ক্ষুদ্রঋণের সুফল ব্যাপকভিত্তিক করার তাগিদ
সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য ব্যাপকভিত্তিক করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘ক্ষুদ্রঋণের অনেক দোষ আছে, কিন্তু এর গুণটা যেন আমরা না ভুলি।’ সীমাবদ্ধতা হিসেবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের অতিদরিদ্ররা ক্ষুদ্রঋণের সুফল পায় না, সুফল পায় অপেক্ষাকৃত কম গরিবেরা। তবে সম্প্রতি অতিদরিদ্রদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
গতকাল বুধবার ঢাকায় দুই দিনব্যাপী ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
একই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা এর সংশ্লিষ্ট ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের লাভের অংশ পান না। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে পিকেএসএফের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা লাভের অংশ পাবেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের। আগারগাঁওয়ের পিকেএসএফ মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, তাঁর মতে, ক্ষুদ্রঋণ তিনভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করে। প্রথমত, যেসব লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, তাদের সেই সীমা অতিক্রম করতে সহায়তা করছে। দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ দুর্বল প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নকে শক্তিশালী করছে। তৃতীয়ত, সামাজিক বিবর্তনে ব্যাপক সহায়তা করছে ক্ষুদ্রঋণ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যৌতুকবিরোধী প্রথা ইত্যাদি বিষয়ে সমাজে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। এখন প্রয়োজন ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য ব্যাপক করা।
দারিদ্র্য বিমোচন-প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দরিদ্র পরিবারের কোনো সদস্য রোগে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে তারা আবার অতিদরিদ্র হয়ে যায়। এতে হঠাৎ করে দরিদ্র হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
মুহিত বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীকে ওপরে ওঠানোর অন্যতম হাতিয়ার। এসব কর্মসূচির ভাতা নিয়ে অনেকে কর্মসংস্থানমূলক কাজে বিনিয়োগ করেন।
অর্থমন্ত্রীর মতে, প্রতিবছর দেশে ২৩ লাখ লোকের জন্য কর্মসংস্থান প্রয়োজন। এ জন্য শিল্পের বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। যত দিন যাবে ততই কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের পরিমাণ কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। গত জুন মাস থেকে তা ২৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ দেওয়ার সময় ৫ শতাংশ অর্থ রেখে দেওয়া হতো। এখন প্রথম ১৫ দিনে তা পরিশোধের নিয়ম করা হয়েছে।
খলীকুজ্জমান আরও জানান, এখনো প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহকদের কাছে আছে। এ পর্যন্ত আড়াই লাখ থেকে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মৌলিক ক্ষুদ্রঋণ, আর বাকি ২০ শতাংশ হলো কৃষি ও মৎস্য চাষের জন্য মৌসুমি ঋণ। আর সোয়া দুই কোটি লোক এই ক্ষুদ্রঋণসুবিধা পেয়েছে।
ফজুলল কাদের বলেন, গত বছর পিকেএসএফ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা এর আগের বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে ক্ষুদ্রঋণ ও সুশাসনবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম সাইদুজ্জামান। আর সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাকী খলীলী এবং এম এম আকাশ।
এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘পল্লি অঞ্চল থেকে আমানত শহরে নিয়ে যায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো—এ ধরনের কথা আর এখন শোনা যায় না।’ তাঁর মতে, ১০ বছর আগেও হতদরিদ্রদের কাছে ক্ষুদ্রঋণসুবিধা পৌঁছানো যেত না। এখন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও পিকেএসএফ এই হতদরিদ্রদের কাছে ক্ষুদ্রঋণ পৌঁছানোর কর্মসূচি শুরু করেছে। তিনি ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের বিমা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাকী খলীলী মূল প্রবন্ধে বলেন, ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় তিন কোটি ৬১ লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা তিন কোটি ২৩ লাখ। আর এসব মানুষের কাছে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গেছে ১৯ হাজার ২২৭টি প্রতিষ্ঠান।
খলীলী আরও বলেন, সারা দেশের মাত্র ৮ শতাংশ পরিবারের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং-সুবিধা পায়। এ জন্য গ্রামীণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাজার উন্নত করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হারের ২৩ শতাংশই চলে যায় পরিচালনা ব্যয়ে। আর সুদের হার ২৭ শতাংশ হলে ৪ শতাংশ ব্যবধানে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা টেকসই হতে পারবে? আবার ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে সমাজকল্যাণমূলক কাজ হিসেবেও দেখতে হবে।
এম এম আকাশ তাঁর মূল প্রবন্ধে বলেন, ১২৬ ধরনের ক্ষুদ্র অর্থায়নসুবিধা দেওয়া হয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এত ধরনের ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম আদৌ নিয়মের মধ্যে আনা সম্ভব কি না? দুর্বল শাসনের চেয়ে কোনো ধরনের শাসন না থাকাই ভালো—উল্লেখ করে আকাশ বলেন, সুশাসনের অভাবেই ওয়াল স্ট্রিট কেলেঙ্কারি হয়েছে; আর বাংলাদেশে হয়েছে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি।
আকাশ ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে (এমআরএ) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার তাগিদ দেন।
একই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা এর সংশ্লিষ্ট ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের লাভের অংশ পান না। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে পিকেএসএফের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা লাভের অংশ পাবেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের। আগারগাঁওয়ের পিকেএসএফ মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, তাঁর মতে, ক্ষুদ্রঋণ তিনভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করে। প্রথমত, যেসব লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, তাদের সেই সীমা অতিক্রম করতে সহায়তা করছে। দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ দুর্বল প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নকে শক্তিশালী করছে। তৃতীয়ত, সামাজিক বিবর্তনে ব্যাপক সহায়তা করছে ক্ষুদ্রঋণ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যৌতুকবিরোধী প্রথা ইত্যাদি বিষয়ে সমাজে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। এখন প্রয়োজন ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য ব্যাপক করা।
দারিদ্র্য বিমোচন-প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দরিদ্র পরিবারের কোনো সদস্য রোগে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে তারা আবার অতিদরিদ্র হয়ে যায়। এতে হঠাৎ করে দরিদ্র হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
মুহিত বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীকে ওপরে ওঠানোর অন্যতম হাতিয়ার। এসব কর্মসূচির ভাতা নিয়ে অনেকে কর্মসংস্থানমূলক কাজে বিনিয়োগ করেন।
অর্থমন্ত্রীর মতে, প্রতিবছর দেশে ২৩ লাখ লোকের জন্য কর্মসংস্থান প্রয়োজন। এ জন্য শিল্পের বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। যত দিন যাবে ততই কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের পরিমাণ কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। গত জুন মাস থেকে তা ২৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ দেওয়ার সময় ৫ শতাংশ অর্থ রেখে দেওয়া হতো। এখন প্রথম ১৫ দিনে তা পরিশোধের নিয়ম করা হয়েছে।
খলীকুজ্জমান আরও জানান, এখনো প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহকদের কাছে আছে। এ পর্যন্ত আড়াই লাখ থেকে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মৌলিক ক্ষুদ্রঋণ, আর বাকি ২০ শতাংশ হলো কৃষি ও মৎস্য চাষের জন্য মৌসুমি ঋণ। আর সোয়া দুই কোটি লোক এই ক্ষুদ্রঋণসুবিধা পেয়েছে।
ফজুলল কাদের বলেন, গত বছর পিকেএসএফ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা এর আগের বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে ক্ষুদ্রঋণ ও সুশাসনবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম সাইদুজ্জামান। আর সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাকী খলীলী এবং এম এম আকাশ।
এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘পল্লি অঞ্চল থেকে আমানত শহরে নিয়ে যায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো—এ ধরনের কথা আর এখন শোনা যায় না।’ তাঁর মতে, ১০ বছর আগেও হতদরিদ্রদের কাছে ক্ষুদ্রঋণসুবিধা পৌঁছানো যেত না। এখন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও পিকেএসএফ এই হতদরিদ্রদের কাছে ক্ষুদ্রঋণ পৌঁছানোর কর্মসূচি শুরু করেছে। তিনি ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের বিমা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাকী খলীলী মূল প্রবন্ধে বলেন, ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় তিন কোটি ৬১ লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা তিন কোটি ২৩ লাখ। আর এসব মানুষের কাছে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গেছে ১৯ হাজার ২২৭টি প্রতিষ্ঠান।
খলীলী আরও বলেন, সারা দেশের মাত্র ৮ শতাংশ পরিবারের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং-সুবিধা পায়। এ জন্য গ্রামীণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাজার উন্নত করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হারের ২৩ শতাংশই চলে যায় পরিচালনা ব্যয়ে। আর সুদের হার ২৭ শতাংশ হলে ৪ শতাংশ ব্যবধানে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা টেকসই হতে পারবে? আবার ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে সমাজকল্যাণমূলক কাজ হিসেবেও দেখতে হবে।
এম এম আকাশ তাঁর মূল প্রবন্ধে বলেন, ১২৬ ধরনের ক্ষুদ্র অর্থায়নসুবিধা দেওয়া হয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এত ধরনের ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম আদৌ নিয়মের মধ্যে আনা সম্ভব কি না? দুর্বল শাসনের চেয়ে কোনো ধরনের শাসন না থাকাই ভালো—উল্লেখ করে আকাশ বলেন, সুশাসনের অভাবেই ওয়াল স্ট্রিট কেলেঙ্কারি হয়েছে; আর বাংলাদেশে হয়েছে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি।
আকাশ ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে (এমআরএ) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার তাগিদ দেন।
No comments