১৯৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গ সেক্যুলারিজম by ড. মাহবুব উল্লাহ্
বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বয়স ৯ মাস পূর্ণ হলো প্রায়। ৯ মাস বয়সী এই সরকারের শাসনামলে এড়াবৎহধহপব বলে কোনো বিষয়ের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। শাসক দলের কর্মীবাহিনীর হাতে বিরোধী দলের কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল এই কর্মী বাহিনীর ওপর মূল দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতিকেও সংবাদ সম্মেলন ডেকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আধুনিক গণতন্ত্রের তিনটি প্রধান অনুষঙ্গ -----এর কোনোটিরই নিরাপত্তা নেই। কেউ জানে না কখন কার জীবনে মৃত্যুর অপদেবতা এসে হানা দেবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্য পুলিশকে অঘোষিত লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদ্বয় আত্মরক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেছেন। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র নামক একটি মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৭২ জন সাংবাদিক। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের হাতে ২২, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের হাতে ২, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬, সন্ত্রাসীদের হামলা, হুমকি, হয়রানি ও বোমা নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ৫৯, বিডিআরের হাতে ৫, জঙ্গি সংগঠনের হুমকি, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলায় আহত হয়েছেন ১০ জন সাংবাদিক। এছাড়া ৯ মাসে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন ৩ সাংবাদিক। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রফেসর রেহমান সোবহানের প্রথম সত্রী ব্যারিষ্টার সালমা সোবহান। সুতরাং এই কেন্দ্রটি যে বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের বিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা কিন্তু নয়। অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতির মারাত্মক দুরবস্থার কথা খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই স্বীকার করেছেন। দেশে কোনো বিনিয়োগ নেই। বিনিয়োগহীন অর্থনীতি বস্তুত রক্তপ্রবাহহীন প্রাণীদেহের মতোই। রক্তপ্রবাহ থেমে গেলে মানুষ বা অন্য যে কোনো প্রাণীর যেমন মৃত্যু ঘটে, তেমনি বিনিয়োগশূন্য অর্থনীতিও স্থবির হয়ে পড়ে। তবে অর্থনীতি শাসেত্রর চুলচেরা বিচারে দেশ একেবারে বিনিয়োগশূন্য একথা বলা যাবে না। কৃষক ফসল উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে, ব্যবসায়ী পণ্যসামগ্রী কেনাবেচায় বিনিয়োগ করছে। বিদ্যমান কল-কারখানায় চালানি পুঁজির বিনিয়োগ ঘটছে। এ ধরনের বিনিয়োগে অর্থনীতির সরল পুনরুৎপাদন হয়। প্রবৃদ্ধি হয় না। প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন ও অবকাঠামো নির্মাণে বাড়তি বিনিয়োগ হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে এখন সেই ধরনের বিনিয়োগ স্তব্ধ হয়ে গেছে। মানুষের জীবনের যদি নিরাপত্তা না থাকে, চাঁদবাজদের হুমকি ও মহড়ায় যদি প্রতিনিয়ত ভীতসন্ত্রস্ত থাকতে হয়, জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা যদি না থাকে, ভবিষ্যতের গর্ভে কী নিহিত আছে সে সম্পর্কে যদি ন্যূনতম ধারণা না করা যায় তাহলে বিনিয়োগ হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় জমে আছে বলে প্রায়ই সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়। দেশের এসব মৌলিক সমস্যার দিকে সরকারের বিশেষ মনোযোগ দেখা যায় না; কিন্তু তেল-গ্যাস ও বন্দর রক্ষার জন্য যারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে তাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ খুবই কর্মতৎপর। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের পা ভেঙে দিতেও পুলিশ দ্বিধা করে না। এর জন্য সরকারের মন্ত্রীরা দুঃখ প্রকাশ করলেও বাড়াবাড়ি করা পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে এখনও শোনা যায়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসতে দিনবদলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দিনবদলের নমুনা যদি এরকম হয় তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। দেশের জরুরি সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো পদক্ষেপ না নিলেও এই সরকার বেশকিছু এজেন্ডা হাতে নিয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বমহল থেকে বারবার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, এসব এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। বেশিরভাগ এজেন্ডাই আইন-আদালত সম্পর্কিত। যেমন শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্তকরণ, জেল হত্যাকান্ডের বিচার, দশ ট্রাক অসত্র মামলার বিচার, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সর্বোপরি সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তন। বক্ষ্যমাণ পর্যালোচনাটি '৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। প্রায়ই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টকশোতে একশ্রেণীর বিশ্লেষক দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে রাগত স্বরে নির্দ্বিধায় বলে চলেন, ১৯৭৫-এর পরেই সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে বিবর্ণ করে দেয়া হয়েছে। এই সংবিধানকে নাকি চেনা যায় না। কী অদ্ভুত বিশ্লেষণ! ইতিহাস বিকৃতির এর চেয়ে নির্লজ্জ প্রয়াস আর কী হতে পারে! এসব আলোচক যে সত্যটি জনগণের কাছ থেকে আড়াল করতে চান তা হলো, '৭৫-এর ১৫ আগষ্টের আগেই '৭২-এর সংবিধানটিকে এই রাষ্ট্রের স্থপতি খোদ শেখ মুজিবুর রহমানই মাত্র সাড়ে তিন বছরে নিজ হাতে চার-চারবার কাটাছেঁড়া করেছেন। অবশ্য সংসদের প্রয়োজনীয় সমর্থনের মাধ্যমে। শেষবারের কাটাছেঁড়ায় অর্থাৎ চতুর্থ সংশোধনীর ফলে '৭২-এর সংবিধানের কোনো কিছুই চেনার উপায় ছিল না। আমাদের সংবিধানের অন্যতম মূল স্তম্ভ হলো গণতন্ত্র। বস্তুত, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী '৭০-এর নির্বাচনের গণতান্ত্রিক রায়কে সামরিক ক্ষমতার বলে নস্যাতের অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বলেই মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। সেই মুক্তিযুদ্ধের ডাক এসেছিল শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে। সুতরাং কোনো আদর্শ যদি বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সব শ্রেণীর মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে মরণপণ লড়াইতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে সেটি হলো গণতন্ত্র। অথচ সংবিধান থেকে সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করা হয়েছিল চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে। মাত্র ১২ মিনিট স্থায়ী একটি অধিবেশনে সংসদ কোনো আলোচনা ছাড়াই চতুর্থ সংশোধনী পাস করে। এর ফলে দেশে একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হলো। বিলুপ্ত হয়ে গেল আইনসঙ্গতভাবে গঠিত সব রাজনৈতিক দল। এমনকি আওয়ামী লীগও। একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী দলটির নামকরণ করা হলো 'বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ'-সংক্ষেপে বাকশাল। কেবল ৪টি সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এনে বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হলো। সরকারি মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত হলো বহু বছরের পুরনো দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা। বহু সাংবাদিক কর্মচ্যুত হলেন। এক সাংবাদিক তো জীবিকার তাড়নায় বায়তুল মোকাররমের সামনে বেকার সাংবাদিকের ফলের দোকান নাম দিয়ে দোকান খুলে বসলেন। কমিউনিষ্ট দেশের আদলে সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও আমলাতন্ত্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ গ্রহণে বাধ্য করা হলো। বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীসহ আমলাতন্ত্র ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ রাজনীতিকীকরণের যাত্রা তখন থেকে শুরু। বস্তুত, সমগ্র দেশ পরিণত হয়েছিল এক বন্দিশিবিরে। সংবিধানের কাটাছেঁড়া করা কিংবা খোলনলচে পাল্টে দেয়া বলে যদি কিছু ঘটে থাকে, সেটা ঘটেছিল অবিসংবাদিত জাতীয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেই। অন্যরা যা করেছেন, সে তুলনায় তা একেবারেই নস্যি। সংবিধান রদবদলের জন্য একশ্রেণীর বিশ্লেষক জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন। জিয়াউর রহমান ইড়হধঢ়ধৎঃরংঃ ছিলেন না। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মতো তিনি কখনও বলেননি ----- অর্থাৎ নেপোলিয়ন বলেছিলেন, আমি রাজপথে রাজমুকুট পড়ে থাকতে দেখলাম এবং আমি আমার তরবারির শীর্ষবিন্দু দিয়ে তা তুলে নিলাম। জিয়াউর রহমান যখন ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে বন্দি তখনই ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ ঘটেছিল সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান। অভ্যুত্থানকারীরাই তাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে জাতির কর্ণধারের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি নিজে সামরিক শাসন ঘোষণা করেননি। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আইনি ধারাবাহিকতার স্বার্থে যেটুকু সময় সামরিক শাসন অব্যাহত রাখার দরকার ছিল ততটুকুই তিনি করেছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত -----গ্রন্হটি (২০০৯ সালে প্রকাশিত) থেকে উদ্ধৃতি দেয়ার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। মাইলাম লিখেছেন, ------ বর্তমান সরকারের মধ্যে অবস্থিত এবং সরকার সমর্থকদের মধ্যে অবস্থিত একটি গোষ্ঠী বিদ্যমান সংবিধানে মূলনীতি হিসেবে গৃহীত 'সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অকৃত্রিম বিশ্বাস' এবং সংবিধানের শীর্ষদেশে 'বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম' সংযোজন সহ্য করতে পারছে না। '৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ঝবপঁষধৎরংস অপসারণেরও তারা ঘোর বিরোধী। তারা সংবিধানে অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ঝবপঁষধৎরংস বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চান। যারা এসব দাবি করছেন তারা ইতিহাস ভুলে গেছেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং যারা পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের সমন্বয়েই ১৯৭২ সালে একটি গণপরিষদ গঠিত হয়, যার ওপর সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পিত হয়। সেই সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল, পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তিতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা কী করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন করতে পারেন। ১৯৭২-এর সংবিধানে ৪টি মূলনীতি ঘোষিত হয়েছিল। মূলনীতিগুলো ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। তাজউদ্দীন আহমদের প্রবাসী সরকার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হিসেবে কেবল ৩টি আদর্শকেই তুলে ধরে। আদর্শগুলো ছিল যথাক্রমে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতীয়তাবাদ ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসার পর ভারত সফর করতে কলকাতায় যান। সেখানে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ এক মঞ্চে ভারতের জনগণের উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করেন। সেই ভাষণেই তিনি পূর্বোক্ত তিনটি আদর্শের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদকেও তার অন্যতম আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করেন। আমরা কেউ বলতে পারব না কেন তিনি জাতীয়তাবাদকে নতুন রাষ্ট্রের অন্যতম আদর্শগত ভিত্তি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখানেই আমরা তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তার রাজনৈতিক চিন্তার পার্থক্য লক্ষ্য করি। হয়তো তিনি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় আদর্শ থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শকে পৃথক করে দেখানোর জন্যই জাতীয়তাবাদের কথা বলেছিলেন; কিন্তু আসলে তার মনে কী চিন্তা কাজ করেছিল তা আমরা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। তবে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি যে খুব বিব্রত ছিলেন সেটি বোঝা যায় ৭২-এর সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর প্রায় প্রতিটি জনসভায় তিনি বলতেন, 'ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়।' বস্তুত তখনও আওয়ামী লীগের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক রূপ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে বড় রকমের মতপার্থক্য ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের বেতারে তাজউদ্দীন আহমদরা কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা বাতিল করে দিয়েছিলেন; কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তনের পর এই অবিমৃশ্যকারিতার ভয়াবহ পরিণতি উপলব্ধি করে কোরআন তেলাওয়াত চালু করার নির্দেশ প্রদান করেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ব্যাখ্যা নিয়ে বড় রকমের মতপার্থক্য আছে। ওদের কারও কারও কাছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের অর্থ হলো ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের কোনো রকম সংস্রব না রাখা।
No comments