জয় হলো নির্বাচন কমিশনের by আদিত্য আরাফাত
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছিলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্ভব হবে না।’ অবশেষে ব্যালট বিপ্লবে চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীই মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। যেহেতু দলটির সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছে তাই এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কোনো কথা বলেনি। এরপর এলো পৌরসভা নির্বাচন।
পৌর নির্বাচনের আগে বিএনপি আবার বলেছে, ‘নির্বাচন কমিশন সরকারের ইশারায় চলছে, মানুষের ভোট ছিনতাই হবে এ নির্বাচনে।’ অতপর সুষ্ঠুভাবে শেষ হলো পৌর নির্বাচন। অধিকাংশ জায়গায় বিএনপি সমর্থিত মেয়র কাউন্সিলর নির্বাচত হলো। এরপর বিএনপি নেতারা চুপচাপ! চুপচাপ না থেকে যে উপায় নেই। এরপর এলো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। ইউপি নির্বাচনেও বিএনপি সেই একই সূরে কথা বলেছে। এ নির্বাচনেও অনেক জায়গায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করতে পেরেছে তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে যদি প্রশ্ন থাকতো তাহলে এসব নির্বাচনে বিরোধী দলীয় প্রার্থী জয়ী হতো না। স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার পরিচয় দিলেও বিরোধী দল স্রেফ বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে আসছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলন, জনসভা ও টিভি চ্যানেলে গভীর রাতের টক শোতে অভিযোগ করেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে না।’ তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগও দাবি করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নাটকীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা আগে রাত গভীরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেন। ভোটের কয়েক ঘন্টা আগে নির্বাচন বর্জনের সুযোগ না থাকলেও বিএনপি বর্জনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না করা নিয়ে। সেনা মোতায়েন ছাড়াই অবশেষে সুষ্ঠু হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। প্রচলিত রাজনীতির প্রতি ঘৃণা জানিয়ে ব্যালেট বিপ্লবে জনগণ নির্বাচন করেছে তাদের প্রার্থীকে। ফাইনাল খেলায় নামার আগেই হার মানলেন বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার আর ফাইনাল খেলায় নেমে হেরেছেন আওয়ামী লীগের শামীম ওসমান।
এ নির্বাচন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো বাংলাদেশের জন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিকগুলোর অনেক কিছু শিক্ষা রয়েছে এ নির্বাচনে। জনগণ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। শুধু দল দেখে এখন মানুষ ভোট দেয় না। তুলনামুলক সৎ ও যোগ্য যাকে মনে করছে ব্যালেট বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ তাঁকেই নির্বাচন করছে। জনগনের এ ভোটাধিকার স্বচ্ছতার মাধ্যমে তুলে ধরছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
অতীতে দেখা গেছে জনগণ ভোট দিয়েছে একজনকে, বিজয়ী হয়েছে আরেকজন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন এখন একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। যে কমিশনের শুধু কাগজে-কলমে স্বাধীনতা নয়, বাস্তবেই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। যেখানে থাকবে না শাসকদলের হস্তক্ষেপ। নির্বাচন কমিশন এখন সবুজ সংকেত দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে।
আমাদের সবার জানা আছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত ধরেই এ দেশে ওয়ান ইলেভেন আসে। প্রায় ২ বছর ক্ষমতা দখল করে থাকে অসাংবিধানিক সরকার। পৃথিবীর অন্যকোনো দেশে এ সরকার ব্যবস্থা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না যাব না` বলা বিএনপিকে এখন পরামর্শ দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়। কীভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় তা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। হরতাল, রোডমার্চ দিয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ না এনে বিরোধী দলের উচিত আলোচনায় বসা। আর আওয়ামী লীগকে ভুলে গেলে চলবে না যে, যে প্রেক্ষাপটেই হোক একদিন তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে আন্দোলন করেছেন। শুধু বক্তৃতা সেমিনারে বললে হবে না যে-‘আলোচনার দরজা বিরোধী দলের জন্য খোলা’। সরকারি দল যদি আন্তরিকভাবে বিরোধী দলের সাথে আলোচনায় বসতে রাজী হতো তাহলে মন্ত্রী-এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রকাশ পেতো না। কথা বার্তায় আরেকটু সংযমী হয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত বিরোধী দলের সাথে এ ইস্যুতে আলোচনায় বসার পরিবেশ সৃষ্টি করা। বিরোধী দলকে বুঝতে হবে আদালতের রায়ে যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে তাই তত্ত্ববধায়ক পদ্ধতি রাখার আর কোনো সুযোগ নেই। জনগণ চায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ। বিরোধী দলকে এটাও স্বীকার করতে হবে যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের সব পরীক্ষায়; অতএব...
লেখক: সাংবাদিক
ই-মেইল aditya.arafat1@gmail.com
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলন, জনসভা ও টিভি চ্যানেলে গভীর রাতের টক শোতে অভিযোগ করেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে না।’ তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগও দাবি করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নাটকীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা আগে রাত গভীরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেন। ভোটের কয়েক ঘন্টা আগে নির্বাচন বর্জনের সুযোগ না থাকলেও বিএনপি বর্জনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না করা নিয়ে। সেনা মোতায়েন ছাড়াই অবশেষে সুষ্ঠু হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। প্রচলিত রাজনীতির প্রতি ঘৃণা জানিয়ে ব্যালেট বিপ্লবে জনগণ নির্বাচন করেছে তাদের প্রার্থীকে। ফাইনাল খেলায় নামার আগেই হার মানলেন বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার আর ফাইনাল খেলায় নেমে হেরেছেন আওয়ামী লীগের শামীম ওসমান।
এ নির্বাচন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো বাংলাদেশের জন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিকগুলোর অনেক কিছু শিক্ষা রয়েছে এ নির্বাচনে। জনগণ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। শুধু দল দেখে এখন মানুষ ভোট দেয় না। তুলনামুলক সৎ ও যোগ্য যাকে মনে করছে ব্যালেট বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ তাঁকেই নির্বাচন করছে। জনগনের এ ভোটাধিকার স্বচ্ছতার মাধ্যমে তুলে ধরছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
অতীতে দেখা গেছে জনগণ ভোট দিয়েছে একজনকে, বিজয়ী হয়েছে আরেকজন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন এখন একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। যে কমিশনের শুধু কাগজে-কলমে স্বাধীনতা নয়, বাস্তবেই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। যেখানে থাকবে না শাসকদলের হস্তক্ষেপ। নির্বাচন কমিশন এখন সবুজ সংকেত দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে।
আমাদের সবার জানা আছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত ধরেই এ দেশে ওয়ান ইলেভেন আসে। প্রায় ২ বছর ক্ষমতা দখল করে থাকে অসাংবিধানিক সরকার। পৃথিবীর অন্যকোনো দেশে এ সরকার ব্যবস্থা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না যাব না` বলা বিএনপিকে এখন পরামর্শ দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়। কীভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় তা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। হরতাল, রোডমার্চ দিয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ না এনে বিরোধী দলের উচিত আলোচনায় বসা। আর আওয়ামী লীগকে ভুলে গেলে চলবে না যে, যে প্রেক্ষাপটেই হোক একদিন তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে আন্দোলন করেছেন। শুধু বক্তৃতা সেমিনারে বললে হবে না যে-‘আলোচনার দরজা বিরোধী দলের জন্য খোলা’। সরকারি দল যদি আন্তরিকভাবে বিরোধী দলের সাথে আলোচনায় বসতে রাজী হতো তাহলে মন্ত্রী-এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রকাশ পেতো না। কথা বার্তায় আরেকটু সংযমী হয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত বিরোধী দলের সাথে এ ইস্যুতে আলোচনায় বসার পরিবেশ সৃষ্টি করা। বিরোধী দলকে বুঝতে হবে আদালতের রায়ে যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে তাই তত্ত্ববধায়ক পদ্ধতি রাখার আর কোনো সুযোগ নেই। জনগণ চায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ। বিরোধী দলকে এটাও স্বীকার করতে হবে যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের সব পরীক্ষায়; অতএব...
লেখক: সাংবাদিক
ই-মেইল aditya.arafat1@gmail.com
No comments