নরসিংদীর মেয়র লোকমানের জানাজায় লাখো জনতা, শোকের শহরে ক্ষোভের আগুন by সুমন মোল্লা ও মনিরুজ্জামান
প্রতিবাদ আর শোকের নগরে পরিণত হয়েছে নরসিংদী। পৌরসভার টানা দুবারের মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় শহরজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর সমর্থকেরা। তাঁদের রোষানলে পড়ে আন্তনগর ট্রেন এগারসিন্দুরের ১১টি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এ সময় বেশ কিছু যানবাহনেও ভাঙচুর করা হয়।
জেলা ছাত্রলীগ নরসিংদীতে ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিলেও গতকাল রাতে তা প্রত্যাহার করা হয়। হরতালের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ে ঈদে ঘরমুখী মানুষ। মেয়রের দাফন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার স্বার্থে গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মহাসড়কে হরতাল শিথিল করা হলেও এতে ভোগান্তি কমেনি। লাইন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ট্রেনও চলেনি।
দিনভর বিক্ষোভের মধ্যে নিহত লোকমান হোসেনের জানাজায় ছিল লাখো মানুষের ঢল। সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন তাতে। পৌর কবরস্থানে লোকমান হোসেনকে দাফন করা হয়। গত মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসে বৈঠক করার সময় মুখোশধারী এক সন্ত্রাসীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১১টার দিকে লোকমান হোসেন মারা যান।
লোকমান হোসেন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ঢাকা থেকে আটক করা হয় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ খায়রুল কবির খোকনকে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ড গতকাল সারা দিন ধরেই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
গত মঙ্গলবার রাতে লোকমান হোসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত অচল হয়ে যায় নরসিংদী। রাতেই হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয়। হরতাল সফল করতে গতকাল সকাল আটটা থেকে হাজার হাজার সমর্থক ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, রেলওয়ে স্টেশন এবং শহরের মূল সড়কগুলোতে অবস্থান নেন। পাড়া-মহল্লা থেকে বের হওয়া খণ্ড খণ্ড মিছিলে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও অংশ নেন। হরতালের কারণে শহরের পানের দোকান থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল। শহরে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরের কয়েক শ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হরতাল-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়নি। নরসিংদী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। এ ঘটনায় নিহত লোকমানের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা করা হয়নি, তবে প্রক্রিয়া চলছে।
ট্রেনে আগুন, আতঙ্কিত যাত্রীরা: ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর ট্রেন এগারসিন্দুর সকাল ১০টার দিকে নরসিংদী স্টেশন অভিমুখে আসা- মাত্র হরতাল-সমর্থকদের রোষানলে পড়ে। ট্রেনটি তখন সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে যাচ্ছিল। বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রথমে ট্রেনের মাঝের একটি কামরায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে লাইনের ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে রেখে ট্রেনের কামরা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে ট্রেনটি থামানো হয়। আতঙ্কিত যাত্রীরা আত্মরক্ষায় ট্রেনের দরজা ও জানালা আটকে দেয়। আগুন ধরিয়ে দিলে যাত্রীরা চিৎকার করে সাহায্য চায়। পরে তারা জানালা ও দরজা দিয়ে বের হয়ে দূরে অবস্থান নেয়। অল্প সময়েই আগুন অন্যান্য বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ট্রেনের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতাধিক সদস্য উপস্থিত থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা তাঁরা নেননি।
ঘটনার প্রায় ৩০ মিনিট পর নরসিংদী সদর ও পলাশ থানা থেকে দমকল বাহিনীর সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করেন। দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও এর মধ্যে নয়টি বগি পুড়ে যায়। এ কারণে সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-কিশোরগঞ্জসহ পূর্বাঞ্চলীয় জোনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মরণ চাঁদ জানান, ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। দলটি তদন্ত শেষে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করবে।
চোখের জলে নেতার বিদায়: ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল ঢাকা থেকে লোকমান হোসেনের মরদেহ নরসিংদীতে আনা হয় দুপুর ১২টার দিকে। এর আগে ভোর থেকে জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়। লোকমান হোসেনকে বহনকারী গাড়ি ধীরে ধীরে শহরের বাসাইলের বাড়িতে প্রবেশের সময় এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অসংখ্য কর্মী-সমর্থক একে অপরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁকে একনজর দেখার জন্য দীর্ঘ সারি হয়। কেউ ফুল নিয়ে কেউ বা চোখের জলে বিদায় জানান নেতাকে। বেলা আড়াইটায় নিজ বাড়ি থেকে লোকমান হোসেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। সেখানেই মঙ্গলবার তিনি মুখোশধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। দলীয় কার্যালয়ে নেওয়ার পর সেখানেও শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
লাখো মানুষের ঢল: নরসিংদী, পার্শ্ববর্তী ভৈরব, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ লোকমান হোসেনের জানাজায় অংশ নেন। ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও জানাজায় যোগ দেন।
গতকাল বাদ আসর স্থানীয় মুসলেহউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে জানাজা হয়। পুরো স্টেডিয়াম ও গ্যালারি পূর্ণ হওয়ায় অনেককে রাস্তায় অবস্থান নিতে হয়। পরে পৌর কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়া হয়।
হরতাল প্রত্যাহার: মেয়র লোকমান হত্যার প্রতিবাদে নরসিংদীতে জেলা ছাত্রলীগ আহূত ৭২ ঘণ্টার হরতাল গতকাল রাত ১০টায় প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাহআলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি বিবেচনা করে হরতাল প্রত্যাহার করেছি। আমরা বিকল্প কর্মসূচি পালন করব।’
দিনভর বিক্ষোভের মধ্যে নিহত লোকমান হোসেনের জানাজায় ছিল লাখো মানুষের ঢল। সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন তাতে। পৌর কবরস্থানে লোকমান হোসেনকে দাফন করা হয়। গত মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসে বৈঠক করার সময় মুখোশধারী এক সন্ত্রাসীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১১টার দিকে লোকমান হোসেন মারা যান।
লোকমান হোসেন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ঢাকা থেকে আটক করা হয় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ খায়রুল কবির খোকনকে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ড গতকাল সারা দিন ধরেই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
গত মঙ্গলবার রাতে লোকমান হোসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত অচল হয়ে যায় নরসিংদী। রাতেই হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয়। হরতাল সফল করতে গতকাল সকাল আটটা থেকে হাজার হাজার সমর্থক ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, রেলওয়ে স্টেশন এবং শহরের মূল সড়কগুলোতে অবস্থান নেন। পাড়া-মহল্লা থেকে বের হওয়া খণ্ড খণ্ড মিছিলে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও অংশ নেন। হরতালের কারণে শহরের পানের দোকান থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল। শহরে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরের কয়েক শ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হরতাল-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়নি। নরসিংদী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। এ ঘটনায় নিহত লোকমানের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা করা হয়নি, তবে প্রক্রিয়া চলছে।
ট্রেনে আগুন, আতঙ্কিত যাত্রীরা: ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর ট্রেন এগারসিন্দুর সকাল ১০টার দিকে নরসিংদী স্টেশন অভিমুখে আসা- মাত্র হরতাল-সমর্থকদের রোষানলে পড়ে। ট্রেনটি তখন সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে যাচ্ছিল। বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রথমে ট্রেনের মাঝের একটি কামরায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে লাইনের ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে রেখে ট্রেনের কামরা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে ট্রেনটি থামানো হয়। আতঙ্কিত যাত্রীরা আত্মরক্ষায় ট্রেনের দরজা ও জানালা আটকে দেয়। আগুন ধরিয়ে দিলে যাত্রীরা চিৎকার করে সাহায্য চায়। পরে তারা জানালা ও দরজা দিয়ে বের হয়ে দূরে অবস্থান নেয়। অল্প সময়েই আগুন অন্যান্য বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ট্রেনের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতাধিক সদস্য উপস্থিত থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা তাঁরা নেননি।
ঘটনার প্রায় ৩০ মিনিট পর নরসিংদী সদর ও পলাশ থানা থেকে দমকল বাহিনীর সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করেন। দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও এর মধ্যে নয়টি বগি পুড়ে যায়। এ কারণে সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-কিশোরগঞ্জসহ পূর্বাঞ্চলীয় জোনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মরণ চাঁদ জানান, ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। দলটি তদন্ত শেষে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করবে।
চোখের জলে নেতার বিদায়: ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল ঢাকা থেকে লোকমান হোসেনের মরদেহ নরসিংদীতে আনা হয় দুপুর ১২টার দিকে। এর আগে ভোর থেকে জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়। লোকমান হোসেনকে বহনকারী গাড়ি ধীরে ধীরে শহরের বাসাইলের বাড়িতে প্রবেশের সময় এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অসংখ্য কর্মী-সমর্থক একে অপরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁকে একনজর দেখার জন্য দীর্ঘ সারি হয়। কেউ ফুল নিয়ে কেউ বা চোখের জলে বিদায় জানান নেতাকে। বেলা আড়াইটায় নিজ বাড়ি থেকে লোকমান হোসেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। সেখানেই মঙ্গলবার তিনি মুখোশধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। দলীয় কার্যালয়ে নেওয়ার পর সেখানেও শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
লাখো মানুষের ঢল: নরসিংদী, পার্শ্ববর্তী ভৈরব, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ লোকমান হোসেনের জানাজায় অংশ নেন। ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও জানাজায় যোগ দেন।
গতকাল বাদ আসর স্থানীয় মুসলেহউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে জানাজা হয়। পুরো স্টেডিয়াম ও গ্যালারি পূর্ণ হওয়ায় অনেককে রাস্তায় অবস্থান নিতে হয়। পরে পৌর কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়া হয়।
হরতাল প্রত্যাহার: মেয়র লোকমান হত্যার প্রতিবাদে নরসিংদীতে জেলা ছাত্রলীগ আহূত ৭২ ঘণ্টার হরতাল গতকাল রাত ১০টায় প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাহআলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি বিবেচনা করে হরতাল প্রত্যাহার করেছি। আমরা বিকল্প কর্মসূচি পালন করব।’
No comments