টগরের দাম ১৫ লাখ, হরিণার ৭ লাখ টাকা মোটাতাজা গরুই বেশি কোরবানির হাটে by আলাউদ্দিন আরিফ

গাবতলী গরুর হাটে ফরিদপুর সদর উপজেলার আনোয়ার মণ্ডল তার কালো রঙের একটি ষাঁড় গরুর দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা। আদর করে গরুটির নাম দিয়েছেন ‘টগর’। আনোয়ার মণ্ডল জানান, এরই মধ্যে টগরের দাম উঠেছে ৮ লাখ টাকা। গরুটিকে অতি যতনে শখ করে ঘরে পুষেছেন তিনি। ভালো দামে বিক্রিরও আশা করছেন। হাটে তোলার পরও রাতদিন গরুটির পরিচর্যায় ব্যস্ত।আনোয়ার মণ্ডলের গরুটির মতো বড় না হলেও এবার হাটে বিশাল আকারের মোটা তাজা গরু-খাসির অভাব নেই। আজ-কালের মধ্যে আরও কিছু বড় বড় গুরু হাটে আসার কথা জানালেন ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ও বেপারিরা।


দৃষ্টিনন্দন নাদুস-নুদুস দানব আকারের গরু এখন কোরবানির হাটের অন্যতম আকর্ষণ। বাজার ঘুরে হাড্ডিসার কোনো গরু চোখে পড়েনি। সব গরুই মোটাতাজা। দামও বেশ চড়া। এদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন অনুমোদিত ১৩ হাট ও ঢাকা জেলা প্রশাসন অনুমোদিত ৯টি মোট ২২টি অস্থায়ী হাটে আজ থেকে গবাদিপশু বিক্রি শুরু হবে।এরই মধ্যে হাটগুলোতে কমবেশি পশু তোলা হয়েছে। ক্রেতারাও হাটে যাচ্ছেন দরদাম যাচাই করছেন।
গাবতলী হাটে তোলা হয়েছে তার মধ্যে দেশীয় জাতের পাশাপাশি রয়েছে হরিণা, খারপারকার, করণ, রেড সিল্কি, অনগোল, কাঙ্করেজ, দেওন, পাঞ্জাবি, ইউ.পি, দিল্লি, বিহারি, গির, অমৃত মহল, হল্লিকার, খিল্লার, কনগয়াম, জার্সি, হলস্টেইন ফ্রেইসিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু। নেপালি জাতের ভুট্টি গরুও আছে। মোষের মধ্যে রয়েছে মুররাহ, সুরভী, নাগপুরিসহ বিভিন্ন জাতের মোষ। খাসির মধ্যে দেশীয় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের প্রাধান্য বেশি। ছোটপায়ের ব্ল্যাকবেঙ্গল জাতের খাসি বেশ নাদুস-নুদুস। এছাড়া যমুনা পারি ও রামছাগলও এসেছে অনেক। খাসির দাম যেন গরুকেও ছাড়িয়ে যায়। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাসিন্দা অনিল চন্দ্র তার দুইটি খাসির দাম চাইলেন ৯০ হাজার টাকা। এত দাম কেন, জানতে চাইলে তার উত্তর বাজারের সেরা খাসি। অনেক কষ্ট করে এগুলো পালন করেছেন। দামতো বেশি হবেই।
যে জাত বা প্রজাতিরই হোকনা কেন হাটে আসা অধিকাংশ গরুই বেশ স্বাস্থ্যবান। এর কারণ হিসেবে বিসিএস লাইভস্টক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পশু বিশেষজ্ঞ ডা. শফিউল আহাদ সরদার স্বপন বলেন, এখন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গরু পালন হয় বেশি। আগে মানুষ গরু দিয়ে হালচাষ করত। ফলে ওইসব গরু হাড্ডিসার থাকত। এখন গরুর বদলে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে। গরুর তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। এছাড়া পশুসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, কৃমিনাশক ও ওষুধপত্র, খামারি ও চাষীদের গরু মোটাতাজা করার প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার ফলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু উত্পাদন বেড়েছে। আর এতে হাটে মোটাতাজা গরুর আধিক্য বেড়েছে।
গাবতলী হাটে লম্বা শিংধারি হরিণা গরু তোলা হয়েছে বিপুল সংখ্যক। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বেপারি সরোয়ার হোসেন গাবতলী হাটে ৪টি গরু তুলেছেন। এর মধ্যে ধবধবে সাদা রঙের দুটি গরু হরিণা জাতের। তিনি বলেন, হরিণের মতো সিং এবং ভারতের হরিয়ানা প্রদেশে এ গরু বেশি পাওয়া যায় বলে এর নাম হরিণা। তবে এগুলো মোটাতাজা করা হয়েছে কুষ্টিয়ায়। এই দুটি গরুর দাম তিনি চাইছেন ৭ লাখ টাকা। নেপালি জাতের দুটি ভুট্টি ষাঁড় তুলেছেন মনোয়ার মোল্লা। ষাঁড় দুটির দাম চাইছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আজ থেকে অস্থায়ী হাট : ঢাকার সবচাইতে বড় হাট গাবতলী। সারাবছরই ওই হাটে পশু বেচাকেনা চলে। আরও এক সপ্তাহ আগ থেকেই গাবতলী হাটে পশু বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। কোরবানির ঈদের ৪ দিন আগ থেকে অর্থাত্ আজ থেকে অস্থায়ী ১৩টি হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে।। এরই মধ্যে ডিসিসির সহায়তা ইজারাদাররা হাট বসানোর সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন। এবারের হাট বসছে ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গা (বেতার ভবনের পশ্চিমে), তালতলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পশ্চিম পাশের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ (গনি মিয়ার হাট), উত্তর শাহজাহানপুরের খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, উত্তরা-আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, আরমানিটোলা খেলার মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ গোপিবাগ-কমলাপুর, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজার, বনানী কাকলী (রেলওয়ে সংলগ্ন খালি জায়গা), ধুপখোলা ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠ, ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ, গোলাপবাগ মাঠের পার্শ্বে সিটি করপোরেশনের খালি জায়গা। এর বাইরে আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং মাঠ, শনির আখড়াসহ বেশ কয়েকটি হাট রয়েছে যেগুলো অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা জেলা পরিষদ। ডিসিসি ও জেলা পরিষদের মিলিয়ে এবার ঢাকার মোট হাটের সংখ্যা ২২টি।
হাটগুলোর ইজারাদাররা জানান, বেপারিদের থাকা-খাওয়া, গবাদি পশুর চিকিত্সা, হাটের নিজস্ব নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য ভলেন্টিয়ার সার্ভিসসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হাট এলাকায় অনিয়ম রোধে র্যাব ও ডিবি পুলিশ টহল দিতে শুরু করেছে। আরমানিটোলা খেলারমাঠ ঢাকার দ্বিতীয় বৃহত্তম। হাট বসানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ইজারাদাররা। পশুও আসতে শুরু করে। হাটে পাইকারদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সুবিধা, পাইকারদের ফ্রি চিকিত্সা, গবাদি পশুর জন্য চিকিত্সক, ক্রেতাদের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, গবাদি পশুর হাটে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হয়রানি, পকেটমারসহ যেকোনো অনিয়ম রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেকোনো অনিয়মে তাত্ক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হাটগুলোতে মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.