উদ্বেগটা ব্যাটসম্যানদের নিয়েই

প্রশ্ন : চট্টগ্রামে এত ভালো খেলার পর এই টেস্টের এমন হার কতটা হতাশাজনক?স্টুয়ার্ট ল : শেষ পর্যন্ত যা হলো, তাতে আমি হতাশ। হেরে যাওয়ায় ততটা না, যতটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুড়ে আসা দেখে। তবে ম্যাচে সন্তুষ্ট হওয়ার নানা উপলক্ষ আমাদেরও এসেছিল। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৫৫ রানে অলআউট করে দেওয়াটা দারুণ অর্জন। কিন্তু এরপর নিজেরা ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারালাম। পরে কষ্টেসৃষ্টে ২৩১ পর্যন্ত গিয়েছি, যা যথেষ্ট ছিল না। আর শেষ ইনিংসে ৫০০ তাড়া করাটা তো কখনোই সহজ ছিল না।


প্রশ্ন : কিন্তু সেই বিশ্বাস বাংলাদেশ ক্যাম্পে ছিল বলেই আমরা জানি। শেষ দিনে ৭ উইকেট হাতে রেখে প্রায় সাড়ে তিনশ করাটা কি সত্যি সম্ভব ছিল?
ল : পঞ্চম দিন হলেও উইকেট তো ভাঙেনি। ওদের ফাস্ট বোলাররাও এখান থেকে তেমন কোনো সাহায্য পায়নি। আর ক্রিজে ছিল তামিম ও মুশফিকের মতো দারুণ দুজন ব্যাটসম্যান। ওরা যদি মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত খেলতে পারত, তাহলে জয় একেবারে অসম্ভব ছিল না। তবে জয় পাওয়া কিংবা না পাওয়া বড় ব্যাপার নয়। জয় পেলেও প্রতিপক্ষ যেন সেটি কষ্ট করে অর্জন করে, আমাদের সেটি নিশ্চিত করা দরকার ছিল। হতাশার ব্যাপার হলো, আমাদের ব্যাটসম্যানরা সেটি পারেনি।
প্রশ্ন : টেস্টের মাঝে এক দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে আপনি বলেছিলেন, ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে দৃষ্টিনন্দন চলি্লশ রানের চেয়ে দৃষ্টিকটু সেঞ্চুরিই বেশি করে চান আপনি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও তো সেটি হলো না...
ল : কী আর বলব, খুবই হতাশ আমি। পাশাপাশি খেলোয়াড়দের হতাশাটাও বুঝি, কারণ সেঞ্চুরি করতে তো ওরাও চায়। কিন্তু আমি বলব, মাঠের পারফরম্যান্সের জন্য ওদের মাঠের বাইরের প্রস্তুতিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটি ঠিকঠাক হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। এ নিয়ে আমি আজ ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের স্কিলের খুব একটা সমস্যা নেই। সমস্যা অন্য জায়গায়।
প্রশ্ন : সেটি কি শৃঙ্খলাজনিত? সমস্যাটা কি লাইফস্টাইলে?
ল : আমি তা বলব না। শৃঙ্খলা নিয়ে ওদের কোনো সমস্যা নেই। আমি বলছি, মাঠে গিয়ে খেলাটা ভালোভাবে খেলার জন্য নানা প্রস্তুতি নিতে হয়, সে জায়গায় ঘাটতি আছে। যেমন, ওরা হয়তো ফিটনেস নিয়ে খুব সচেতন না। বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের ওজন বেশি। এসব ব্যাপার নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। স্কিল ঠিক থাকলে যে যতটা ফিট হবে, চাপের মুখে তার ভুল করার আশঙ্কা তত কমবে। আমাদের দলটি কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যম সারির দল না। মোটমুটি তলানিতেই আছি। অন্যদের ধরতে হলে আমাদের তাই আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে। আমাদের ওপরে যারা আছে, তাদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম। শুধু নেটে ব্যাটিং-বোলিং না, জিমেও আমাদের অনেক সময় দিতে হবে।
প্রশ্ন : টেস্টের শেষ দিনে দল যখন বাঁচা-মরার লড়াইয়ে, সে সময় সাকিব-তামিমের অমন উইকেট ছুড়ে আসা দেখে আপনি কি চমকে গেছেন?
ল : যা দেখেছি, সেটি আসলেই বিস্ময়কর। সন্দেহ নেই, তারা দুজনই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। হয়তো তাদের ওপর সব সময় যে প্রত্যাশার বোঝা থাকে, সেটি বইতে পারছে না। আর মাঠের বাইরের কাজগুলোও হয়তো সব সময় ঠিকঠাক করতে পারছে না। এটি তারা জানে। জানে তাদের কোথায় কোথায় কাজ করতে হবে। সাকিবের ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। সে দলের অন্যতম সেরা বোলার, অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তাকে পাঁচ দিনের ম্যাচের পুরোটা সময়ই কিছু না কিছু করতে হয়। সেজন্য ফিটনেস থাকা দরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের। সেটি না থাকলে আজকের মতো আউটের মুহূর্ত আসতেই থাকবে। কারণ ও যা করতে চাইবে, শরীরের প্রতিক্রিয়া তেমন হবে না।
প্রশ্ন : ব্যাপারটি কি শুধুই ফিটনেসের? এর সঙ্গে দুর্বল মানসিকতার সম্পর্ক নেই?
ল : সাকিব-তামিমের টেকনিকে বড় কোনো সমস্যা নেই। মানসিকতার কথা যে বললেন, তার সঙ্গেও আমি একমত নই। ওরা যত ফিট হবে, যত অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলবে, নিজেদের স্কিলের প্রয়োগ করতে পারবে তত বেশি। ওদের ফিটনেস লেভেল গড়পড়তা অথচ ওরা সব সময় সব শট খেলতে চায়। বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান সম্পর্কেই কথাটি বলা যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্ক এডওয়ার্ডসকে দেখুন না! খুব বেশি শট ও খেলেনি, কিন্তু যেটি খেলেছে, দারুণভাবে তার প্রয়োগ দেখিয়েছে। এই সিরিজে আমাদের দুই-আড়াই ঘণ্টার বেশি ব্যাটিং করতে পারে এমন কোনো ব্যাটসম্যান দেখলাম না। ওদিকে ওদের এডওয়ার্ডস-ব্রাভোরা কত দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটিং করল! আমাদের দলে এই পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ব্যাট করার মতো কেউ না থাকাটা অবশ্যই উদ্বেগের। অন্য দলে এমন ব্যাটসম্যান থাকে তিন-চারজন করে।
প্রশ্ন : এই দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটসম্যানদের টিকে থাকতে শেখানো কি আপনার বড় চ্যালেঞ্জ?
ল : এটি আমি শেখাতে পারব না। এই ইচ্ছেটা ব্যাটসম্যানদের থাকতে হবে। সেজন্য নিজেদের ফিটনেস লেভেলটা বাড়াতে হবে। ওরা ঘণ্টা দুয়েক ব্যাটিং করে ৭০-৮০ রানের দারুণ একটা ইনিংস খেলে, এরপর মাথায় কী এক গোলমাল হয়_উইকেট ছুড়ে চলে আসে। অমন ৮০ রান হয়তো নির্দিষ্ট ওই ক্রিকেটারের জন্য ভালো, দলের জন্য নয়। এভাবে ব্যাট করে টেস্ট ম্যাচ জেতা বা ড্র করা সম্ভব না। কেউ যদি দেড়শ-দুশ করতে পারে, তাহলেই সেটি সম্ভব। সেজন্য ট্রেনিংয়ের ওপরই সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে।
প্রশ্ন : সিনিয়র ক্রিকেটার এবং দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিব-তামিমকেই নিশ্চয়ই দায়িত্ব নিতে হবে?
ল : সবারই নিতে হবে। কারণ এটি দুজনের দল না।

No comments

Powered by Blogger.