গলাকাটা পাসপোর্ট-শ্রমবাজারের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি

জাল ভিসা ও গলাকাটা পাসপোর্টে বিদেশ যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রোহিঙ্গা ও দালালসহ গ্রেফতার ৩৮ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। পরদিন সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর সঙ্গে আদম পাচারচক্র জড়িত।


বিমানবন্দরের একশ্রেণীর কর্মকর্তা পাচারচক্রকে সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিমানবন্দর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আটক রোহিঙ্গারা দুই মাস আগে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই একটি খবর অনেক খবরের সূত্র হতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা এভাবে বলা যায় : গলাকাটা পাসপোর্ট ও জাল ভিসায় দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা চলে। এর একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এভাবে যাওয়ার ঘটনা কতবার ঘটেছে? দ্বিতীয়ত, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু হয়েছে এবং এ অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় ছবি বদল করা কার্যত অসম্ভব বলেই ধরে নেওয়া হয়। তাহলে কি পুরনো যেসব পাসপোর্ট চালু রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে এ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে? জুলাই মাসের শেষ দিকে জানা গিয়েছিল যে, বিপুলসংখ্যক মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে হারিয়ে গেছে। এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কারও কারও উদ্বেগ যে, এসব পাসপোর্ট এমন কেউ কেউ ব্যবহার করতে পারে, যাদের পাসপোর্ট পাওয়ার কথা নয়। যেমন_ রোহিঙ্গা শরণার্থী, দাগি অপরাধী ও সন্ত্রাসী। বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে আটক রোহিঙ্গারা মাত্র দুই মাস আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এত দ্রুত তাদের হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট কী করে পেঁৗছাল? এর পেছনে যে শক্তিশালী চক্র জড়িত রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। কথায় বলে, বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কি এ চক্রের কাছে অসহায়? শর্ষের মধ্যে ভূত স্থায়ী বাসা বেঁধে আছে কি-না সেটাও দেখা দরকার। জাল ভিসা ও গলাকাটা পাসপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরে যেতে হলে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মীদের সহায়তা অপরিহার্য। তাদের শনাক্ত করা কি অসম্ভব? বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও মালয়েশিয়ায় চাকরি করতে গিয়ে কিছু লোক সেখানে সমাজবিরোধী ও অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের শ্রমবাজারে পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ যারা করছে, তারা কে কীভাবে জাল ভিসা কিংবা গলাকাটা পাসপোর্টে সেখানে গেছে তার কারণ খতিয়ে দেখে না। তাদের কাছে একটি বিষয়ই বিবেচ্য_ অপরাধকর্মে যুক্তদের হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। সঙ্গতভাবেই এর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব বর্তায় বাংলাদেশের ওপর। এ বিষয়ে সতর্কতা সংশ্লিষ্ট মহলে নেই, সেটা বলা অনুচিত হবে। কিন্তু সম্ভাব্য বিপদ যথাযথভাবে উপলব্ধিতে রয়েছে কি-না, সে সংশয় থেকে যায়। আমাদের নাগরিকদের যারা কাজ দেয়, তারা কোনোভাবেই চাইবে না যে, এভাবে অপরাধীরা তাদের দেশে প্রবেশ করুক। বিশ্বের শ্রমবাজার এখন তীব্র প্রতিযোগিতামূলক। আমরা বাজার হারালে তা পূরণের জন্য অনেক দেশ তাদের কর্মী তালিকা নিয়ে প্রস্তুত। এ অবস্থায় জাল ভিসা ও গলাকাটা পাসপোর্ট চক্রকে প্রশ্রয় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। আমরা আর কতকাল সেই আত্মঘাতী কাজ করব।
 

No comments

Powered by Blogger.