাশ আনা হয় নরসিংদীতে। প্রিয় নেতার মুখটি শেষবারের মতো দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করে তাঁর বাড়িতে। র্যাব, পুলিশের উপস্থিতিতে সারিবদ্ধভাবে লাশ দেখানো হয়। গোসলের পর লাশ শেষবারের মতো পরিবারের সদস্যদের দেখার জন্য বাড়ির ভেতরে নেওয়ার পর আবারও কান্নার রোল পড়ে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত মানুষ আসতে থাকে বাড়িতে।
লোকমানের আত্মীয় আরিফুল ইসলাম মৃধা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অল্প সময়ে লোকমান হোসেন নরসিংদীতে গণমানুষের নেতায় পরিণত হন। আমাদের নেতা আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সময় ছাত্রলীগ থেকে বিপুল ভোটে নরসিংদীর পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেন এবং দেশের শ্রেষ্ঠ পৌর মেয়র হিসেবে দুবার স্বর্ণপদক পান। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই তাঁকে জীবন দিতে হলো_এটা কখনো আমরা মেনে নিতে পারি না।'
লোকমানের ফুপাতো ভাই রফিকুল আসলাম বলেন, 'শহরের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে উন্নয়ন হয়নি। খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়েই লোকমানকে জীবন দিতে হলো।
একই সময় কথা হয় প্রিয় নেতাকে হারানোর শোকে শোকার্ত বাসাইল এলাকার অশীতিপর রহমত মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'লোকমান নরসিংদীর চেহারাটা পাল্টে দিয়েছে। আর সেই রূপকারকে এভাবে আমাদের কাছ থেকে চলে যেতে হবে_ভাবতেই পারছি না। আমরা হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি।'
বিকেলে লোকমান হোসেনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় লাখো জনতার উপস্থিতিতে। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে আসর নামাজের পর নরসিংদী বাসাইলে মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে লাশ আনা হয়। শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা থেকে লক্ষাধিক মানুষ জানাজায় অংশ নেয়। স্টেডিয়ামের গ্যালারিসহ গোটা মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। পরে শহরের সাটিরপাড়ার পৌর ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় নামাজের জানাজা হয়। তৃতীয় জানাজা হয় শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডের সামনে। পরে নিজের নির্মাণ করা পৌর কবরস্থানে সমাহিত করা হয় লোকমান হোসেনকে।
জানাজা অনুষ্ঠানের আগে লোকমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নিহতের স্বজনরা। আরো বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, আনোয়ারুল হক দিলীপ, জহিরুল হক মোহন, নুরুল মাহমুদ হুমায়ুন, নজরুল ইসলাম হিরু, টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমতউল্লাহ খান, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার মোল্লা, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিক প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, 'লোকমান ছিলেন গণমানুষের নেতা। তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তাঁর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লোকমানের হত্যাকারী যেই হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ সরকারের আমলেই হত্যাকারীদের বিচার করা হবে।'
এই বিলাপ শুনে উপস্থিত অনেকেই আর কান্না চেপে রাখতে পারে না।
লোকমানের মা মজিদা বেগম শুধুই কাঁদছেন। ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই তিনি কোনো কিছু মুখে দেননি। কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। 'আমার ছেলেকে তোমরা এনে দাও' বলে আহাজারি করতে থাকেন মা। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, কাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমার গলা জড়িয়ে ধরে লোকমান বলে, 'মা, আমি নরসিংদীতে এমন উন্নয়ন করব, সারা দেশের মধ্যে মডেল হয়ে থাকবে। শুধু নরসিংদীর উন্নয়ন নিয়ে কথা বলত ছেলেটা।' তিনি কেঁদে বলেন, 'বাবারে, এখন তুমি কই গেলা? কে তোমার নরসিংদীর উন্নয়ন করবো? আমার গলা জড়িয়ে ধরে এখন কে এমন কথা বলবে? এবার ভোটে জিতে সবার আগে আমার গলায় মালা দিয়ে বলেছিল, 'মা, আমি বিজয়ী হই নাই, তুমি হইছো'_এ কথা বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মা।
এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লোকমান হোসেনের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুর ১২টায় লাশ আনা হয় নরসিংদীতে। প্রিয় নেতার মুখটি শেষবারের মতো দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করে তাঁর বাড়িতে। র্যাব, পুলিশের উপস্থিতিতে সারিবদ্ধভাবে লাশ দেখানো হয়। গোসলের পর লাশ শেষবারের মতো পরিবারের সদস্যদের দেখার জন্য বাড়ির ভেতরে নেওয়ার পর আবারও কান্নার রোল পড়ে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত মানুষ আসতে থাকে বাড়িতে।
লোকমানের আত্মীয় আরিফুল ইসলাম মৃধা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অল্প সময়ে লোকমান হোসেন নরসিংদীতে গণমানুষের নেতায় পরিণত হন। আমাদের নেতা আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সময় ছাত্রলীগ থেকে বিপুল ভোটে নরসিংদীর পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেন এবং দেশের শ্রেষ্ঠ পৌর মেয়র হিসেবে দুবার স্বর্ণপদক পান। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই তাঁকে জীবন দিতে হলো_এটা কখনো আমরা মেনে নিতে পারি না।'
লোকমানের ফুপাতো ভাই রফিকুল আসলাম বলেন, 'শহরের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে উন্নয়ন হয়নি। খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়েই লোকমানকে জীবন দিতে হলো।
একই সময় কথা হয় প্রিয় নেতাকে হারানোর শোকে শোকার্ত বাসাইল এলাকার অশীতিপর রহমত মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'লোকমান নরসিংদীর চেহারাটা পাল্টে দিয়েছে। আর সেই রূপকারকে এভাবে আমাদের কাছ থেকে চলে যেতে হবে_ভাবতেই পারছি না। আমরা হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি।'
বিকেলে লোকমান হোসেনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় লাখো জনতার উপস্থিতিতে। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে আসর নামাজের পর নরসিংদী বাসাইলে মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে লাশ আনা হয়। শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা থেকে লক্ষাধিক মানুষ জানাজায় অংশ নেয়। স্টেডিয়ামের গ্যালারিসহ গোটা মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। পরে শহরের সাটিরপাড়ার পৌর ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় নামাজের জানাজা হয়। তৃতীয় জানাজা হয় শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডের সামনে। পরে নিজের নির্মাণ করা পৌর কবরস্থানে সমাহিত করা হয় লোকমান হোসেনকে।
জানাজা অনুষ্ঠানের আগে লোকমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নিহতের স্বজনরা। আরো বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, আনোয়ারুল হক দিলীপ, জহিরুল হক মোহন, নুরুল মাহমুদ হুমায়ুন, নজরুল ইসলাম হিরু, টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমতউল্লাহ খান, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার মোল্লা, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিক প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, 'লোকমান ছিলেন গণমানুষের নেতা। তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তাঁর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লোকমানের হত্যাকারী যেই হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ সরকারের আমলেই হত্যাকারীদের বিচার করা হবে।'
No comments