এ কী করলেন সাকিব-তামিম! by নোমান মোহাম্মদ
ম্যান অব দ্য সিরিজ হওয়ার দিনে আর কাকে কবে এমন সমালোচনার গিলোটিনে পড়তে হয়েছে? যেমনটা হলো সাকিব আল হাসানের।দুই টেস্টে ব্যাট হাতে ৫৬ গড়ে ১৬৮ রান। বাঁহাতি স্পিনে ২২.৯০ গড়ে ১০ উইকেট। দল হেরে গেলে কী হবে, সিরিজ সেরা পারফরমারকে খুঁজতে আতশি কাচের প্রয়োজন পড়েনি তাই। কার্ক এডওয়ার্ডস, ড্যারেন ব্রাভো, দেবেন্দ্র বিশু, ফিডেল এডওয়ার্ডসদের ছাপিয়ে সেই মণিহার ওঠে সাকিবের গলায়। কিন্তু এর আগে মাঠের ক্রিকেটে যে কীর্তি (!) করে এসেছেন, তাতে বাংলাদেশের টেস্ট যোগ্যতাই মুখোমুখি হয়ে যায় প্রশ্নের। যে দলের সেরা ব্যাটসম্যান এমনিভাবে আউট হতে পারেন, সে দলের সামর্থ্য আর কতটা!
কিভাবে আউট হয়েছেন সাকিব? সে বর্ণনা দেওয়ার সাধ্যি বোধকরি নেভিল কার্ডাসেরও নেই। পরিসংখ্যানের খেলা ক্রিকেটকে যিনি কাঠখোট্টা অঙ্ক হিসেবে দেখতেন না, বিবেচনা করতেন সাহিত্যরূপে। যে সাহিত্যে থাকে উত্থান-পতন, জীবনের জয়-পরাজয়ের গল্প। কাল সাকিব যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটি পাতালপুরীতে চলে যাওয়া পরাজয়ের চূড়ান্ত রূপ। দল টেস্ট বাঁচাতে লড়ছে, অধিনায়কের সঙ্গে প্রায় শতরানের জুটি হয়ে গেছে, খানিক আগে পূর্ণ হয়েছে নিজের ফিফটি_অমন সময় কেন 'মরিবার হলো তাঁর সাধ'! ড্যারেন সামির নিরীহদর্শন এক শর্টপিচ বল ধীরগতিতে উঠেছিল কোমর উচ্চতায়। হাতে রাজ্যের সময়, সাকিব সেটিকে চাইলে সহজেই মোকাবিলা করতে পারেন। কিন্তু নিজের সামর্থ্যে প্রবল আস্থাবান হতে হতে উন্নাসিক বনে যাওয়া সাকিব কবজির মোচড়ে সেটি ঘোরাতে চাইলেন লেগ সাইডে। অহেতুক, অর্থহীন, অনর্থকভাবে। ব্যস, ব্যাটের কানায় লেগে শূন্যে উঠে যাওয়া ক্যাচ কি আর ছাড়ে ক্যারিবীয়রা! এই টেস্টের আরো নানা অর্জন ছাপিয়ে সাকিবের এই কুৎসিত শটটিই হয়ে থাকল মিরপুর টেস্টের হাইলাইটস।
শুধু সাকিব তো নন, একই দোষে দুষ্ট তামিম ইকবালও। টেস্ট জয়ের স্বপ্ন আবিরে চোখ রাঙিয়ে শেষ দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। যে অবিশ্বাস্য অর্জনের কাণ্ডারি হতে পারতেন এই বাঁহাতি ওপেনার। আগের দিন ৮২ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। কাল তৃতীয় ওভারেই দিয়ে বসলেন আত্মাহুতি। পঞ্চম দিনের টেস্ট উইকেটেও দেবেন্দ্র বিশুর লেগ স্পিনকে হয়তো পাত্তা দিতে অহংয়ে বেধেছিল তামিমের। উইকেটে ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল পাঠাতে চাইলেন হয়তো বঙ্গোপসাগরে। পরিণতিতে বেনো জলে ভেসে গেলেন নিজেই। ব্যাটের কানা ছোঁয়া বল স্লিপে তালুবন্দি করেন সামি। আভিজাত্যের টেস্ট ক্রিকেটে এই টোয়েন্টি-টোয়েন্টির কালিমায় কলঙ্কিত হলো মিরপুরের সবুজ মাঠ। সকালে এটিকে মনে হচ্ছিল নিদারুণ দৃষ্টিপীড়াদায়ক। বন্ধুকে বাঁচাতেই কি না, এরপর তাও ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব!
নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে দুটো শটই দেখেছেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর হতাশাটা সহজেই অনুমেয়। 'আজকের দিনের মূল টার্নিং পয়েন্ট সাকিবের আউট। খুব বাজে শট যে খেলেছে সেটি ও নিজেও জানে। তামিমের কথা বলব, এই ইনিংসের প্রথম ৫০ রান ও নিজের সহজাত খেলাই খেলেছে। পরের অংশটুকু দলের জন্য খেলেছে পুরোপুরি। চাইলে ও হয়তো আরেকটু আক্রমণাত্মক খেলতে পারত। ও চেষ্টা করেছে উইকেটে থাকার, জুটি গড়ে তোলার। যাতে বেশি উইকেট নিয়ে আমরা শেষ দিনে যেতে পারি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ও আজ সকালে আউট হয়ে গেছে'_বলেছেন অধিনায়ক। বেশি করে চোখে লাগা সাকিবের আউটের পক্ষে কোনো ঢাল দাঁড় করাননি মুশফিক। এমন শট খেলাকে 'বোকামি' বলতেও বাধেনি তাঁর, 'সাকিব খুবই ম্যাচিউরড একটা প্লেয়ার। ওর কাছ থেকে এমন একটা শট আসা আসলেই বোকামি। আমার মনে হয়, টি-এর পর যদি ও থাকত বা আমি থাকতাম, তাহলে ওর নরমাল শট খেলতে পারত। যেহেতু আমরা ব্যাকফুটে সে ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হয়ে খেলা উচিত ছিল। ও সেটি পারেনি, আশা করি ভবিষ্যতে ও এমন করবে না।'
এমন আশা তো আর বাংলাদেশ কম দিন ধরে করছে না। কিন্তু ম্যাচের পর পর সেই একই করুণ দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন। মোহাম্মদ আশরাফুল অল্প রানে হঠকারী শট খেলেন বলে চোখে লাগে। সাকিব সেটি পঞ্চাশ পেরোনোর পর করেন বলে চলে যাচ্ছেন জবাবদিহিতার ঊধর্ে্ব। নইলে এমন শট কেন খেলবেন তিনি। যে শট নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে ছাড়েন না ক্যারিবীয় অধিনায়ক ড্যারেন সামিও। পাশে বসা বিশুকে দেখিয়ে বলেন, 'ও বলছে আমার বলটাও ভালো ছিল'। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম মনে করতে পারেন না এমন শট টেস্টে কখনো দেখেছেন কি না, 'টেস্ট ক্রিকেটে এমন শট হয়তো দেখিনি। তবে ওয়ানডেতে অনেক ধরনের শটই দেখেছি। আরেক ব্যাপার যা বললাম, ব্যাটিং কিন্তু বোলিংয়ের মতো না যে, আপনি এক স্পেলে খারাপ করলেন তো দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্পেলে ফিরে ভালো করার একটা সুযোগ থাকে। ব্যাটিং এক বলের খেলা। একটা মিস জাজমেন্ট বা একটা বাজে শট খেললেই হয়তো আপনি আউট। আজকের দিনে সাকিবের অমন আউট ছিল টার্নিং পয়েন্ট। ও নিজেও সেটি জানে। আশা করি, ভবিষ্যতে এটি আর করবে না।' আর কোচ স্টুয়ার্ট ল ক্ষোভের প্রশমনে সামনে নিয়ে আসছেন সাকিবের সামর্থ্যকে, 'আমি মনে করতে পারছি না এমন শট টেস্টে কখনো দেখেছি কি না। তবে হয়তো হয়েছে। এই টেস্টের দুই ইনিংসে সাকিব ৭০ এবং ৫০ এর ঘরে রান করল। খালি চোখে দারুণ ব্যাপার। তবে আমি বিশ্বাস করি, সেঞ্চুরি করার যোগ্যতা ওর আছে। পরিসংখ্যান বলছে, ওর টেস্ট সেঞ্চুরি মাত্র একটি। এর চেয়ে অনেক ভালো ব্যাটসম্যান সাকিব।'
হয়তো-বা। কিন্তু মাঠে নেমে নিজে কিছু রান করাতেই দায়িত্ব শেষ ভাবলে কোচের কী করার আছে! বাংলাদেশ তো আর অস্ট্রেলিয়া নয়। ১৯৯৬ সালে দিলি্ল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে আউট হওয়ায় মাইকেল স্ল্যাটারকে চলে যেতে হয়েছিল নির্বাসনে। আবার জাতীয় দলে ফিরতে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রজন্মের অন্যতম সেরা এই ওপেনারকে। কারণ তাঁর বিকল্প ছিল। বাংলাদেশে সাকিব-তামিমের বিকল্প নেই। নেই বলেই অমন শট খেলে আউট হতে পারেন তাঁরা। জানেন যে, এর পরও তাঁদের দ্বারস্থ হতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে।
এই জুটি জাতীয় দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক ছিলেন সর্বশেষ সিরিজেও। নানা ঘটন-অঘটনে পূর্ণ ছিল তাঁদের রাজত্বকাল। সেটি বর্ণনায় তামিম-সাকিব নামের সংক্ষিপ্তরূপ নিয়ে এক কথায় প্রকাশের একটি রসিকতা ক্রিকেটাঙ্গনে চালু ছিল খুব। 'তাম-সা'। কাল সত্যি সত্যি টেস্ট ক্রিকেট ব্যাটিংকে তামাশা বানিয়ে দিলেন সাকিব-তামিম!
শুধু সাকিব তো নন, একই দোষে দুষ্ট তামিম ইকবালও। টেস্ট জয়ের স্বপ্ন আবিরে চোখ রাঙিয়ে শেষ দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। যে অবিশ্বাস্য অর্জনের কাণ্ডারি হতে পারতেন এই বাঁহাতি ওপেনার। আগের দিন ৮২ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। কাল তৃতীয় ওভারেই দিয়ে বসলেন আত্মাহুতি। পঞ্চম দিনের টেস্ট উইকেটেও দেবেন্দ্র বিশুর লেগ স্পিনকে হয়তো পাত্তা দিতে অহংয়ে বেধেছিল তামিমের। উইকেটে ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল পাঠাতে চাইলেন হয়তো বঙ্গোপসাগরে। পরিণতিতে বেনো জলে ভেসে গেলেন নিজেই। ব্যাটের কানা ছোঁয়া বল স্লিপে তালুবন্দি করেন সামি। আভিজাত্যের টেস্ট ক্রিকেটে এই টোয়েন্টি-টোয়েন্টির কালিমায় কলঙ্কিত হলো মিরপুরের সবুজ মাঠ। সকালে এটিকে মনে হচ্ছিল নিদারুণ দৃষ্টিপীড়াদায়ক। বন্ধুকে বাঁচাতেই কি না, এরপর তাও ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব!
নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে দুটো শটই দেখেছেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর হতাশাটা সহজেই অনুমেয়। 'আজকের দিনের মূল টার্নিং পয়েন্ট সাকিবের আউট। খুব বাজে শট যে খেলেছে সেটি ও নিজেও জানে। তামিমের কথা বলব, এই ইনিংসের প্রথম ৫০ রান ও নিজের সহজাত খেলাই খেলেছে। পরের অংশটুকু দলের জন্য খেলেছে পুরোপুরি। চাইলে ও হয়তো আরেকটু আক্রমণাত্মক খেলতে পারত। ও চেষ্টা করেছে উইকেটে থাকার, জুটি গড়ে তোলার। যাতে বেশি উইকেট নিয়ে আমরা শেষ দিনে যেতে পারি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ও আজ সকালে আউট হয়ে গেছে'_বলেছেন অধিনায়ক। বেশি করে চোখে লাগা সাকিবের আউটের পক্ষে কোনো ঢাল দাঁড় করাননি মুশফিক। এমন শট খেলাকে 'বোকামি' বলতেও বাধেনি তাঁর, 'সাকিব খুবই ম্যাচিউরড একটা প্লেয়ার। ওর কাছ থেকে এমন একটা শট আসা আসলেই বোকামি। আমার মনে হয়, টি-এর পর যদি ও থাকত বা আমি থাকতাম, তাহলে ওর নরমাল শট খেলতে পারত। যেহেতু আমরা ব্যাকফুটে সে ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হয়ে খেলা উচিত ছিল। ও সেটি পারেনি, আশা করি ভবিষ্যতে ও এমন করবে না।'
এমন আশা তো আর বাংলাদেশ কম দিন ধরে করছে না। কিন্তু ম্যাচের পর পর সেই একই করুণ দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন। মোহাম্মদ আশরাফুল অল্প রানে হঠকারী শট খেলেন বলে চোখে লাগে। সাকিব সেটি পঞ্চাশ পেরোনোর পর করেন বলে চলে যাচ্ছেন জবাবদিহিতার ঊধর্ে্ব। নইলে এমন শট কেন খেলবেন তিনি। যে শট নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে ছাড়েন না ক্যারিবীয় অধিনায়ক ড্যারেন সামিও। পাশে বসা বিশুকে দেখিয়ে বলেন, 'ও বলছে আমার বলটাও ভালো ছিল'। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম মনে করতে পারেন না এমন শট টেস্টে কখনো দেখেছেন কি না, 'টেস্ট ক্রিকেটে এমন শট হয়তো দেখিনি। তবে ওয়ানডেতে অনেক ধরনের শটই দেখেছি। আরেক ব্যাপার যা বললাম, ব্যাটিং কিন্তু বোলিংয়ের মতো না যে, আপনি এক স্পেলে খারাপ করলেন তো দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্পেলে ফিরে ভালো করার একটা সুযোগ থাকে। ব্যাটিং এক বলের খেলা। একটা মিস জাজমেন্ট বা একটা বাজে শট খেললেই হয়তো আপনি আউট। আজকের দিনে সাকিবের অমন আউট ছিল টার্নিং পয়েন্ট। ও নিজেও সেটি জানে। আশা করি, ভবিষ্যতে এটি আর করবে না।' আর কোচ স্টুয়ার্ট ল ক্ষোভের প্রশমনে সামনে নিয়ে আসছেন সাকিবের সামর্থ্যকে, 'আমি মনে করতে পারছি না এমন শট টেস্টে কখনো দেখেছি কি না। তবে হয়তো হয়েছে। এই টেস্টের দুই ইনিংসে সাকিব ৭০ এবং ৫০ এর ঘরে রান করল। খালি চোখে দারুণ ব্যাপার। তবে আমি বিশ্বাস করি, সেঞ্চুরি করার যোগ্যতা ওর আছে। পরিসংখ্যান বলছে, ওর টেস্ট সেঞ্চুরি মাত্র একটি। এর চেয়ে অনেক ভালো ব্যাটসম্যান সাকিব।'
হয়তো-বা। কিন্তু মাঠে নেমে নিজে কিছু রান করাতেই দায়িত্ব শেষ ভাবলে কোচের কী করার আছে! বাংলাদেশ তো আর অস্ট্রেলিয়া নয়। ১৯৯৬ সালে দিলি্ল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে আউট হওয়ায় মাইকেল স্ল্যাটারকে চলে যেতে হয়েছিল নির্বাসনে। আবার জাতীয় দলে ফিরতে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রজন্মের অন্যতম সেরা এই ওপেনারকে। কারণ তাঁর বিকল্প ছিল। বাংলাদেশে সাকিব-তামিমের বিকল্প নেই। নেই বলেই অমন শট খেলে আউট হতে পারেন তাঁরা। জানেন যে, এর পরও তাঁদের দ্বারস্থ হতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে।
এই জুটি জাতীয় দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক ছিলেন সর্বশেষ সিরিজেও। নানা ঘটন-অঘটনে পূর্ণ ছিল তাঁদের রাজত্বকাল। সেটি বর্ণনায় তামিম-সাকিব নামের সংক্ষিপ্তরূপ নিয়ে এক কথায় প্রকাশের একটি রসিকতা ক্রিকেটাঙ্গনে চালু ছিল খুব। 'তাম-সা'। কাল সত্যি সত্যি টেস্ট ক্রিকেট ব্যাটিংকে তামাশা বানিয়ে দিলেন সাকিব-তামিম!
No comments